-"জন্ম দিলেই বাপ হওয়া যায়না, বুঝেছো? বাপ হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই তোমার!!!"
বলে ওপাশ থেকে ফোনটা রেখে দিল ইসমাইল হোসেনের একমাত্র ছেলে "দুপুর"! চৈত্র মাসের খরা রোদে ভরা দুপুর বেলা জন্ম হওয়ায় ছেলের নাম দিয়েছিলেন "দুপুর"। গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক জনাব ইসমাইল হোসেনের জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে কোন বই লিখলে অবশ্যই সেই বইয়ের শিরোনাম হতে হবে -"একজন সৎ মানুষের গল্প"। কেননা তাকে সততা ও নীতি-আদর্শের একজন উপমা হিসেবেই জানে গ্রামবাসী। বলাই বাহুল্য সম্পূর্ন নিরপেক্ষ ভূমিকার একজন মানুষ হওয়ায় গ্রামের ছোটখাটো শালিশ বিচারের জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে না গিয়ে তার কাছেই ছুটতো সাধারন মানুষ। তার বিচারে সন্তুষ্ট হত উভয় পক্ষই। এতে অবশ্য চেয়ারম্যান মহাশয় মনক্ষুন্ন হতেন না, বরং গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে তাকেও একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠাতেন এবং গ্রাম্য শান্তিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ও একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে বেশ কয়েকটি পুরষ্কারেও ভূষিত করেছেন তাকে।
ছেলের কাছ থেকে কথা গুলো শুনে ইসমাইল হোসেন তার মোটা ফ্রেমের হাই পাওয়ারের চশমা টা সাদা পান্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে হাতছরি নিয়ে তাতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে এগোলেন রাজবাড়ির দিকে। সারাজীবনের সমস্ত উপার্জন ও পেনশনের টাকা দিয়ে কোনরকমে একতলা বিশিষ্ট একটা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন তিনি বছর খানেক আগে। তার আগে মাটির বাড়িতেই থাকতেন তিনি তার স্ত্রী আর সন্তান দুপুর কে নিয়ে। তার স্ত্রীর খুব সখ ছিল একটা পাকা বাড়ি হবে তাদের, আর তার নাম হবে "রাজবাড়ি"। রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ যখন প্রায় শেষের দিকে তখনই একদিন ভরা সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই কাউকে কিচ্ছু না বলে নামাজের পাটিতেই মৃত্যুবরণ করেন ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের প্রতি আকাংখা পোষণ করায় বিধাতা হয়তো অসন্তুষ্ট হয়ে মাটির রাজবাড়িতেই তার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন! কিন্তু ইসমাইল হোসেনের দুঃখ একটাই - বউটাকে কখনো সুখ দিতে পারেননি। বিয়ে করে মাটির ঘরেই এনে রেখেছিলেন তাকে, আবার মাটির ঘরেই শুইয়ে দিতে হল! রাজবাড়িতে আর থাকা হলনা তার। রাজবাড়িতে থাকতে হলে রাজ টিকা নিয়ে জন্মাতে হয় বোধহয়।
-"বলি সারাদিন কোথায় কি করে বেড়াচ্ছিলেন? ছেলের বিয়ে দিয়েই দ্বায়িত্ব শেষ? ঘরে যে বাজার সদাই নেই সে খেয়াল আছে? এক পা তো কবরে চলেই গেছে, আরেক পা যাবার আগে কি আমাদেরকে উদ্ধার করা যায়না?"
কথা গুলো দুপুরের বউ অর্থাৎ ইসমাইল হোসেনের ছেলের বউ তার শশুর কে উদ্যেশ্য করে গলা উচিয়ে চিৎকার করে বলল।
বছর খানেক আগে দুপুর তার নিজ পছন্দেই বিয়ে করেছিল। কোথা থেকে এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে ঘরে তুলে সে তার বাবার পায়ের কাছে পরে ছিল এই বলে যে - এত ভালো আর ভদ্র মেয়ে নাকি দুনিয়ায় মেলা ভার!!
