পূর্বের পর ...
সমাজে প্রচলিত কতিপয় শিরক (৪র্থ ভাগ)
আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জে ও শহর-বন্দরে যেসব শিরক, বিদ'আত ও নানাবিধ কুসংস্কার ব্যাপকভাবে প্রচলিত তা নিয়ে গত তিন পর্ব থেকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা চলছিলো। এগুলোর মধ্যে কুসংস্কারজনিত এমন এমন সব শিরক রয়েছে যা এসব দেশের লোকজন ধর্মীয় বিধান অথবা নিয়ম মনে করেই পালন করে থাকে। আজ উপস্থাপন করছি তার চতুর্থ পর্ব।
গায়রুল্লাহর নামে যিকির বা অযীফাঃ আল্লাহ্ যিকিরের ন্যায় কোন নবী বা রাসূল, পীর, ওলী-আওলিয়া, বুযুর্গ, আলিমের নাম জপ করা, বিপদে পড়লে তাদের নামের অযীফা পড়া। যেমন- 'ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন', 'