somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা দিবস

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছর বর্ষাকালের শুরুর কোনো এক সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। সেখানে জলদি পৌছানোর তাড়া ছিলো তাই সড়কপথে না গিয়ে আকাশপথ বেছে নিয়েছিলাম। তবে লাভ হয়নি কারন বৃষ্টি এবং দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার কারনে দুপুর আড়াইটার ফ্লাইট প্রায় চার ঘন্টা লেট হয়েছিল। কখনো গূড়ি গুড়ি বৃষ্টি আবার কখনো মূষলধারে বৃষ্টির কারনে ডিশিসান নেওয়া যাচ্ছিল না প্লেন ছাড়বে কি ছাড়বে না। বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর বোর্ডিং সম্পন্ন হল কিন্তু আবার শুরু হল দমকা বাতাস, বিদ্যুত চমকানো আর ঝির ঝির বৃষ্টি। এভাবে যাত্রিদের নিয়ে বিমানটি বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আরো দেড় ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। যাই হোক আমার এই পোষ্টের মুল প্রসংগ হচ্ছে আমার ডান পাশে বসা সহযাত্রি, যে মোটামুটি ২১/২২ বছরের তরুন মাথায় বটগাছ স্টাইলের হেয়ার কাট, স্টাইলিশ দাড়ি, নিম্নগোফ, শরিরের বিভিন্ন যায়গায় ট্যাটু, হাফপ্যান্ট পরা সব মিলিয়ে পুরাই ইয়ো ইয়ো পপ্স টাইপের গেটাপ। দেখলেই বোঝা যায় বড়লোক মাম্মি ড্যাডির পোলা। তার মোবাইল ফোনের আলাপচারিতায় এও বূঝলাম যে সে প্রাইভেট ভার্সিটির স্টূডেন্ট। তো সেই পোলা বিমানে বসে দেড় ঘন্টায় প্রায় পনের বার তার মাকে ফোন করে বিমানের টাইমটেবল আর আবহাওয়ার আপডেট দিচ্ছিল। সে আবহাওয়া সম্পর্কে তার মাকে বিভিন্ন আশংকাজনক খবর এবং সেকারনে বিমান উড্ডয়নের বিপদ সম্মপর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করছিল এবং শেষে তার কোনো ক্ষতি হবেনা, সহি সালামতে পৌছে যাবে বলে আশ্বস্ত করছিল।
মম আমি আসছি, ক্লাস নেই তাই ভাল্লাগছে না। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট করেছি, স্কাইলাইন স্লিপারের চেয়ে ফ্লাইট বেটার মনে হল। মাত্র ৩৫ মিনিটে পৌছে যাব।
এই হয়ত কোথাও বাজ পড়ার শব্দ হল, সে সাথে সাথে ফোন করে মাকে জানিয়ে ইট ইজ লাইটেনিং এন্ড থান্ডারিং এভরিহয়ার মম হুইচ ইজ ডেঞ্জারাস ফর ফ্লাইং সো উই হ্যাভ টু অয়েট এ কাপোল ওফ টাইম। কিন্তু তুমি চিন্তা কোরোনা মম একটূ দেরি হলেও পৌছে যাব।
দমকা বাতাস বইতে শুরু করল যখন তখন আবার ফোন করে মাকে বল্ল লুকস লাইক আওয়ার ফ্লাইট ট্রিপ ইজ রিয়েলি চ্যালেঞ্জিং মম এজ স্টর্ম ইজ ব্লোইং। তারপর সেই অভয় বাক্য, তুমি অযথাই শুধু শুধু টেনশন কোরো না তো মম, এটা কোনো ব্যাপারই না, দেখবে ঠিক সেফলি রিচ করব।
যখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি থেকে মুসলধারে বৃষ্টি শুরু হল তারপর আবার ফোন। আবার ভয় দেখনো তারপর নায়কোচিত সাহসি আশ্বাস, এভাবে বিভিন্ন সিচুয়েশনের বর্ননা ফ্লাইট আরো কত ঘন্টা দেরি হতে পারে তার আশংকা, ক্যাপ্টেন এবং কেবিন ক্রুদের সমস্ত আপডেট ঘোষনা হুবহু বর্ননা করে আহ্লাদি বালক তার মায়ের প্রায় হার্ট এটাক ধরিয়ে দিতে সম্পুর্ন সফল হল।
আমি মনে মনে বলি শালার ব্যাটা এতই যদি চাস যে মা টেনশান না করুক তাইলে এত ফোন করা কি দরকার? যায়া পৌছায়া ফোন দিতি। আমার মাথায় তখন শয়তানি বুদ্ধি এল, বললাম, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতো প্রব্লেম নয় কিন্তু বিমান টেক অফের সময় যদি আচমকা শিলাবৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাহলে বিপদ আছে। কারন বিমানের টারবাইন যখন প্রচন্ড গতিতে ঘোরে তখন যে কোনো ক্ষুদ্র পার্টিক্যালের সাথে তার সংঘর্ষের ভরবেগ অর্থাত মোমেণ্টাম টারবাইনের ব্লেডগুলো ভেংগে দেওয়ার মতই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। অতপর আমি যা আশা করছিলাম তাই হল, বালক তার মাকে ফোন করে জিগাসা করল, মম কোথাও কি শিলাবৃষ্টি হচ্ছে? একটু খবরে দেখ ত। মা মনে হয় বললেন কেন, সর্বনাশ, তোর ওখানে কি এখন শিলাবৃষ্টি হচ্ছে নাকি রে। তিনি মনে হয় এও বললেন তাকে প্লেন থেকে নেমে যেতে এবং বাই রোডে আসতে। বালক তখন বল্ল, ইউ আর খ্রেজি মম, শুধু শুধু টেনশন কর, আর বাবা ফোন ধরছে না কেন, অকেও বলে দাও যেন টেনশন না করে।
আমার বাম পাশে বসা ভদ্রলোক এতক্ষন মুচকি মুচকি হাসছিলেন। এবার তিনি হাসতে হাসতে গড়িয়েই পড়লেন।
অবশেষে প্লেন উড়ল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মদ্ধ্যেই। যাত্রাটা বিপজ্জনকই ছিল বটে। বিদ্যুত চমকনোর ঝলকানিতে ক্ষনে ক্ষনে বিমানের জানালাগুলো আলোকিত হয়ে উঠছিল। অশান্ত বাতাস এবং চাপের তারতম্যের কারনে বিমান বিপজ্জনকভাবে দুলছিল এবং ওঠানামা করছিল। অনেকেই বমি করে ফেল্ল। আমার তখন হাসি পাচ্ছিল এই কারনে যে আমি যদি আজ বিমান বিদ্ধস্ত হয়ে মারা যাই তহলে খুবই বিব্রতকর ব্যাপার হবে। এই মাম্মি ড্যাডির পোলা তো মাকে সব আপডেট জানিয়ে দিল কিন্তু আমি বরাবরের মতই আমার কাজকারবার, গতিবিধি সম্পর্কে বাসায় কিছু জানাই না। আমি কখন ঢাকায় আসি, কখন যাই কিভাবে যাই কিছুই কেউ জানে না। এখন যদি জানে যে আমি প্লেন ক্রাশ কইরা মরছি তাহলে কান্না শুরু করার আগে আম্মার পুরা এক দিন লেগে যাবে এটা বূঝতে যে আমি প্লেনে আবার কখন উঠলাম, নাকি প্লেন আমার মাথায় আইসা পরছে, রাস্তাঘাটে এত গাড়ি থাকতে আমি বেহুদা প্লেনেই কেন উঠতে যাব। কান্নাটাও হবে কনফিউশনের কান্না।
যাই হোক অবশেষে আমরা নিরাপদে অবতরন করলাম এবং সেই পোলা যথারিতি মাকে ফোন করে তার বাকি দুর্ধর্ষ অভিজ্ঞতার বর্ননা দিতে লাগল।