পরে অবশ্য ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েটা মেনে নিলেও সপ্তাহ না পেরুতেই ওই মেয়ে ভদ্রতাকে ধর্ষণ করে আবির্ভূত হল তার আসল চেহারায়!! নানান ভাবে, নানান উছিলায় শ্বশুর কে কটাক্ষ, তাচ্ছিল্য ও অপমান করে কি যেন এক অলিক সুখ আহরণ করত!! এদিকে বউ ভক্ত ছেলে সব দেখে বুঝেও বউয়ের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করার ক্ষমতা রাখত না। ইসমাইল হোসেন অবশ্য এ সমস্ত ভবিষ্যতের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তাই বলে নিজের ছেলের কাছ থেকে এতবড় কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। বউয়ের প্ররোচনায় সামান্য একটা বাড়ির জন্য তার ছেলে যে এত ওজনদার একটা কথা বলে ফেলবে, এটা কিছুতেই মেনে নেবার নয়।
কয়েক মাস ধরেই এই রাজবাড়ির লিখিত মালিকানা দাবি করে আসছে দুপুর। বাবা মারা গেলে যে সম্পত্তির মালিক তার সন্তানরা হয়, সেটা মানতে নারাজ সে, এবং এখনই এই বাড়ি ও জমির মালিক হতে চায়।
ছেলের বউয়ের কথায় কান না দিয়ে অনেক কষ্টে পুরোনো জং ধরা বাক্সটা তার ঘরের উপরের তাক থেকে নামিয়ে খুলে তার ভিতর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বস্তু বের করলেন ইসমাইল হোসেন। তার ভিতরে দেখা গেল- বিশেষ করে কিছু মেডেল যেগুলো তিনি বিভিন্ন সময়ে পুরষ্কার হিসাবে পেয়েছিলেন ও তার সাথে বিভিন্ন সম্মানী সনদপত্র, আর একটি দলিল।
দলিল টা পকেটে রেখে মেডেল আর সনদপত্র গুলো বাড়ির উঠোনে নিয়ে গিয়ে আগুন দিয়ে পোড়াতে শুরু করলেন তিনি। হয়তো এগুলোর আর কোন প্রয়োজন নেই!! কেননা এগুলোর থেকেও অনেক বড় সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। যে সম্মাননা কোন নিষ্প্রাণ কাগজের সম্মাননা নয়!! এ সম্মাননা হৃদয়ের কোঠরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে আজীবন, হয়তো মৃত্যুর পরেও। এভাবেই হয়তো সৌভাগ্যবান বৃদ্ধ বাবারা জীবনের সবটুকু উজার করে দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত কে পানি করে সন্তান মানুষ করার পুরষ্কার স্বরূপ এই বিশেষ সম্মাননা পেয়ে থাকেন। তিনিও বিশেষ সৌভাগ্যবান হওয়ায় ভূষিত হলেন এই সম্মানে!! তাই আজ এই কাগজের সম্মানপত্র বোয়াল মাছের কাটার মত বিধছে তার গলায়!!
ইসমাইল হোসেনের চোখে এতটুকুও জল নেই! তার সারাজীবনের অর্জন আগুনে পুড়ছে অথচ তিনি নিরব!! তিনি তো নিজেই পুড়ছেন আগুনে, কিন্তু কই, কোন পোড়া গন্ধ তো নেই!! কেন? শরীর পোড়া গন্ধ হয় ... কিন্তু মন পোড়ার কোন গন্ধ হয় কি?
তবে ধোয়ার গন্ধে ছেলের বউ ছুটে এসে চিৎকার করে বলল -
-"একি!! এগুলো কি করছেন?? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল ?"
ইসমাইল হোসেন তার দিকে তাকিয়ে হালকা মৃদু হাসলেন। তারপর আবারো একটা একটা করে কাগজ আগুনে ফেলতে লাগলেন। দুপুরের বউ আবারো বলল -
-"আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন?"
ইসমাইল হোসেন সবগুলো কাগজ আগুনে ফেলে পকেট থেকে দলিল টা বের করে ছেলের বউয়ের হাতে দিয়ে বললেন -
-"এই নাও বৌ মা, তোমাদের বাড়ি!! আজ থেকে রাজবাড়ির মালিক তোমরা। যদিও এই দলিল আমি অনেক আগেই করে রেখেছিলাম আমার খোকার জন্য। যাইহোক, খোকা বাড়িতে ফিরলে বলবে, গত কয়েকটা বছর ধরে ওকে খুব বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছিল ... কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আরো বলবে, আমি যোগ্য পিতা হতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু ও যেন যোগ্য পিতা হয়ে সমাজে বুক ফুলিয়ে হাটে, আমি উপর থেকে আমার ছেলের গর্বিত মুখটা দেখতে চাই। আর সবশেষে আমার খোকা কে দেখে রেখো মা। আর এই বুড়োটার কোন অন্যায় থাকলে নিজের সন্তান মনে করে ক্ষমা করে দিও মা।"
কথা গুলো বলে লাঠিতে ভর দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে বেরিয়ে পরলেন রাজবাড়ি থেকে। পিছন থেকে তার বৌ মা কয়েকবার ডাক দিলেও মনে হচ্ছে হাজার মাইল দূর থেকে ভেসে আসছে সেই ডাক। তিনি যেন কানে কিছুই শুনছেন না, চোখে কিছুই দেখছেন না, এমন ভাবে হেটেই চলেছেন .... হেটেই চলেছেন ...
