ছোট বেলায় ধর্ষণ কি জিনিস জানতাম না। ধর্ষণ শব্দটার সাথে কোন পরিচয় না থাকলেও মাঝে মাঝে এর ওর মুখে শুনতে পেতাম। জিজ্ঞাসা করলে বলত - “ওতো জানতে হবেনা পড়তে বস!!”
আমিও আর মাথা না ঘামিয়ে পড়তে বসে যেতাম “বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ, মাগো আমার শোলক বলা কাঁজলা দিদি কই”
তখন খুব ভাবতাম, এই কাঁজলা দিদিটা কে? কোথায় গেল সে?
না কাঁজলা দিদি নয়, বলতে চাচ্ছি সাম্প্রতিক সময়ের তনু দিদিদের কথা এবং রাস্তার খুন হওয়া হাজারো ভাই বোনের কথা। কেন আমি ধর্ষণ এবং সড়ক দূর্ঘটনার কথা একত্রে বলছি বা এ দুয়ের ভিতর কোন যোগসাজশ আছে কিনা, অথবা আমার এই আর্টিকেলের শিরোনামের সাথেই বা এর কি সম্পর্ক তা পরিষ্কার করছি।
একটা সময় ধর্ষণ ছিল এদেশে পিলে চমকে যাওয়ার মত খবর বা সড়ক দূর্ঘটনায় কারো মৃত্যুর ঘটনাও ছিল যথেষ্ট কম। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশে গত দুই বা তিন বছরে যে পরিমাণ ধর্ষণ এবং সড়ক দূর্ঘটনা বেড়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরববিহীন (সুত্রঃ বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো)। হ্যাঁ কপালে চোখ ওঠার মতই খবর। কিন্তু এর পিছনের মূল কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে দেশের প্রায় সবকটি পেপার পত্রিকা বা টিভি নিউজ দেখেছি, এমনকি নামকরা সব বুদ্ধিজীবীদের টকশো দেখেছি রাতভর! কিন্তু সেইসব বুদ্ধিজীবীদের গবেষণায় হাজার হাজার কারণ উঠে আসলেও আমার মতের সাথে একজনের মতও মেলেনি!! বা মিললেও আমার চোখে পড়েনি হয়তো।
আমি মনে করি এই দুই ঘটনার প্রধান ও মূল কারণ একটিই, আর তা হল ইয়াবা!! অনেকে বলে “বাবা”!!
ইয়াবা আসলে কি বা এর কাজ কি, খেলে কি হয় তার বিশদ বিবরণ গুগলের কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন। এর সেবন প্রক্রিয়া হেরোইনের মতই।
এবার আসি সেই যোগসাজশ প্রমাণ করতে। ইয়াবার মূল দুটি লক্ষন হল এটা সেবন করলে ঘুম সম্পূর্ন রূপে বিতাড়িত হয় এবং পাগলা কুত্তার মত যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর যার সাথে সাথে লোপ পায় স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি ও বিবেক!!
আমাদের দেশে ইয়াবার ব্যপক সেবন ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। বেশ কয়েক মাস আগের পেপার পত্রিকা ও টিভি নিউজের সংবাদ শিরোনাম গুলো ছিল এরকম -
“হাত বাড়ালেই মিলছে মরনঘাতি ইয়াবা”
“দেশ পুড়ছে ইয়াবার আগুনে”
“দেশের যুবসমাজ হুমকির মুখে”
“সন্ধ্যা নামলেই রাজধানী ছেয়ে যায় ইয়াবার ধোঁয়ায়”
ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিশিষ্ট জনেরা বলছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানোই রোড এক্সিডেন্টের মূল কারণ। কিন্তু আমি এর সাথে পুরোপুরি একমত নই!! আমি মনে করি এর মূল কারণ ইয়াবা!! আমার মতে দেশের ৯৯.৯৯ শতাংশ ড্রাইভার ধুমপায়ী এবং ৯০ শতাংশ ড্রাইভার ইয়াবা সেবী। এবং ঢাকার ৯৯ শতাংশ ড্রাইভারই ইয়াবা আসক্ত। ইয়াবা খেয়ে গাড়ি চালালে কোন ক্লান্তি আসেনা তাই তারা ইয়াবা খেয়ে গাড়ি চালাতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কখনো কখনো অতিরিক্ত আয়ের আশায় দুদিন তিনদিন না ঘুমিয়ে অনবরত গাড়ি চালাতে থাকে!! আবার শরীর প্রচন্ড গরম থাকায় যৌন চাহিদা থাকে তুঙ্গে, ফলে কখনো কোন মেয়ে যাত্রী একা থাকলে ড্রাইভার ও হেল্পার মিলে ওই মেয়ের উপর ঝাপিয়ে পরতে দিধা করেনা।
এতো গেল শুধু ড্রাইভারদের কথা!! দেশের অধিকাংশ কিশোর, যুবক এখন ইয়াবা আসক্ত। আমি বিশ্বাস করি দেশকে যদি শতভাগ মাদক মুক্ত করা যেত তবে এক সপ্তাহের ভিতরে দেখা যেত রাস্তাঘাটে সকল মাদকাসক্তরা কিভাবে গলা কাটা মুরগীর মত ছটফট করছে। দেশের সব কটা হাসপাতাল, ক্লিনিক বা রিহ্যাবেও এদের জায়গা হতনা। তখন ধরা পরত সমাজের বহু মুখোশধারী মাদকাসক্ত যারা গোপনে মাদক সেবন করেন আর সমাজে বড়বড় লেকচার দেন।
সাম্প্রতিক সময়ের “নিরাপদ সড়ক চাই” এই দাবিটির সাথে সাথে “মাদক মুক্ত চালক চাই” যোগ করা জরুরী। যেখানে চালকের লাইসেন্স এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কেননা একজন মাদক সেবী কখনোই নিরাপদ চালক হতে পারেনা।
সর্বোপরি বর্তমান সরকার নানান ভাবে বিতর্কিত হলেও মাদক বিরোধী অভিযানের জন্য প্রসংশাও কুড়িয়েছে অনেক। খারাপ কে খারাপ আর ভাল কাজকে ভাল বলতে শিখি। তনু সহ যত বোন আমাদের ছেড়ে ওপারে কাঁজলা দিদির সাথে পাড়ি জমিয়েছে তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং বাংলাদেশ টা যেন শান্তিনগরে পরিনত হয় সেই দোয়া করি। মহান আল্লাহ্ আমাদের সঠিক বুঝদান করুন।