somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজে প্রচলিত শিরকসমূহ - পর্ব ৫

১১ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের পর ...
সমাজে প্রচলিত কতিপয় শিরক (৫ম ভাগ)
আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জে ও শহর-বন্দরে কতিপয় শিরক, বিদ'আত ও নানাবিধ কুসংস্কার ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কুসংস্কারজনিত এমন শিরক রয়েছে যা এসব দেশের লোকজন ধর্মীয় বিধান বা নিয়ম মনে করেই পালন করে থাকে। ধারাবাহিক এ আলোচনার পঞ্চম পর্ব থেকে আসুন জেনে নেই তেমনি আরো কিছু শির্‌ক সম্পর্কে।

মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তনঃ সিলভা, কোয়ান্টাম বা অন্য কোন মেথডের (পদ্ধতি) দ্বারা মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো এবং সকল সমস্যার সমাধান লাভ করার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করার কথা বলা।

কপালে টাকা স্পর্শ করে তা সম্মান করাঃ টাকা-পয়সা মানুষের সম্পদ। তা মানুষের জীবনের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই টাকা-পয়সা মানুষের খাদেম। কিন্তু মানুষ টাকার খাদেম বা গোলাম নয়। সম্পদের সম্মান হচ্ছে তাকে সংরক্ষণ করা, তাকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ জ্ঞান না করা, পায়ের নিচে ফেলে দলিত-মথিত না করা। কিন্তু যে মাথা ও কপাল ঠেকিয়ে আল্লাহ্‌র ইবাদত করা হয় এবং তাঁকে সম্মান জানানো হয়, সেই কপালে টাকা স্পর্শ করে টাকাকে সম্মান করা টাকাকে পূজা করারই শামিল। এ কাজটি অনেক মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। দোকান খোলার পর প্রথম বিক্রি হলেই তারা এ কাজটি করে থাকে। [ড. মুয্যাম্মিল আলী, শিরক কী ও কেন (ঢাকা : তাওহীদ পাবলিকেশন্স), পৃ. ৩৫০।]

গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাবঃ অনেকের ধারণা মানুষের ভাল-মন্দ, বিপদ-আপদ, উন্নতি-অবনতি ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে হয়। কেউ বিপদে পড়লে বলা হয়, 'এ ব্যক্তির ওপর শনি গ্রহের প্রভাব পড়েছে'। কারো আনন্দের খবরে বলা হয়, 'এ ব্যক্তি মঙ্গল গ্রহের সুনজরে আছে'।

চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের প্রভাবঃ অনেকের ধারণা চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ মানুষের ভাল-মন্দ, জন্ম-মৃত্যু, বিপদ-আপদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

শিরকের গন্ধযুক্ত নাম ও উপাধিঃ যে সকল নাম বা সম্বোধনে শিরকের সংস্পর্শ পাওয়া যায়, সেগুলোকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। জাহেলী যুগে মানুষ নিজের সন্তান-সন্ততির নাম সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদির নামের সাথে সম্পৃক্ত করে রাখত। যেমন- আবদে শামস্ বা সূর্যের গোলাম, আবদে মানাফ বা মানাফের গোলাম ইত্যাদি। সন্তানের নামকরণে নবী ও পীর-আওলিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। যেমন- গোলাম মুছত্বফা (মুছত্বফার গোলাম), আব্দুন্নবী (নবীর দাস), আব্দুর রাসূল, আলী বখশ (আলী (রাঃ)-এর দান), হোসেন বখশ (হুসাইন (রাঃ)-এর দান), পীর বখশ (পীরের দান), মাদার* বখশ (মাদারের দান), গোলাম মহিউদ্দীন (পীর মহিউদ্দীনের গোলাম), আব্দুল হাসান (হাসানের গোলাম), আব্দুল হুসাইন (হুসাইনের গোলাম), গোলাম রাসূল (রাসূলের গোলাম), গোলাম সাকলায়েন ইত্যাদি নাম রাখা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ধরনের নাম রাখতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আবার পীর বা ওলীকে এমন কোন উপাধিতে সম্বোধন করা উচিত নয় যা অর্থগত দিক দিয়ে আল্লাহ তা'আলার জন্য প্রযোজ্য। যেমন- গাউছুল আযম (সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী), গরীবে নেওয়াজ (গরীবরা যার মুখাপেক্ষী), মুশকিল কোশা (যার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়), কাইয়ূমে যামান (যামানা কায়েম করেছেন যিনি) ইত্যাদি।

বিপদে পড়ে জিন, ফেরেশতা, পীর, ওলী-আওলিয়াদের ডাকাঃ দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ মূর্খ, পীর ও মাযার পূজারী অনেক লোককে দেখা যায় বিপদে-আপদে, রোগে-শোকে আল্লাহ তা'আলাকে বাদ দিয়ে পীর, ওলী, জিন ও ফেরেশতাদের আহবান করতে থাকে। যেমন- 'ইয়া গাওছুল আযম বড় পীর আব্দুল কাদের জীলানী', 'ইয়া খাজা বাবা', 'ইয়া সুলতানুল আওলিয়া', 'হে পীর কেবলাজান', 'হে জিন', ... আমাকে রক্ষা করুন, আমাকে বিপদ হ'তে বাঁচান, আমার মাকছূদ পূরা করুন, সন্তান দিন ইত্যাদি। কোন কোন মূর্খলোক বালা মুছীবতের সময় বুযুর্গ লোকদের উদ্দেশ্যে দো'আ করে, ফরিয়াদ জানায়। এভাবে গাইরুল্লাহ্কে ডাকা এবং তাদের কাছে নিজের ফরিয়াদ পেশ করা, তা কাছ থেকে হোক আর দূর থেকেই হোক।

পীর, ওলী-আওলীয়াদের স্মৃতিচিহ্নের তা'যীম করা এবং এদের কাছে সাহায্য চাওয়াঃ অনেকে পীর, ওলী-আওলিয়াদের স্মৃতিচিহ্নকে এমন তা'যীম করে যে তা শিরকের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পীর হয়তো কোন গাছের নীচে বসতেন, বিশ্রাম করতেন। পীরের মৃত্যুর পর মুরীদরা ঐ গাছ বা পাথরের গোড়ায় আগরবাতি, মোমবাতি, ধূপ ইত্যাদি জ্বালায়, মীলাদ পড়ায়, বিপদ মুক্তির জন্য ফরিয়াদ জানায়।

* 'মাদার'-কে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের হিন্দুরা বড় ঋষি বলে জানে।

ইন্‌শাআল্লাহ আগামী পর্বে সমাপ্য

রচনাঃ নূরজাহান বিনতে আব্দুল মজিদ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:৪২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×