মনে করুন আপনি একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, পেছন থেকে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে একটি কার এসে আলতো ধাক্কা দিয়ে আপনাকে রাস্তায় ফেলে দিল। আপনি খুব বেশি ব্যাথা পেলেন না। এই সময় আপনাকে ক্লোরোফরম দিয়ে অজ্ঞান করা হল। তারপর আপনার শরিরের বিভিন্ন যায়গায় হালকা হাতুড়িপেটা করে সারা শরিরে আগাগোড়া ব্যান্ডেজ করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দেওয়া হল। জ্ঞান ফেরার পর আপনি অবাক হয়ে নিজের অবস্থা দেখলেন, আপনার সারা গায়ে গিরায় গিরায় ব্যাথা, চারদিকে মাস্ক পরা ব্যস্ত ডাক্তার নার্সরা ছুটোছুটি করছে। আপনি যখন অজ্ঞান হওয়ার আগের ঘটনা ভালো করে মনে করার চেষ্টা করছেন, তখন আপনাকে বলা হল আপনার ম্যাসিভ রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে, মাথায় আঘাতের কারনে আপনার স্মৃতি চলে গেছে, দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন। আপনি যখন কিছু বিশ্বাস করতে পারছেন না তখন তারা বলল আপনি বিখ্যাত কোনো লেখক বা বিজ্ঞানী, দেশে বিদেশে আপনার জার্নাল বই ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। কেউ একজন পরিকল্পিতভাবে আপনাকে কিছু বই এনে দেখালো যার মলাটে লেখক হিসাবে আপনার নাম লেখা। আপনি হয়ত তখন ভাবা শুরু করবেন, কে জানে হয়ত তারাই সত্যি, এতদিন যা ছিল সবই হয়ত কোমায় যাওয়া ঘোরের স্বপ্ন। মানুষকে কনফিউজড করা খুবই সহজ।
এমন কোনও স্বপ্ন দেখেছেন কখনো যার ছিল অনেকগুলো স্তর, স্বপ্নের এক পর্যায়ে আপনি ঘুম থেকে যেগে উঠেছেন ভাবছেন স্বপ্ন ভাঙল কিন্তু সেটাও ছিল স্বপ্নেরই অংশ। আপনি শুধু স্বপ্নের দ্বিতীয় স্তর থেকে প্রথম স্তরে প্রবেশ করেছেন। আমি একবার এই ধরনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। যখন অবশেষে সত্যি সত্যি ঘুম থেকে জেগে উঠেছি তখন গায়ে চিমটি কেটে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছি আসলেই ঘুম থেকে জাগলাম কিনা। কে জানে এখনও স্বপ্ন দেখছি হয়ত। স্বপ্নের মধ্যেই ব্লগ লেখছি কিনা কে জানে। আমি যদি কখনও ঘুম থেকে না জাগি তাহলে কিভাবে জানব আমি আসলে বাস্তবে আছি নাকি স্বপ্নে আছি?
আপনি একটি ল্যাপটপ কিনেছেন, বেশিদিন হয়নি, এখনো নতুনের মতই আছে। আপনি সেটিতে সফটওয়ার, সেটিংস, ডেস্কটপ, ফোল্ডার ইত্যাদি নিজের মনমত সাজিয়েছেন। মনে করুন যদি আপনি ল্যাপটপটি টেবিলে রেখে দুই ঘন্টার জন্য বাইরে যান এবং এরই মধ্যে কেউ একজন আপনার ল্যাপটপটি সরিয়ে সেইম ব্রান্ড এবং কনফিগারেশনের অন্য একটি ল্যাপটপ রেখে দেয় এবং আপনার ডাটাগুলো ট্রান্সফার করে সবকিছু হুবহু আপনি যেভাবে সাজিয়েছিলেন সেভাবে রাখে তাহলে আপনি ফিরে এসে কম্পিউটার অন করে বুঝতেই পারবেন না যে সেটি আপনার ল্যাপটপ নয়।