# মোরাল অফ দ্যা স্টোরি কি?
১) অধিকাংশ পোলাপাণ তার মাকে টেনশনে রেখে এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে।
২) অনেক ছেলেমেয়ে তার মা মরে গেলে তার কি হবে এটা না ভেবে বরং সে মরে গেলে তার মা গড়াগড়ি দিয়ে কি কান্নাটাই না কাদবে এ ধরনের ফেন্টাসিতে ভুগে।
৩) মেয়েদের সামনে হিরো হওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি আমরা কি কারনে যেন বিভিন্ন লেইম বিষয়ে মায়ের কাছে হিরো হওয়ার চেষ্টায় থাকি। এই যেমন হরতাল, গোলাগূলি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে খবর না দিয়ে হটাত উপস্থিত হয়ে মাকে চমকে দেওয়া, এই নাও তোমার ছেলে সেইফলি তোমার কোলে ফিরে এসেছে, এটা তোমার উপহার। রবিন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’ কবিতাটি আমাদের সবার প্রিও।
৪) হল/মেস থেকে বাড়ি এসে, তোমার হাতের রান্না খেতে এলাম মা। মেসের খাবার জঘন্য, ময়দায় পোকা, না খেতে খেতে তোমার ছেলেটা শুকিয়ে গেছে এই জাতীয় ইমোশানাল ব্ল্যাকমেইল।
৫) আমি জিতলে জিতে যায় মা, এমনকি আমি খেলেও পেট ভরে মায়ের। এ জাতীয় চিন্তাধারা
আসলে ভালবাসা নিম্নমুখী হয়। মা সন্তানকে যত ভালবাসে, মাকে ততটূকূ ভালোবাসার ক্ষমতা সন্তানের নেই। ছেলে মারা গেলে মা যত কাঁদে অতটূকূ কাঁদার সামর্থ্যও ছেলের নেই। তাই মা দিবসে no need to show আলগা পিরিত। এর চেয়ে বেটার হয় নিজের সন্তানকে ঠিক সেভাবে ভালোবাসার চেষ্টা করা। আমাদের নিউ জেনারেশনের সেলফি রানিরাও তো এক সময় মা হবে। তারা কি তাদের সন্তানকে ঠিক ততটূকূ মমতা দিয়ে লালন করতে পারবে যেভাবে আমার সেকেলে ক্ষেত আম্মা আমাকে লালন করেছে? কপোত কপতিদের যে হারে লিটনের ফ্ল্যাটে ডেটিং এবং এক্সিডেণ্ট ঘটিয়ে এবর্শনের ঘটনা যে হারে বাড়ছে তাতে দিন দিন সন্তানের প্রতি মায়ের মমত্ববোধও কমে যাচ্ছে।
আমি নিজেও তো স্যারেন্ডার। আমার পক্ষে পোলাপান মানুষ করা সম্ভব না। আমার যদি কখনো ছেলেপূলে হয় তখন আমি তাকে তার দাদির কোলে ছুড়ে দিয়ে আসব, বলব এই নেন মানুষ করেন, পারলে আমার মত হুবহু আরেকটা বলদ বানায়ে দেন।
মা দিবসে অনেকেই প্রোফাইল পিকচারে ‘ I love you mom’ ট্যাগ লাগাইছে।
আচ্ছা আমাকে যদি বলা হয় আপনাকে এক বিলিওন ডলার দেওয়া হবে, বিনিময়ে আপনি আপনার মাকে গিয়ে বলবেন ‘ I love you maa’ আমি কি বলতে পারব? চুলোয় যাক এক বিলিয়ন ডলার, আমার মাথা কাটা যাক, তবুও আমি জিবনেও বলতে পারবনা। সম্ভব না। impossible to show আলগা পিরিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×