খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে সোহাগ গাজীর। অভিষেকে ৯.৫ ওভার বল করে চারটি উইকেট তুলে নিয়েছেন বরিশালের এই অফস্পিনার। সোহাগ খরচ করেছেন ২৯ রান, ইকোনমি রেট ২.৯৪। ওয়ানডে অভিষেকে এর আগে সেরা পারফরম্যান্স ছিল রুবেল হোসেনের। ২০০৯ সালে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫.৩ ওভার বল করে চার উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার। তবে তিনি খরচ করেছিলেন ৩৩ রান, ইকোনমি রেট ৬.০০।
মিরপুরে দুই সপ্তাহ আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সোহাগের। ওই ম্যাচে তিনি ৭৪ রানের বিনিময়ে ছয়টি উইকেট নেন। টেস্ট অভিষেকে এর আগে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স ছিল মানজারুল ইসলামের। ২০০১ সালে তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮১ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন।
সাকিবকে খুবই মিস করলাম। তবে তাতেও দুঃখ নেই- জয় বাংলাদেশের। কুপোকাত ওয়েস্ট ই্ন্ডিজ
হাঁটতে হাঁটতে থমকে গেলেন মুশফিকুর রহিম। একটু ভেবে দীর্ঘশ্বাস, ‘নাহ্, মনে করতে পারছি না...।’
একসঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন দুজন, ওয়ানডে অভিষেকও একই ম্যাচে। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে। ক্রমেই দুজনই হয়ে উঠেছেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চোট-টোটে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস বলতে গেলে নেই-ই। মুশফিকুর তাই মনেই করতে পারছিলেন না, সাকিব আল হাসানকে ছাড়া সর্বশেষ কোন ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন! সেটিই স্বাভাবিক, সাড়ে চার বছর তো আর কম সময় নয়!
সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিল ২০০৮ সালের ৪ জুলাই, পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপে। অভিষেক ম্যাচ থেকে টানা ৪৮টি ওয়ানডে খেলেছেন। এরপর ২০০৮ সালের জুনে ঢাকায় কিটপ্লাই কাপ এবং এর পরপরই পাকিস্তানে এশিয়া কাপে খেলেননি এইচএসসি পরীক্ষার কারণে। ওটাই শেষ, এরপর বাংলাদেশ যে ৭৮টি ওয়ানডে খেলেছে, সব কটিতেই ছিলেন সাকিব। ক্রমে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা বোলার, অন্যতম সেরা ফিল্ডার। নেতৃত্ব পেয়েছেন, দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দুটো সিরিজ জয়ে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই) নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে, দেশকে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিতর্কিতভাবে আবার নেতৃত্ব হারিয়েছেন। পারফরম্যান্সে সেটার প্রভাব পড়েনি। ধীরে ধীরে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। একসময় যেখানে পৌঁছানোর শুধু স্বপ্নই দেখতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, এখনো দেখেন বাকিরা!
তাঁর অভিষেকের পর ১৩৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, ১২৬টিতেই ছিলেন সাকিব। পারফরম্যান্স নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ওঠেনি। দলে এমনই অপরিহার্য হয়ে ছিলেন যে, বিশ্রামের অবকাশই পাননি। আধুনিক ক্রিকেটাররা যেখানে নেটে বা ওয়ার্মআপের সময়ই হরহামেশা চোট বাঁধাচ্ছেন, সেখানে চোটও বাধা হতে পারেনি সাকিবের। যন্ত্রের মতো খেলে গেছেন। টানা চলতে থাকলে যন্ত্রও একসময় বিকল হয়, কার্যক্ষমতা কমে যায়। তিনি তো রক্ত-মাংসের মানুষ, একটা সময় থামতে হতোই। সাকিবও থামলেন। যে চোট তাঁকে থামাল, সেটাও যেন একদিক থেকে মহিমান্বিত করেছে তাঁকে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় আঘাত পেয়ে নয়, টানা খেলা আর ব্যাটিং-বোলিংয়ে দলের বোঝা টানতে টানতেই তো এই চোট!
অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরি সাকিবের (৩৬৩৫ ও ৫)। কমপক্ষে ৫০০ রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ও (৩৫.৬৩)। উইকেট শিকারে সাকিবের (১৬০) একটু ওপরে আছেন শুধু আবদুর রাজ্জাক (১৬৩)। এমনকি উইকেটকিপার ছাড়া বাকি ফিল্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাচও নিয়েছেন সাকিব (৩৫টি)! দলের ‘হূৎপিণ্ডকে’ হারিয়ে যেন অনেকটা অসহায় শোনাল অধিনায়ক মুশফিকের কণ্ঠ, ‘শুধু ওয়ানডে কেন, যেকোনো ফরম্যাটেই সাকিবের মতো একজনের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। সাকিব থাকলে হয়তো উইকেট বুঝে আমরা একজন ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলতে পারতাম। এখন ব্যাটসম্যানদের বেশি দায়িত্ব নিতে হবে, বিকল্প একটু কমে যাওয়ায় বোলারদেরও তা-ই। সন্দেহ নেই, বড় একটা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।’
সাকিব নেই মানে একই সঙ্গে দলের সেরা ব্যাটসম্যান ও বোলার নেই। পরিবর্ত খুঁজতে গিয়ে তাই গলদঘর্ম হতে হয়েছে নির্বাচকদেরও। প্রধান নির্বাচক আকরাম খানও সেটিই বললেন, ‘সাকিবের মতো একজনের তো আসলে বিকল্প হয় না। একজনের মধ্যে এত কিছু আর কোথায় পাব আমরা! বিকল্প হিসেবে আমাদের ভাবনায় ছিল একজন অলরাউন্ডার (জিয়াউর রহমান) বা একজন ব্যাটসম্যান। টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করেছে, একজন ব্যাটসম্যান প্রয়োজন। তাই আমরা ব্যাটসম্যানই নিয়েছি।’
স্পিন কোচ সাকলায়েন মুশতাক অবশ্য এর মাঝেও একটা ইতিবাচক দিক খুঁজে পাচ্ছেন, ‘সাকিব গ্রেট অলরাউন্ডার, গ্রেট ক্রিকেটার। না থাকাটা অবশ্যই ক্ষতি, অন্যদের জন্য আবার এটা সুযোগ নিজেদের মেলে ধরার।’ তবে আসলে এটি অনন্যোপায় হয়ে বাস্তবতা মেনে নেওয়া, এভাবে ভাবা ছাড়া আর তো কোনো উপায় নেই!
বাংলাদেশ শিবিরে হাহাকারটা তাই কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উল্লাসটাও গোপন থাকছে না। আন্দ্রে রাসেল তো সাকিব না থাকার সুবিধাটা ভালোমতোই কাজে লাগানোর কথা সরাসরিই বললেন সেদিন।
মুশফিক ঠিকই বলেছেন, বড় চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৬