(৫)
এতক্ষণ তো দেখলাম খ্রিষ্টানদের New Testament। এবার আমরা ইহুদীদের গ্রন্থ Old Testament ঘেঁটে দেখি কিছু পাওয়া যায় কিনা।
হ্যাঁ, যা ভেবেছিলাম তাই। এখানেও অদ্ভুত জন্তুর কথা বলা আছে। তবে দুইটা না, চারটা। হিব্রু বাইবেলের বর্ণনা ভালো। প্রয়োজনীয় অংশগুলো তুলে দিলামঃ-
From the Book of Daniel (Old Testament)
৭-১ বাবিলের রাজা বেল্শত্সরের রাজত্বের প্রথম বছরে দানিয়েল বিছানায় শুয়ে ঘুমোনোর সময় একটি স্বপ্ন দেখলেন।
৭-২ তিনি স্বপ্নে যা দেখে ছিলেন তা লিখে রাখলেন এবং তার সারমর্ম বললেন। তিনি বললেন: “আমি রাত্রে একটি স্বপ্ন দেখেছি। ঐ স্বপ্নে চারি দিক থেকে জোরে হাওয়া বইছিল এবং সমুদ্রকে অশান্ত করে তুলেছিল।
৭-৩ আমি চারটি বড় জন্তু দেখেছিলাম যারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে আলাদা। তারা সবাই সমুদ্র থেকে উঠে এলো।
৭-৪ “প্রথম জন্তুটিকে সিংহের মতো দেখতে আর তার ঈগলের মতো ডানা ছিল। আমি যখন তাকিয়ে ছিলাম, তার ডানাগুলি টেনে তুলে ফেলা হল। জন্তুটিকে মাটি থেকে তোলা হল এবং তাকে মানুষের মত দুপায়ের ওপর দাঁড় করানো হল। এবং তাকে একটি মানুষের মন দেওয়া হল।
(মজার ব্যাপার হল, রেভেলেশনের প্রথম পশুর মুখটা ছিল সিংহের মতো। ১৩-২ )
৭-৫ “তারপর আমি দ্বিতীয় জন্তুটিকে দেখতে পেলাম যাকে দেখতে ভালুকের মতো। তাকে তার পেছনের পায়ের ওপর তোলা হল এবং তার মুখের মধ্যে দাঁতের ফাঁকে তিনটি পঞ্জরাস্থি ছিল। তাকে বলা হল, ‘চালিয়ে যাও, তোমার যত ইচ্ছে মাংস খাও!’
(চমৎকার! রেভেলেশনের প্রথম পশুর পা ছিল ভালুকের মতো। ১৩-২)
৭-৬ “তারপর আমি আমার সামনে আরেকটি জন্তুর দিকে তাকালাম। এটি ছিল একটি চিতা বাঘের মতো দেখতে কিন্তু এর পিঠে চারটি ডানা ছিল। ডানাগুলি ছিল পাখির ডানার মতো এবং জন্তুটির চারটি মাথাও ছিল। একে কর্ত্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেওয়া হল।
(অদ্ভুত, অস্বাভাবিক, চমকে যাওয়ার মতো তথ্য! প্রথম পশুর যেমন বর্ণনা দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনভাবেই সব মিলে যাচ্ছে! মাথা যাদের অল রেডি গুলিয়ে গেছে তাদের জন্য সেই লাইনটাই তুলে দিলাম-
১৩-২ যে পশুটিকে আমি দেখলাম, তাকে দেখতে একটা চিতা বাঘের মতো। তার পা ভাল্লুকের মতো, তার মুখটা সিংহের মুখের মতো।)
৭-৭ “তারপর, আমি আমার স্বপ্ন দর্শনে চতুর্থ জন্তুটিকে দেখলাম। এই জন্তুটি ছিল বিভীষিকাময়, ভয়ঙ্কর এবং ভীষণ শক্তিশালী। এটির ছিল বড় বড় লোহার দাঁত। এই জন্তুটি তার শিকারকে পিষে ফেলে খেয়ে নিল এবং তার শিকারের যা কিছু অবশিষ্ট ছিল তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিল। এই চতুর্থ জন্তুটি আমার দেখা সমস্ত জন্তুর চেয়ে আলাদা ছিল। এরও দশটি শিং ছিল।