****************************************
-"ছেলেটাকে রাস্তায় বসে কাদতেঁ দেখলাম, তাই সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম। ওর বাবা মার খোঁজ পেলে ফিরিয়ে দিব।"
কোথা থেকে ৬-৭ বছরের একটা বাচ্চা কোলে করে এনে বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ারটেকার জমির উদ্দিন কথাগুলো বলল ইসমাইল হোসেন কে। আজ ৮ মাস হল একটা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন ইসমাইল হোসেন, এবং এই জমির উদ্দিনের সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে তার। দিনের বেশির ভাগ সময় জমিরের সাথেই গল্প করে পার করেন তিনি। তবে ইসমাইল হোসেনের থেকে বয়সে অনেক ছোট হলেও জমিরের সাথে তার বন্ধুত্ব টা সত্যি প্রসংশা করার মত।
বাচ্চাটা স্কুল ড্রেস পরিহিত ছিল এবং ঘারে একটি ব্যাগও ছিল। বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে ইসমাইল হোসেন আদর করে বললেন -
-"আব্বু, তোমার নাম কি?"
-"দুপুর"!!...
একদম স্পষ্ট স্বরে বলল বাচ্চাটা। অন্যান্য বাচ্চাদের মত মোটেও অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য নয় তার মুখের ভাষা। ইসমাইল হোসেন কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে আবারো প্রশ্ন করলেন -
-"কি নাম তোমার, বাবা?"
-"দুপুর"
-"তোমার আব্বুর নাম কি?"
-"ইসমাইল হোসেন"!!...
এবার যেন একটু বেশিই বিব্রত হলেন তিনি!! কেমন যেন অসস্থিও হতে লাগল!! কাকতালীয় ভাবে এত কিছু কি মিলে যাওয়া সম্ভব!! বয়স হয়েছে তাই এখন আর আগের মত গভীর ভাবনা ভাবতে পারেননা। তারপর আবারো বললেন তিনি -
-"তুমি কি হারিয়ে গেছ?"
-"হু"
-"কিভাবে?"
-"আজ আব্বু আসেনি আমাকে নিতে !"
-"তোমার কি তোমার আব্বু, আম্মুর কথা মনে পরছে?"
-"না"
-"সত্যিই না?"
-"হ্যাঁ, সত্যিই না"
বলেই ঠোঁট উল্টে ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল ছেলেটা। তাকে থামাতে থামাতে জমির উদ্দিন এসে বলল -
-"ওদের স্কুলে যোগাযোগ করেছি, ওর বাবা আসতে দেরী করেছেন আজ ওকে নিতে। এখন উনি আমাদের এখানে আসছেন তার বাচ্চাকে নিতে"
ইসমাইল হোসেন বাচ্চাটাকে আশ্বস্ত করে অপেক্ষা করতে থাকলেন তার বাবার জন্য। বেশি সময় অবশ্য লাগল না, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটার বাবা এসে তার ছেলে কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল ... ইসমাইল হোসেন দুচোখ ভরে দেখলেন সে দৃশ্য... কিন্তু হঠাৎ তারও মনে পরে গেল- আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে হুবহু এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল তার জীবনেও...!!! হঠাৎ কেমন যেন সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ... কাকতালীয় ভাবে কি একের পর এক এতকিছু মিলতে পারে? তবে কি একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটে মানুষের জীবনে? একই ভাবে যখন কথা বলি, একই ভাবে খায়, ঘুমাই, চলাফেরা করি ঠিক তেমনি কি একই ঘটনাও ঘটতে পারে বিভিন্ন মানুষের জীবনে? পৃথিবীর সমস্ত অবহেলিত, লাঞ্ছিত বিতাড়িত বাবাদের সন্তানদের নাম কি "দুপুর"? আর সমস্ত হতভাগ্য বাবাদের নাম কি "ইসমাইল"? নাকি "দুপুর","ইসমাইল" এগুলো চিন্হ মাত্র? সব দুপুররাই কুলাঙ্গার, আর সব ইসমাইলরাই হতভাগা?
