মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি, জানো?
অনেক কথা হয়তো তোমাকে বলাই হবে না কখনো।
তোমাকে হয়তো কখনই বলা হবে না,
শেষবার যখন বাসস্টপে দেখা হয়েছিল
তখন আমার পকেটে ছিল তোমাকে লেখা একটা চিঠি।
কোন এক গভীর নির্জন রাতে তোমাকে আমার
ভালোবাসার কথা জানাতে লিখেছিলাম
দু' পাতার এক প্রেমপত্র।
সেও প্রায় পাঁচ বছর আগে,
তোমার সাথে যেদিন আমার প্রথম পরিচয়, ঠিক সে রাতেই।
সেদিনের কথা কি তোমার মনে আছে?
সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, সিড়ির গোড়ায় আমি বসেছিলাম।
হাতে কাজ ছিল না, খুব মন দিয়ে আমি কেমিস্ট্রির একটা বই পড়ছিলাম।
হঠাৎ তুমি আর কয়েকজন বান্ধবী নিয়ে এসে বসলে আমার একটু সামনে।
আমার পড়া বন্ধ হয়ে গেল।
ঠিক কতক্ষণ তোমার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম, জানি না।
ঘোরটা ভেঙেছিল তোমার বান্ধবীদের বাঁধভাঙা হাসিতে।
তোমার বান্ধবীরা আমাকে নিয়ে হয়ত কিছু একটা বলেছিল, আর তাতেই তুমি রাগে অপমানে লাল হয়ে উঠেছিলে। তোমাকে দেখাচ্ছিল টসটসে পাকা টমেটোর মতো। আমার এসব উদ্ভট বর্ণনা শুনে তুমি কি হাসিটাই না হাসতে!
আমি অবশ্য ওসব কিছুই বুঝিনি তখন।
একটু বাদেই ওদের কথা আর সহ্য করতে না পেরে তুমি উঠে এসেছিলে।
রাগে গটগট করে হেটে আমার সামনে এসে বলেছিলে,
"এই যে মিস্টার, কি হচ্ছে এসব বলুন তো? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?"
তখনো আমার ঘোর কাটেনি। অস্ফুট কন্ঠে আমি উল্টো জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন আশা করনি বলে তোমাকে একটু বিভ্রান্ত দেখালো, একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলে, "কেন?"
আমি মুগ্ধকন্ঠে বললাম, "মানুষ এতো সুন্দর হয়?"
কথাটা শুনে তুমি একটু লজ্জা পেয়েছিলে বুঝি। নিজের রূপের প্রশংসা শুনতে কে না ভালোবাসে! তোমার রাগটা ততোক্ষণে পড়ে গেছে কিন্তু তারপরো খানিকটা জোর খাটিয়ে উষ্ণ কন্ঠে বললে, "এভাবে আর দেখবেন না।"
আমি তোমার চোখে চোখ রেখে হেসে বলেছিলাম, "পারছি না তো!"
আমার মনে আছে,
সেদিন রাতে আমার কিছুতেই ঘুম আসছিল না।
চোখটা বন্ধ করলেই তোমার মুখটা ভেসে উঠছিল আর সাথে সাথেই বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠছিল
এক অসহ্য শুন্যতায়।
ঘুমাতে না পেরে সারারাত জেগে লিখেছিলাম ওই এক চিঠি।
ওই একটাই, একজনকেই।
পাঁচ বছর চিঠিটা আমি মানিব্যাগে রেখে ঘুরেছি।
তোমাকে চিঠিটা দিতে পারিনি, কিছু বলতেও পারিনি।
আমি কল্পনায় দেখতে পেতাম, চিঠিটা তোমাকে দিয়েছি আর সেটা পড়ার পর তোমার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে হয়ে যাচ্ছে রাগে। তুমি চিঠিটা কুটিকুটি করে ছিঁড়ে উড়িয়ে দিলে আর সেটা দশ লক্ষ কবুতর হয়ে উড়ে গেল নীল আকাশে এক খন্ড মেঘ হয়ে।
জীবনে কখনো হার স্বীকার করিনি। তোমার কাছে এভাবে হেরে যাবো সেটা ওই পাঁচ বছরেও মেনে নিতে পারিনি। কিসের একটা বাধা এসে বারবার আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তোমার কাছ থেকে। তুমি বলতে, আমার ইগোই আমাকে ডোবাবে। সত্যিই তাই। আজো যখন মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি, সেই কথাটাই অমোঘ সত্য হয়ে ধরা দেয়।
অতঃপর কিছু কথা থেকে যায়, যার বেশীর ভাগই তোমাকে নিয়ে এবং যথারীতি অগোছালো, বাকীটা - ব্যক্তিগত।