(আবার সেই দশ শিং! Book of Revelation:
১৩-১ এরপর আমি দেখলাম সমুদ্রের মধ্য থেকে একটা পশু উঠে আসছে, তার দশটা শিং ও সাতটা মাথা; আর তার সেই দশটা শিং-এর প্রত্যেকটাতে মুকুট পরানো আছে।)
৭-৮ “আমি যখন ঐ শিংগুলিকে কাছ থেকে দেখছিলাম, ঐ শিংগুলির মধ্যে আরেকটি শিং গজিয়ে উঠল। এই শিংটি ছোট ছিল এবং এতে মানুষের চোখ ছিল। এই শিংটির একটি মুখ ছিল,যেটি দম্ভ প্রকাশ করে যাচ্ছিল। ওই শিংটি আরও তিনটি শিংকে উপড়ে ফেলল।
৭-১১ “যতক্ষণ আমি লক্ষ্য করছিলাম, ছোট শিংটি দম্ভ প্রকাশ করছিল। আমি দেখতেই থাকলাম যতক্ষণ না ঐ চতুর্থ জন্তুটিকে হত্যা করে তার শরীরকে বিনষ্ট করা হল এবং জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হল।
৭-১২ অন্য জন্তুদের কাছ থেকেও কর্ত্তৃত্বের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হল। কিন্তু তাদের কিছু সময়ের জন্য বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া হল।
৭-১৩ “আমি রাত্রে যে স্বপ্নদর্শন করলাম তাতে মানুষের মতো দেখতে এক ব্যক্তি আমার সামনে এলেন। তিনি আকাশের মেঘের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে সেই প্রাচীন রাজার কাছে এলেন এবং তারা তাঁকে তাঁর সামনে নিয়ে এলো।
৭-১৪ “সেই মানুষের মতো ব্যক্তিটিকে কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও সম্পূর্ণ শাসন ক্ষমতা দেওয়া হল। সমস্ত দেশ ও সমস্ত ভাষার লোকরা তাঁর উপাসনা করবে। তাঁর শাসন ও রাজত্ব চিরস্থায়ী হবে। তা কখনো ধ্বংস হবে না।
স্বপ্ন দেখার পর দানিয়েল প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে বুঝতে পারছিল যে এই স্বপ্নটা মামুলি কোন দুঃস্বপ্ন না; নিশ্চয়ই এর পেছনে গুঢ় কোন রহস্য আছে। পরের অংশে এর বর্ণনা আছেঃ-
৭-১৫ “আমি, দানিয়েল চিন্তিত ও বিব্রত হয়েছিলাম। এই স্বপ্নদর্শন আমার মনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল।
৭-১৬ যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আমি তাদের এক জনের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম এসবের অর্থ কি। তাই সে আমাকে এই সব ব্যাখ্যা করে বলল।
৭-১৭ সে বলল, ‘চারটি মহান জন্তু হল চারটি রাজত্ব। ওই চারটি রাজত্ব পৃথিবীতে আসবে।
৭-১৮ কিন্তু যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে এবং তাঁর অধিকারভুক্ত, তারা রাজত্ব পাবে এবং ঐ রাজত্ব চির কালের জন্য ভোগ করবে।’