আচ্ছা আমার মৃত্যুর পর আমাকে নিয়ে আসলে কি করা হবে? সৃস্টিকর্তা আমার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সমস্ত ঘটনার স্মৃতি বাইনারি কোডে তার বিশাল গুগল ড্রাইভের এক কোনে সেইভ করে রাখবেন। সেই সাথে আমার ডি এন এ অনুর গঠনের কোডও সেইভ করে রাখবেন। আমাকে কবর দেওয়া হবে। আমার শরিরের খনিজ লবনগুলো গাছের পাতা, শিরা উপশিরা, ফলমুলে ছড়িয়ে যাবে, মানুষ ও প্রানীরা সে ফল খাবে, পোকারা আমার শরীরের কনা খেয়ে মাইলের পর মাঈল উড়ে যাবে, লক্ষ লক্ষ বছরের পৃথীবির বিবর্তনে আমার শরিরের কনা মিশ্রিত মাটিগুলো দিক বিদিক কোথায় ছড়িয়ে যাবে। তারপর শেষ বিচারের দিন স্রষ্টা এই কনাগুলো সংগ্রহ করে আমার সেই ডি এন এ অনুর কোড মোতাবেক আমার আরেকটি ক্লোন তৈরি করবেন। এই সদ্যজাত ক্লোনটির জন্য যে ভয়ংকর ব্যাপার অপেক্ষা করছে তা হল লক্ষ বছর আগে মারা যাওয়া আমার জীবনের স্মৃতির বাইনারি কোড সিরিয়াল পোর্ট দিয়ে তার মস্তিষ্কে লোড করা হবে। সে তখন আমার হয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া পাপ গুলোর কারনে অনুতপ্ত হবে। এখন যার বিচার হবে সে কি আমি নাকি আমার ক্লোন? আগুনে জ্বলবে আমার ক্লোন, তার ফিলিংস হবে ঠিক আমার মতই। যখনই একটি শুক্রানু একটি ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয় তখন সম্পুর্ন নতুন আনবিক বিন্যাসের একটি ডি এন এ তৈরি হয় সেই সাথে তৈরি হয় তার জন্য একটি স্বর্গ বা নরক। বাকি যে লক্ষাধিক শুক্রানুগুলো মিলনে ব্যার্থ হয় তারা স্বর্গ বা নরকে যাওয়া থেকে বেচে যায়। এসব চিন্তা করতে গেলে মাথা জট পাকিয়ে যায়।
এগুলো বোঝার ক্ষমতা আসলে মানুষকে দেওয়া হয় নি। অসীম কি জিনিস সময় কি জিনিস তা আমরা সঙ্গায়িত করতে পারি না। অনেক কিছুই মৃত্যু পর্যন্ত অজানা রহস্যই থেকে যাবে। বেশি চিন্তা করলে জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না
সে জন্য অনেকেই স্রষ্টা, পরকাল এই বিষয়গুলো ফাকা মাথায় বিশ্বাস করেন এবং তারাই সুখে থাকেন। অনেকেরই কোনো ধর্মবিশ্বাসের বিশেষ কোনো যৌক্তিক কারন নেই। তারা তাদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে যে কোনো বিপরীত সত্যের বা যুক্তি তর্কের মুখোমুখি হতে ভয় পায় যা তাদের বিশ্বাসের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে। তারা আসলে যেটা পালন করে সেটা হচ্ছে কট্টর ধর্ম। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করার কারনে সে কোনো কারন ছাড়াই কট্টর মুসলিম। কেউ কোনওভাবে বোমা মেরেও তাকে অন্য ধর্মে দীক্ষিত করতে পারবে না। এই লোকটাই যদি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করত তাহলে সে একইভাবে কট্টর হিন্দু হতো। তার ডিএনএ কোডিং এ যে ধর্মটা আছে তা হচ্ছে গোড়ামি। এটা তাদের দোষ নয়, বরং হতে পারে এটা হচ্ছে তার প্রতি স্রষ্টার বিশেষ অনুগ্রহ। ফিলোসফিতে পি এইচ ডি করে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস আসে না। স্রষ্টায় বিশ্বাস আসে অসহায়ত্ব থেকে। মানুষ হচ্ছে দুর্বল প্রানী। সে যে কত অসহায় সেটা পরিবার পরিজন উতসবের মদ্ধ্যে থেকে বোঝা যায়না। নাস্তিকতা হচ্ছে প্রাচুর্যের মদ্ধ্যে থেকে এক ধরনের ফ্যাশনেবল ফ্যান্টাসি যা অনেকেই বিজ্ঞান মনোষ্কতা বলে চালিয়ে দেন। যার কেউ নেই তার এমন একজন অদৃশ্য ইমাজিনারি অবলম্বন দরকার যার কাছে সে রুজু হয়ে নিজের অসহায়ত্তকে স্বপে দিতে পারে। তিনিই হচ্ছেন পালনকর্তা।
