(উন্নত রুচির পাঠকেরা এড়িয়ে যেতে পারেন)
“হেগে পানি নেননি ব্যর্থমন্ত্রী ভুরুল মিয়া”
দুপুরের ভাত খেতে খেতে এ ধরনের সংবাদ শিরোনাম শুনে বমি করতে করতে থেমে গেলাম। খাওয়া থামিয়ে টিভি পর্দায় চোখ রাখলাম। বড় বড় অক্ষরে লেখা শিরোনামের দিকে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হলাম কানে ভুল শুনিনি। একে একে বাদবাকি শিরোনাম শেষ হলে বিস্তারিত সংবাদ মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য নড়েচড়ে বসলাম। যে কারণে আমি খাওয়া ফেলে টিভির দিকে তাকিয়ে আছি, ঠিক একই কারণে আমার মা, আর ছোটবোনও হা করে তাকিয়ে থাকল টিভির দিকে।
সংবাদ উপস্থাপিকা সেন্টার মনিটরে দৃষ্টি রেখে শুরু করলেন সংবাদ পাঠঃ-
“একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় টালমাটাল ব্যর্থ মন্ত্রী জনাব ভুরুল মিয়া সাংবাদিকদের তোপের মুখে প্যান্ট ভরে পায়খানা করে দিলেন।
আজ সকাল বারোটা বেজে বারো মিনিটে শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজার ঘটনা সচক্ষে পরিদর্শন করতে গিয়ে ঘটে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এই মূহুর্থে ঘটনা স্থলে আছেন আমাদের সিনিয়র সাংঘাতিক জনাব ধামাচাপা সরদার। আমরা এখন সরাসরি চলে যাব তার কাছে।
“ধামাচাপা, আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?”
“জী, শুনতে পাচ্ছি”
“আচ্ছা, আপনি আমাকে ঘটনার বিস্তারিত বলুন”
“জী, ঘটনার বিস্তারিত শোনার আগে একটু আমার বিস্তারিত অবস্থা শুনুন। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমাকে নাকে রুমাল চেপে কথা বলতে হচ্ছে। আসলে ব্যর্থ মন্ত্রীর গুয়ের গন্ধে এই এলাকা বর্তমানে জনশূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। এগুলো গুয়ের গন্ধ নাকি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ঘুনে ধরা পঁচা শরীরের গন্ধ সে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়। ক্যামেরা ঘোরালে দেখতে পারবেন এখানে সেখানে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে মানুষের বমি। মন্ত্রী মহোদয় কত দিন হাগেননি সে বিষয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
যাইহোক, আজ সকালে মন্ত্রী সাহেব অমুক স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসে এক পরীক্ষার্থীর সেল ফোনে উক্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন এবং ওই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করতে গেলেই ঘটে যত বিপত্তি। অভিযুক্ত ছাত্র রাগান্নিত হয়ে বলে ওঠে ‘আমাকে বহিষ্কার করতে হলে সবাইকে বহিষ্কার করতে হবে! পুরো দেশের সব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করতে হবে। কারণ এদের সবার কাছেই আগাম প্রশ্ন আছে’।
তখন মন্ত্রী সাহেব ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে। জানা যায় রাস্তার পাশের ডাব বিক্রেতাও ডাব বেচা বাদ দিয়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি করছে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমি নিজেও ওই ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে এক সেট প্রশ্ন কিনেছি, এবং এ ব্যপারে তাকে প্রশ্ন করলে কোন সদুত্তর মেলেনি। আর সেই সদুত্তরের আশায় আমরা সাংঘাতিক ভায়েরা মন্ত্রী সাহেব কে ঘিরে ধরলে এই অবাঞ্চিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। যাইহোক, এই ছিল আমার কাছে সর্বশেষ সংবাদ।”
“আচ্ছা ধামাচাপা সাহেব, ভুরুল মিয়া যে টয়লেট করে ফেললেন, আপনি তাকে শৌচকর্ম সম্পাদন করতে দেখেছেন?”
“জী না। আমি জানতে পেরেছি এগুলো তাদের কাছে কোন বিষয় না। মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা নাকি গু খেতেও প্রস্তুত।”
“জী ধন্যবাদ আপনাকে ধামাচাপা সাহেব। দর্শক এতক্ষণ আপনারা সরাসরি শুনছিলেন আমাদের সিনিয়র সাংঘাতিক ধামাচাপা সাহেবের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত। এবার চলে যাচ্ছি অন্যান্য প্রসঙ্গে …”
আমার ছোট বোনটা ক্লাস টেনএ পড়ে। আমি খাওয়া বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা মাথায় বললাম -
“আমার এ প্লাস চাইনা। তোর নিজের যোগ্যতায় ফেল করলেও আমি খুশি”
বিঃদ্রঃ দেশের চলমান প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার এই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। এই ক্রোধ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়।