কর্পোরেট লাইফ ফ্যাক্টস:
১.) কেউ যদি মনে করে শার্ট ইন করে স্যুট টাই ব্লেজার ইত্যাদি পরে তাকে বেশ স্মার্ট লাগছে তাহলে তার জন্য দুই মিনিট নিরবতা
স্যুট টাই পরে কাউকে দেখলে বড় বড় রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের কথা মনে পড়ে
বৃটিশ আমলে স্যুট টাই এর একটা সম্মান ছিল। বড় বড় উকিলরা স্যুট পরতেন। আগে পোশাক দেখে সামাজিক স্ট্যাটাস বোঝা যেতো। এখন কাউকে শার্ট ইন করা দেখলেই আমার হাসি পায়।
আর ব্লেজার? অতিরিক্ত সেলস টার্গেটের ভারে ন্যুজ, জর্জরিত বেচারা মার্কেটিং অফিসার আর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা নীল শার্টের উপর একটা ব্লেজার চাপিয়ে কর্পোরেট লুক আনার ব্যর্থ চেষ্টায় এই সমস্ত জমকালো পোশাক আশাকের পুংগিটাই মেরে দিয়েছে।
এর চাইতে সেন্ডো গেঞ্জি আর লুংগি পরে ঘুরে বেড়ানো অনেক ভালো।
অনেককেই দেখি শীতকালে জুতা মৌজার সাথে লুংগি পরেছে। মাফলার পেচিয়েছে, সেই সাথে হাফ সোয়েটারের উপর একটা ব্লেজার চাপিয়েছে। তখন অবশ্য ভালোই লাগে দেখতে।
২.) আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে বিরক্তিকর আর অপমানজনক সম্বোধন হচ্ছে অমুক সাহেব, তমুক সাহেব যা অফিস আদালতের কর্পোরেট কোড অফ কন্ডাক্ট। অফিসের সিনিওর বস আমাকে নাম ধরে তুমি তুমি করে ডাকলে খুব ভালো লাগে। কিন্তু আই জাস্ট ব্লাডি হেইট ইফ সামওয়ান কলস নাঈম সাহেব।
৪.) বেকার সমস্যার দেশে চাকরি এক মহার্ঘ্য বস্তু। অনেকেই একটা চাকুরি পেলে তার ধ্যান জ্ঞ্যান সব চাকরি নিয়েই হয়। বাড়ি ফিরে এলেও অফিস মাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফেরে। অনেক চরম পর্যায়ের বোরিং লোক দেখেছি যারা অফিসিয়াল বিষয় ছাড়া আর কোনো বিষয়ে আলাপের টপিক খুজে পায়না তা হোক অফিস আওয়ারে বা তার বাহিরে। এর অর্থ এই না যে তারা চাকুরিতে নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে ডেডিকেটেড। বরং তারা কাজের চেয়ে কোম্পানির আপামর কলিগ সাধারন এবং বসদের গুহ্যদ্বারের ব্যাপারেই ইন্টারেস্টেড। যে কলিগ আমার সাথে পারফরমেন্সের ইদুর বিড়াল দৌড়ে নেমেছে হেতে খালি রাস্তায় দেখা হোক বা যেখানেই হোক প্রোডাকশন কত দিলেন ফেক্টরি কেমন চালাইলেন আজ এইসব জিগায়। অফিস আদালতের বাইরে চিন্তা ভাবনা আর দর্শনের অনেক বিষয় তো আছে। ইনারা আকাশের চাঁদ তারা দেখেন না, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ তাদের আকর্ষন করে না, বাগানে শিউলি ফুল ফুটেছে তারা লক্ষ্য করেন না, শিশির ভেজা ঘাসের বুকে লজ্জাবতী ফুল ফুটেছে সেদিকে খেয়াল নেই, পাখির কিচির মিচির শোনেন না, সাহিত্যের রস আস্বাদন করার সময় ইনাদের নেই। গেবন অফিসময় ইনাদের।
অফিসের ক্যান্টিনে, লাঞ্চ ব্রেকে বাসেত, বোরহান লতিফ সাহেবদের খালি বসদের ছিদ্রানুসন্ধান করতেই ব্যাস্ত দেখা যায়। বাড়িতে এক প্লেট ভাত খেতে লাগে পনেরো মিনিট আর অফিসে লাঞ্চ করতে লাগে পুরো এক ঘন্টা। কারন সেখানে ভাত তরকারির সাথে সালাদ হিসেবে যোগ হয় জিএম স্যারের সমালোচনা আর কোম্পানির নানান সমস্যার আলোচনা। কথা প্রসংগে বলে রাখি। আপনার ছেলের নাম ভুলেও কখনো লতিফ রাখবেন না, কারন "লেইট লতিফ" একটা অফিসিয়াল প্রবাদ হয়ে গেছে।
৫.) অফিস আওয়ারের বাহিরে যখন রাস্তায় কোনো কলিগের সাথে আমার দেখা হয় আমার দিনটাই খারাপ যায়। তাই আমি চেষ্টা করি যেন লতিফ বা বাসেত সাহেবদের সাথে নিজের ব্যাক্তিগত সময়ে দেখা না হয়। কোনো শুভ কাজে বের হলে যদি রাস্তায় অফিসের কাউকে দেখে ফেলি তাহলে আবার দৌড়ে ঘরে ফিরে যাই এবং আবার প্রথম থেকে শুরু করি, দোয়া দরুদ পড়ে আবার বের হই।
ভাবতেছি আমার বিয়েতে আমার কলিগ বা বস কাউকেই দাওয়াত দিব না। ভাবতেই বিভীষিকা লাগে। আমি শেরোয়ানী পাগড়ি পরে স্টেজে বসে আছি আর সামনে যেদিকেই তাকাই সেদিকে আমার ছাগু বস আর অফিসের লতিফ, বাসেত সাহেবেরা গিজগিজ করছে। শালার বিয়া করতেছি নাকি ডিউটি করতেছি বোঝাই যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩১