একটা প্রতিষ্ঠিত সাদামাটা এভারেজ ছেলের সাথে এক অচিনপুরের অচেনা সুন্দরী মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। পারিবারিকভাবে। লতাপাতার কোনও আত্মীয়ের মাধ্যমে খোজখবর পাওয়া, খালা, মামা সহ রেস্টুরেন্টে ফরমাল সাক্ষাত, তারপর কথাবার্তা পাকাপাকি হয়ে গেল। ফুল নিয়ে গিয়ে প্রেম নিবেদন করতে হলোনা, প্রেমের কবিতা লিখতে হলোনা, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হলনা, কিউপিড এসে পাছায় তীর মেরে গেলো না। কিন্তু মেয়েটা বিয়েতে রাজি হয়ে গেল।
আচ্ছা, এই ছেলেটা যদি এই মেয়েটাকেই ক্লাস ফাইভে পড়া অবস্থায় ফুল দিয়ে প্রপোজ করত তাহলে কি হত? কিছুই হতো না, মেয়েটা ভয় পেয়ে দৌড়ে গিয়ে মাকে সব বলে দিত। পরদিন স্কুলের এসেম্বলিতে হেডমাস্টার মশাই সাবার সামনে ছেলেটিকে জোড়া বেত দিয়ে বেদম পেটাতেন। মেয়েটার যে তখন পুতুলের বিয়ে দেয়ার বয়স।
আর ছেলেটা যদি ক্লাস এইটে পড়া অবস্থায় চুলে স্টাইল মেরে মেয়েটির পেছনে সাইকেল নিয়ে ঘুরত আর শিস বাজাত? কিছুই হতনা, হয়ত গালে জুতার চিহ্ন নিয়ে ফিরতে হতো। মেয়েটা যে তখন সকালে আমীর খান, বিকালে শাহরুখ খান এবং রাতে অভিষেক বচ্চনের উপর ক্রাশ খেয়ে অভ্যস্ত।
ছেলেটা যদি ক্লাস টেনে পড়া অবস্থায় মেয়েটাকে চিঠি দিত তাহলে কি হত? মেয়েটা তার বান্ধবিদের সাথে নিয়ে মজা করে চিঠি পড়ত আর হাসাহাসি করত। হয়ত এটা তার লাইফের ৯৯ তম চিঠি। সে হয়ত চিঠিটা ফেলে দিত না, আমরা যেমন মেট্রিকের সার্টিফিকেট যত্ন করে রাখি তেমনি মেয়েটা শখের ডাকটিকিট জমানোর মত করে তার গোপন সিন্দুকে চিঠিটা তুলে রাখত আর আয়নার সামনে গিয়ে সগর্বে বলত, আই এম বিউটিফুল। ছেলেদের ছেবলামো দেখতে দেখতেই তার তখন পেট ভরে গেছে।
ছেলেটা যদি কলেজে পড়া অবস্থায় মেয়েটাকে প্রপোজ করত তাহলে কি বলত মেয়েটা? বোলত, আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন কখনও।কোনো পসিবিলিটী নাই, কারন মেয়েটা তখন শির্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দূরবীণ পড়ে ধ্রুবর প্রমে হাবুডূবূ খাচ্ছে। ধ্রুবর কথা চিন্তা করে তখন সে ঘুমাতে পারে না, বিছানায় এপাশ অপাশ করে। দুনিয়ার কোনও পুরুষ তখন উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র ধ্রুবর সমকক্ষ নয়।
ছেলেটা যদি ভার্সিটীর ফার্স্ট ইয়ারে পড়া অবস্থায় মেয়েটাকে প্রপোজ করত তখন কি হত? Too late, কারন মেয়েটা তখন হুমায়ুন আহমেদের হিমুর প্রেমে পড়ে আছে এবং ক্যাম্পাসে হিমু টাইপ একটা ছেলে পেয়েও গেছে, তাকেই সে এখন বাবু, জান্টূস, সোনাপাখি বলে ডাকে।
ছেলেটা যদি ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে থাকা অবস্থায় মেয়েটাকে প্রেম নিবেদন করত তাহলেও কাজ হত না কারন সে তার আগের হিমুর সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে এবং সে তার পড়া বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, তার ব্যাগ বহন করে পিছন পিছন ক্যাবলার মত চলার জন্য এবং এসাইনমেন্ট লিখে দেয়ার জন্য এক বলদ ব্রিলিয়ান্ট স্টূডেন্ট পেয়ে গেছে।
শেষ পর্যন্ত জিবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে, নানা অভিজ্ঞতার বাক পেরিয়ে ক্লান্ত, মনের দিক দিয়ে আপাত বৃদ্ধা এক যুবতি নারী তোমার মত আবালের কাছে এসেই ধরা দিল। সে এইবার তোমার জীবনের অপুর্ন সাধ আহ্লাদ সব জলাঞ্জলি দিয়ে ১ মাসের মধ্যেই সন্তান চেয়ে বসবে এবং তোমাকে কানে ধরে সংসারে মন বসাবে।
You are selected not because you are the best, but actually you are highlighted at correct nick of time. কোনো কিছু নিজের ফেভারে আনতে হলে তার জন্য একটা সঠিক সময়, সঠিক সিচুয়েশন, স্থান কাল পাত্রের একই সাথে click করা প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২