পাত্রপক্ষ যৌতুক বিরোধী । কারন তারা সমাজপতি , গরীব স্কুল শিক্ষকের কাছে কেন হাত পাতবে। প্রেস্টিস বলে একটা কথা আছে না। তাদের এমন রূপসী -গুনবতী মেয়ে হলেই চলবে। এটা ভলো কথা। তাদের এমন যৌতুক বিরোধী অবস্থানে যে কোন প্রগতিশীলই সাধুবাদ জানাবে।
পাত্রপক্ষের ভিআইপি গেষ্টরা থাকবে বিয়ে অনুষ্ঠানে। আর তাই পাত্রের অভিবাকদের কড়া নির্দেশ কনের বাবা যেন খাওয়ার কোালিটি মেইনটেইন করে এবং পাত্রপক্ষের 450 জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করে। পাছে তাদের আবার জাত না যায় গরীব ঘরে বিয়ে করে!
এই যে পাত্র পক্ষ 450 জনের খাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্ট এর শর্ত জুড়ে দিল পাত্রী পক্ষকে এটা কি যৌতুক নয়? নিশ্চয়ই এটা যৌতুকের পযর্ায়ে পড়ে। গত পরশু বাংলাদেশ ত্যাগের সময় বিমানের জানালা দিয়ে যখন সাদা মেঘে ভেসে আসছিলাম কানাডাতে তখনই আমার আঙ্কেলর ধারদেনায় জর্জরিত অভাবী ও করুন চেহারা (কিন্তু রুচিশীল ও হাসিখুশি) আমাকে বারবার কষাঘাত করছিল। হায়! সমাজ আলগা ফুটানি আর কত দেখাবি? 450 জনের ভালো মন্দ খাওয়ার ব্যবস্থা আর কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন যে একজন সামান্য বেতনের শিক্ষকের পক্ষে কতটা দূরুহ তা পাত্র পক্ষকে কে বোঝাবে!
1980 সালের যৌতুক নিরোধ আইনানুযায়ী যৌতুক বলতে, 'বিবাহের একক্ষ কর্তৃক অপরপকে অথবা বিবাহের কোনো একপক্ষের পিতামাতা বা অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অপরপক্ষকে বিবাহকালে বা বিবাহের আগে বা পরে যেকোনো সময় বিবাহের পণ হিসেবে প্রত্য ক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত বা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ যেকোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বোঝায়।
তবে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বা শরিয়ত মতে প্রদেয় দেনমোহর এর অন্তর্ভুক্ত নয়'। এ সংজ্ঞার ব্যাপক পরিধিতে নগদ অর্থ বা অন্য কোনো সম্পদ, প্রকাশ্যে বা গোপনে এবং বিবাহের সময় বা পরে সর্ব প্রকার লেনদেন যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। বৈবাহিক ক্ষেত্রে বরপক্ষ ও কনেপক্ষের মধ্যে আর্থিক ও বৈষয়িক লেনদেন বিশ্বের বহু সমাজে প্রচলিত রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। সাধারণ ভাষায় এটিই আমাদের সর্বনাশ-যৌতুক প্রথা। এই ঘুণেধরা সমাজে নারীর সম্মান, সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও আত্মউন্নতি লাভে বড়ো ধরনের প্রতিবন্ধক হচ্ছে যৌতুক কুপ্রথাটি। অমানবিক এ প্রথাটির শেকড় সমাজের গভীরে প্রোথিত বলেই এর পূর্ণাঙ্গ উচ্ছেদ কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সর্ব ঐক্যের কাছে যতো কঠিনই হোক না কেন তা নিরোধ কিংবা প্রতিরোধ করা তেমন কোনো ব্যাপার নয়।
এই বিষয়ে আমার আকুল আবেদন, আমরা যারা সমাজ সচেতন বলে দাবি করি তাদের কাছে, তারা যেন স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি আজ এবং এখন থেকেই। আমাদের মনে রাখতে হবে 'সমাজের সকলে কাজ করে না, করতে হয় না, প্রথমে 1/2 জনেই আরম্ভ করে; পরবতর্ী সময়ে অন্যসব সৃষ্টিশীল মানুষরা এ পতাকাতলে সমবেত হয়ে কাজের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে কাঙ্তি লক্ষ্যে পেঁৗছে দেয়। সুতরাং আমরা এখন থেকে এই যৌতুকপ্রথার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে জোরালো আন্দোলন শুরু করবো ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ তথা সমগ্র দেশ জুড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০