একদিন হাঁস হতে চেয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম চৈত্রের কাঠফাটা রোদে।
দু'পায়ে দাঁড় বেয়ে হাঁসগুলো কেমন
দাবড়ে বেড়ায় রুপালী পুকুরে।
ঝড় তোলে প্রশান্ত কলমির বাগানে
ডাহুকের ডেরায়।
হাঁসদের জ্বর হয় না। আমার হয়।
স্কুলে খাতা-কলম হারানো ছিল নিত্যকার ঘটনা।
মারামারি করে জামার বোতাম হারানো।
একদিন জুতা হারিয়ে মায়ের সে কি বকুনি।
টিফিনের টাকা হারিয়ে মাকে মিথ্যে বলা।
'একটু চালাক-চতুর না হলে চলবে কেমনে'
মা বকতেন আর বলতেন।
আমি একটু চালাক-চতুর হতে চেয়েছিলাম।
চড়ুইভাতি খেলার বয়সে বাবার হাত ধরে
গিয়েছিলাম নদীর ঘাটে। দু’হাত ভরে অনেক
মাছ দিয়েছিল হাশিম মাঝি। নৌকার মাথালে
দাঁড়িয়ে তার দিগন্তে ছুটে চলা দেখে ভেবেছিলাম-
মাঝি আমাকে হতেই হবে।।
প্রচন্ড বজ্রবৃষ্টিতে জবুথবু হয়ে, কাদামাটি
আর যাবতীয় প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে
বাবা আমার ফসলের বীজ বুনত। ঘন সবুজ
ক্ষেতে দাঁড়িয়ে নিত প্রগাঢ় নিঃশ্বাস।
সোনালী ধানের অলঙ্কারে বাবার মুখে দেখেছি
প্রজম্মের হাসি। নিখাদ সে হাসি দেখে ভেবেছি-
আমাকে হতে হবে খাঁটি চাষা।
হেমন্তের সকালে ঘাসের ডগায় শিশির
শবনব তার মোহময় দ্যুতির আবেশ ছড়াত।
আমি মুগ্ধ হয়ে সে আলোকরশ্মির আঙিনায়
নিজেকে বিলাতাম। আর সিদ্ধান্তহীনতায়
ভুগতাম। আমি কি ঘাস হব না কি শিশির শবনব?
এক জটাধারী সন্যাসীকে দেখতাম
রোজকার বেলার সাথে পাল্লা দিয়ে
মোহাবিষ্টের মত হেঁটে যেতে।
একদিন আমাকে বলল,'কি হতে চাস তুই?'
আমি ভড়কে গিয়ে থমকে রইলাম।
সন্যাসী তার গম্ভীর স্বরে কম্পন তুলে বলল,
'মানুষ হ, মানুষ!'
আমি একদিন মানুষ হতে চেয়েছিলাম।
পুনশ্চ:
তবে জীবনানন্দ দাস হতে চাইনি কখনো।
কি লাভ মরার পরে এত গুণগ্রাহী পেয়ে?