৭-১৯ “তখন আমি জানতে চেয়েছিলাম চতুর্থ জন্তুটি কি ও তার অর্থ কি? চতুর্থ জন্তুটি ছিল সমস্ত জন্তুর থেকে ভিন্ন। ওটা ছিল ভয়ঙ্কর। এই জন্তুটির ছিল লোহার দাঁত ও পিতলের নখ। এই জন্তু তার শিকারকে পিষে ফেলে খেয়ে নিত এবং শিকারের অবশিষ্ট ভাগের ওপর দিয়ে মাড়িয়ে চলে য়েত।
৭-২০ এবং আমি ঐ চতুর্থ জন্তুটির মাথার দশটি শিং-এর কথা জানতে চেয়েছিলাম। আমি ঐ ছোট শিংটির ব্যাপারে জানতে চেয়ে ছিলাম যেটি পরে গজিযে উঠেছিল এবং তিনটি শিংকে উপড়ে ফেলেছিল। এই ছোট শিংটির চক্ষুসমূহ ছিল এবং একটি মুখ ছিল যেটি সারাক্ষণ দম্ভ প্রকাশ করত। এটি অন্যদের চেয়ে ভয়ঙ্কর দেখতে ছিল।
৭-২১ আমি যখন দেখেই যাচ্ছিলাম তখন এই ছোট শিংটি ঈশ্বরের বিশেষ লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল এবং তাদের পরাজিত করল।
৭-২২ এটা চলতে লাগল যতক্ষণ না প্রাচীন রাজা এলেন এবং ঈশ্বরের বিশেষ লোকদের স্বপক্ষে রায় দিলেন। প্রাচীন রাজার ঘোষিত বিচার তাঁর বিশেষ লোকদের তাদের রাজত্ব পেতে সাহায্য করল।
৭-২৩ “তিনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন: ‘চতুর্থ জন্তুটি হল চতুর্থ রাজ্য যা পৃথিবীতে আসবে। এই রাজ্য অন্য সব রাজ্যের থেকে আলাদা হবে এবং এটি সারা পৃথিবীকে গ্রাস করবে।
৭-২৪ দশটি শিং হল দশ জন রাজা যারা আসবে। এদের পরে আরেকজন রাজা আসবে যে আগেকার রাজাদের থেকে আলাদা হবে। সে অন্য তিন জন রাজাকে পরাস্ত করবে।
৭-২৫ এই রাজা পরাত্পরের বিরুদ্ধে বলবে এবং ঈশ্বরের বিশেষ লোকদের নির্য়াতন করবে। এই রাজা নিরূপিত সময়ের এবং ব্যবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করবে। ঈশ্বরের বিশেষ লোকরা ঐ রাজার অধীনে ৩ ১/২ বছর কাটাবে।
(মাস যদি ৩০ দিনে ধরি, তাহলে বছর হয় ১২*৩০=৩৬০ দিনে।
সেই হিসেবে ৩ ১/২ বছর = ৩.৫*৩৬০ = ১২৬০ দিন।
ব্যাপারটা মজার না? )
৭-২৬ “‘কিন্তু স্বর্গের বিচারসভা বিচার করবে এবং তার ক্ষমতা কেড়ে নেবে। তার রাজ্য ধ্বংস করা হবে এবং সেটি চির কালের জন্য শেষ হয়ে যাবে।
৭-২৭ তারপর ঈশ্বরের বিশেষ লোকরা পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের লোকেদের ওপর কর্ত্তৃত্ব করবে। অন্য সমস্ত রাজ্যের লোকরা এদের সম্মান ও সেবা করবে।’
৭-২৮ “এটাই ছিল স্বপ্নদর্শনের ব্যাখ্যার শেষ। আমি, দানিয়েল এত ভীত হয়েছিলাম য়ে ভয়ে আমার মুখ সাদা হয়ে গিয়েছিল। এবং আমি যা দেখেছিলাম ও শুনেছিলাম তা অন্য লোকদের জানাইনি।”
দানিয়েল স্বপ্ন দেখলেন, তার ব্যাখ্যাও পেলেন। কিন্তু সেটা কাউকে জানালেন না। কেন?
To be continued...