এরকম নানাবিধ প্রশ্ন যখন ইসমাইল হোসেনের মস্তিস্কে ঝড় তুলে চলেছে, এমন সময় বাচ্চাটির বাবা তাকে অনেক ধন্যবাদ জ্ঞাপনপূর্বক বললেন -
-"আসুননা আমার বাসায় একদিন চা খেতে, এইতো পাশেই আমার বাড়ি"
-"ও আচ্ছা তাই! ঠিক আছে যাব একদিন।" বললেন ইসমাইল হোসেন।
-"যদি আসেন তবে অবশ্যই অনেক খুশি হব। আমার বাড়ির নাম "রাজবাড়ি"!! গলির যেকোন লোক কে জিজ্ঞাসা করলেই হবে।"
এবার ইসমাইল হোসেন রীতিমতো হা হয়ে গেলেন। বুকের মধ্যে কোথায় যেন একটা মোচর দিয়ে গেল … তীব্র বিষাদের ছায়া ঘিরে ধরলো তাকে ... অপলক তাকিয়ে আছেন সামনের "ইসমাইল হোসেনের" দিকে ... লোকটা সেটা কিছুটা আঁচ করতে পেরে হো হো করে হেসে দিয়ে বলল -
-"আরে মশাই, অত অবাক হবার কিছু নেই! আমি মোটেও কোন রাজা বাদশা নই বা অঢেল টাকা পয়সারও মালিক নই!! অনেক কষ্টে বাড়িটি দাড় করিয়েছি, এবং আমার স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল কোনদিন নিজেদের বাড়ি হলে নাম রাখবে 'রাজবাড়ি'!! সেজন্যই এই নামটা দেয়া"
বলে হাসি বিনিময় করে লোকটি চলে গেল। ইসমাইল হোসেন বাকরুদ্ধ অবস্থায় ঠাঁই দাড়িয়ে রইলেন। মনে হচ্ছে চোখে খুব ঝাপসা দেখছেন। ঝাপসা চোখেই বাপ ছেলের চলে যাওয়া দেখছেন ... মনে হচ্ছে লোকটার জায়গায় তিনি, এবং পাশের ছেলেটার জায়গায় তার একমাত্র ছেলে দুপুর ... মাথাটা ঘুরে উঠলো ... মাটিতে পরে গেলেন তিনি ... তার খুব ইচ্ছা হল লোকটাকে থামাতে ... থামিয়ে বলতে -"ভাই, যে সন্তান কে এত ভালবেসে মানুষ করছেন, একদিন এই সন্তানের কাছেই আপনি হবেন অযোগ্য পিতা...ও ভাই... শুনছেন ... আপনিই একদিন হবেন সংসারের সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় বস্তু"
কিন্তু তিনি বলতে পারলেন না ... তিনি বুঝতে পারলেন তার সময় ঘনিয়ে এসেছে ... ততক্ষণে জমির উদ্দিন এসে তার মাথায় পানি ঢালতে শুরু করেছে … কিন্তু তিনি হাসছেন ... নিঃশব্দে হাসছেন তিনি... খুব হাসি পাচ্ছে তার ... সারাজীবন তিনি সৎপথে থেকেছেন ... ভালো কাজ করেছেন … যেন তারই উজ্জ্বল একটা আভা তার চোখমুখ দিয়ে ঝিলিক মারছে ... ঝাপসা চোখ নিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন ... জমির উদ্দিন তাজ্জব হয়ে সেই উজ্জ্বল আলো আর নিষ্পাপ হাসি দেখে শিউরে উঠলো ... ইসমাইল হোসেন আকাশের নীলে তার স্ত্রী কে দেখতে পেলেন ... দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে ... আর বলছে -"চলে এসো আমার কাছে... চলে এসো... রাগ করোনা খোকার উপর... ও তো আমাদের সন্তান ... আমরা ক্ষমা না করলে যে বিধাতা ওকে ক্ষমা করবেন না গো..."
ধীরে ধীরে আরো ঝাপসা হয়ে আসছে চারিপাশ ... এই তো মৃত্যু... কত কাছে... এই তো শান্তি ... কত মধুর ... ক্ষমা করে দিলেন তিনি ... একদম ক্ষমা করে দিলেন তার ছেলেকে ... ভয়ার্ত জমিরের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন -
-"কোন কবরের পাশে আমার কবর দিবে মনে আছে?"
জমির উদ্দিন হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাকালো, তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে!... ইসমাইল হোসেন আবারো বললেন -
-"আমার কবরের নাম কি হবে মনে আছে তো?"
জমির উদ্দিন আবারো মাথা ঝাকালো... এবং কাঁদতে কাঁদতেই বলল -
"রাজবাড়ি"