আমি খুব ভালো কবিতা বানাতে পারি। খুব সহজ। বাংলা গদ্য বই এর একটা পাতা র্যান্ডমলি ছিড়ে নিয়ে তা মাঝ বরাবর ফেড়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ডান হাতে একটা কবিতা বাম হাতে একটা কবিতা। ব্যাস একটার টাইটেল দিয়ে দিন 'মাহিনের গরুগুলি', আর একটার টাইটেল হবে 'মাহিনের মুরগীগুলি'। আমরা সবাই জানি গদ্য লেখা হয় চওড়া ডিমাই সাইজের পেজে আর কবিতা লেখা হয় চিপা ফর্দের মত।
এতদিন জানতাম দেশে নাকি কাক এবং কবির সংখ্যা প্রায় সমান কিন্তু আসলে এদের সংখ্যা এখন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের চেয়েও বেশি। ছন্দের কবিদের চেয়েও ভাবের কবি, উদাস কবি, আউলা কবি, বাউলা কবি, আবেগী কবি, ইয়াবা কবি, গাঞ্জা কবি, আর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় প্রেমিক কবি, বিশ্বপ্রেমিক কবি।
এই সময়ের বেশির ভাগ কবিদের সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইনাদের প্রায়ই সব সময় ফরটি ফাইভ ডিগ্রী এংগেলে ঘাড় বাঁকা করে উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ইনারা ফটো তোলার পোজ দিলেও আকাশের দিকে তাকিয়ে পোজ দেয়। একবার যদি উদাস হয়ে ইনাদের ঘাড় বাকা হয়ে আকাশের দিকে উঠেছে তো খবরই আছে। তখন আকাশ থেকে অনবরত ঠাডার মত করে এদের মাথায় কবিতা নিক্ষিপ্ত হয়। তখন কারুর বাপের সাধ্য নেই যে তার ঘাড় সোজা করে। একমাত্র তার ধ্যান ভেংগে ঘাড় জিরো ডিগ্রীতে আনতে পারে কোনো সুললিত নারী কন্ঠের আহবান যে কিনা কবির আউলা ঝাউলা গাঞ্জামি দেখে প্রেমে পড়ে গেছে। বাই দা ওয়ে এদের হৃদয় কিন্তু বিশাল। এক নারী দিয়ে এদের কবিতা ফুরোয় না। তামাম দুনিয়ার তাবত নারীকুলের জন্য ইনাদের হৃদয়ে জায়গা থাকে। একজনের চুল, চোখ, নাক, কান, গলা সহ ফুল বডি নিয়া কবিতা লেখা শেষ হয়ে গেলে আবার ঘাড় উদাস হয়ে যথারীতি ফরটি ফাইভ ডিগ্রী এংেলে উপরে উঠে যায় যতক্ষন না নতুন কোনো নারীকন্ঠ তার ধ্যান ভাংগায়। এভাবে চলতেই থাকে
এই সব কাউয়া কবিদের কেউ কেউ আছেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে পাঁচ মিনিট পর পর হেচকি উঠার মত করে কবিতা লেখেন। কারোর ক্ষমতা নেই এই সব কবিতার সুর বা মর্ম উদ্ধার করার। সেখানে থাকে শুধুই গাঞ্জা খাওয়া আবেগ। আসলে হইছে কি এরা নতুন প্রেমে পড়ছে। ভালো মন্দ খেলে যেমন ঘন্টা দুয়েক পরে পেটে মোচড় দিয়ে ওঠে এবং টয়লেটে গিয়ে বর্জ্য নিষ্কাশন করে আসতে হয় তেমনই প্রেমিক যুগল যখন বিকেল বেলায় পার্কের চিপায় বসে প্রেমের সুধা পান করেন, প্রেমের কমলা আপেল(?!) খান তারপর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এদের পেটও মোচড় দিয়ে ওঠে
এবং তা প্রেমের পাতলা হাগু হয়ে কিছুক্ষন পর পর ফেসবুক স্ট্যাটাসে কবিতা হয়ে নির্গত হয়।
এখনকার মডার্ন কবিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের কবিতা হতে হবে দুর্বোধ্য দাত ভাংগা। কবিতার ছন্দ বাইর করতে গিয়ে পাঠকের কষা হাগুও বের হয়ে যায় মাগার ছন্দ মেলে না। ছন্দ বাইর করতে পারলে পড় না পারলে মুড়ি খাউ গিয়া। আমার লেখা পড়ে পন্ডিতেরা মাথার টিকিখানা দুলিয়ে বলবেন আছে আছে আধুনিক কবিতায় ছন্দ আছে কিন্তু তা খুজে নিতে জানতে হয়।
মানে অনলি কবি সমাজ ইজ রিয়েল বাকি সব মুর্খ।
আমি বলি গানের লিরিক্স লেখা হয়। তাতে সুরকার সুর দেওয়ার আগে that doesn't make any sence.
কবিতা হতে হবে এমন যার ছন্দ আম পাঠকের হৃদয়ে আছে। দয়া করে কবিতার লিরিক্স লিখে এর বোঝা পাঠকের মাথায় চাপিয়ে দেবেন না।
আমি বলি কি ফরটি ফাইভ ডিগ্রি এংগেলে আকাশের দিকে না তাকিয়ে বরং ঘাড় নিচু করে হাটুর সমান আন্ডা বাচ্চা শিশুদের দেকে একটু তাকান। তাহলেই কবিতায় সঠিক ছন্দ আসবে।
আমি এখন আপনাদের ঠিক এই রকম কয়েক লাইন কবিতা শোনাব.......
"ভয় পেও না ভয় পেও না, তোমায় আমি মারব না
সত্যি বলি কুস্তি করে তোমার সাথে পারব না
মনটা আমার বড্ড নরম হাড়ে আমার রাগটি নেই
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই
মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না
জানো না মোর মাথায় ব্যারাম?কাউকে আমি গুতোই না
এসো এসো গর্তে এসো বাস করে যাও চারটি দিন
আদর করে শিকেয় তুলে রখব তোমায় রাত্রি দিন
হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাকবে না
মুগুর আমার হাল্কা এমন মারলে তোমায় লাগবে না
অভয় দিচ্ছি শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?
বসলে তোমার মুন্ডু চেপে বুঝবে তখন কান্ড টা
আমি আছি গিন্নি আছি আছেন আমার নয় ছেলে
সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয় পেলে"
এই রকম কবিতা যদি ফেসবুক ওয়ালে কেউ লেখে তা দেখে আধুনিক ফেসবুকিও কবিগন হয়ত কমেন্ট করবেন 'বালের কবিতা'
কবিতাটি আমার প্রিয় কবি সুকুমার রায়ের লেখা যিনি এরকম অসংখ্য কবিতা দিয়ে আমাদের শৈশবকে করে তুলেছিলেন স্বপ্নময়। আবোল তাবোলের মত নন্সেন্স রাইম এবং সেই সাথে প্রাসংগিক ছবি সমৃদ্ধ কবিতাগুলো এক কথায় ছিল অসাধারন।
আজ ৩০ অক্টোবর কবি সুকুমার রায়ের জন্মদিন।
happy birthday
যুগ যুগ ধরে কবি সুকুমার এবং তার কবিতা অমর থাকুক শিশু থেকে শুরু করে যুবক বৃদ্ধ সবার হৃদয়ে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:০৭