যে হতভাগ্য লোকটা হাটুর উপর থেকে কাটা পা, সারা গায়ে ঘা নিয়ে উপুড় হয়ে রাস্তায় পড়ে থেকে জিকির করছে এবং তার চারপাশে পয়সা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সে মনে মনে কল্পনা করছে শীঘ্রই সে একদিন মুক্তি পাবে, পরকালে সুন্দর চেহারা হবে তার, অপ্সরিরা তাকে ঘিরে থাকবে। এই হতভাগ্য লোকটাকে যদি যুক্তি সহকারে বুঝিয়ে দেওয়া হয় পরকাল বলতে আসলে কিছু নাই, সবই প্রকৃতির খেলা, আমরা কুকুর বেড়ালের মতই পচে যাবো এন্ড দেট উইল বি দা এন্ড অব দা স্টোরি। সে তখন কি আশা নিয়ে বাচবে? সে বলবে আমাকে এখনি শেষ করে দাও। আমার আর কষ্ট করে বেচে কাজ নেই।
আমার একটি গিটার আছে আমি সুরের সাগরে ভাষা হাই ক্লাস লোক, আমার অদৃশ্য কোনো অবলম্বন দরকার নেই তাই আমি নাস্তিক। কিন্তু এমন অনেক সত্যিই অসহায় মানুষ আছে যাদের একজন অদৃশ্য অবলম্বন দরকার। এবং পরকালে খোদা সেই হতভাগ্য লোকটার যদি ক্লোন করেন এবং তার মাথায় হতভাগ্য লোকটির জীবনের দু:সহ স্মৃতি লোড করার পর তকে বলেন তোমাকে স্বর্গ দেওয়া হল তাহলে সে ক্লোন হোক বা যাই হোক ধন্য হয়ে যাবে।
মৃত্যুর পরে যদি কোনো জীবন না থাকে তা হবে চরম হতাশার কারন
ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ অনুসারে কোনো একটি এলাকার প্রানি বা উদ্ভিদকুলের শারিরিক গঠন সে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার মত করে অভিযোজিত হয়। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জলাবদ্ধতায় টিকে থাকার জন্য সে অঞ্চলের গাছগুলোর শিকড় হয় প্রয়োজনেই বিশেষভাবেই অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, মরুভুমিতে পানির অভাবের কারনে অবধারিতভাবেই উটের গলায় পানির থলি থাকে, ক্যাক্টাসগুলোও মাংসল পত্রে পানি ধরে রাখে। বিশেষ প্রতিকুল পরিবেশে লড়াই করারর জন্য প্রানীদেরও নানান বিশেষ শারিরিক গঠন প্রাকৃতিকভাবেই নির্ধারিত হয়। এসব যদি হয় প্রাকৃতিক অনিবার্য ঘটনা তাহলে পয়গাম্বরদের আগমন, ধর্মগ্রন্থ নাজিল ইত্যাদি কোনো অবৈজ্ঞানিক প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা নয়, এগুলোও স্বাভাবিক ঘটনা। যখন কোনো জাতি পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে তখনও অবধারিতভাবেই সেখানে এমন একজন সেইন্ট জন্মগ্রহন করে যে লোকদের আলোর পথ দেখায়। তেমনই যার কেউ নেই তার জন্য অবধারিতভাবে এমন এক স্বত্তা থাকে যে অদৃশ্য থেকে তাকে সাহাজ্য করে।
পৃথিবীর উন্নতির জন্য প্রকৃতি নির্ধারন করে দেয় প্রতি ১ কোটিতে একজন বিজ্ঞানি জন্মগ্রহন করবে, প্রকৃতি নির্ধারন করে দেয় দুনিয়ার নানা রঙ বৈচিত্র প্রকাশের জন্য প্রতি ১০০ বা ১০০০ জনে একজন গায়ক, শিল্পি বা নর্তকি থাকবে, সেই সাথে প্রকৃতি অনিবার্যভাবে এও নির্ধারন করে দেয় যে এমন কিছু মানুষ থাকবে যাদের মাথায় থাকবে পাগড়ি, মুখে দাড়ি এবং কপালে সেজদার কালো দাগ যারা এক অদৃশ্য আলোক তরংগের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২২