অনেকদিন ধরেই ব্লগে আছি। কিন্তু কিছু লিখতে মন চায় না, তাই শুধু পড়ি কিন্তু লগ ইন করি না। যাহোক অনেকদিন পর একটি গল্প লেখার চেষ্টা করলাম, কিছু হয়েছে কি না জানিনা। ভালো-মন্দের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম।
গাঁয়ের নাম ছিল নীলপুর। দিনের বেলা ছবির মতো সুন্দর, কিন্তু রাত নামলেই গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়ত অদ্ভুত এক ভয়ংকর নীরবতা। পুরনো লোকেরা বলত, এই গাঁয়ে একসময় এক কালো জাদুকর বাস করত। তার অভিশাপেই নীলপুরে রাতের বেলায় কেউ বাইরে বেরোয় না।
রহমান সাহেবের বাড়ি ছিল গাঁয়ের এক কোণে। তিনি ছিলেন খুব সাহসী মানুষ, কোনো ভূতের গল্পে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু তাঁর মেয়ে, ছোট্ট মিনা, সবসময় বলত সে রাতে জানালায় কোনো ছায়া দেখে। রহমান সাহেব মেয়ের কথা শুনে হাসতেন, বলতেন, "এগুলো তোমার মনের ভুল।"
এক রাতে, রহমান সাহেবকে কাজে বাইরে যেতে হল। মিনা মায়ের সাথে ঘরে থাকল। রাত বাড়ার সাথে সাথে মিনা মায়ের পাশে ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু মাঝরাতে একটা শব্দে তার ঘুম ভাঙল। কেমন যেন একটা ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকল। মিনা জানালার দিকে তাকিয়ে দেখল, বাইরে একটা ছায়ামূর্তি। তার শরীরটা কালো, চোখ দুটি লাল রক্তের মতো।
মিনা ভয়ে চিৎকার দিল, মায়ের কাছে ছুটে গেল। তার মা কিছুই দেখল না, শুধু মেয়েকে সান্ত্বনা দিল। পরদিন সকালে মিনা বলল, "মা, সেই ছায়ামূর্তি আবার এসেছিল।"
রহমান সাহেব ফিরে এসে মেয়ের কথা শুনলেন। তিনি ভাবলেন, এবার সত্যিই দেখতে হবে। রাতে তিনি জেগে রইলেন, মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে ঘুম পাড়ালেন। মাঝরাতে আবার সেই ঠান্ডা বাতাস এলো। রহমান সাহেব জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সত্যিই একটা ছায়ামূর্তি। তিনি সাহস করে জানালা খুলে বাইরে গেলেন।
ছায়ামূর্তিটা তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকল। রহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কে?"
মূর্তিটা ধীরে ধীরে বলল, "আমি সেই কালো জাদুকর। তোমাদের গাঁয়ে আমার অভিশাপ ছিল। আমাকে মুক্ত করো।"
রহমান সাহেব বললেন, "কীভাবে?"
জাদুকর বলল, "তোমাকে পুরনো মন্দিরে যেতে হবে। সেখানে আমার আত্মার মুক্তি পাবে।"
রহমান সাহেব সাহস করে সেই পুরনো মন্দিরে গেলেন। মন্দিরে ঢুকে দেখলেন, একটা পুরনো প্রতিমার সামনে একটা কালো পাথর। তিনি সেই পাথরটা তুলে ফেলে দিলেন। হঠাৎ করেই মন্দিরটা আলোয় ভরে উঠল, আর জাদুকরের মূর্তিটা ম্লান হয়ে গেল।
সেই রাতের পর থেকে নীলপুরে আর কোনো ভয়ংকর ছায়ামূর্তি দেখা যায়নি। মিনা আর রাতে ভয় পেত না। রহমান সাহেব গাঁয়ের মানুষদের বললেন, "ভয়কে সম্মুখীন হতে হয়। তবেই মুক্তি মেলে।"
ছবি ক্রেডিট: Click This Link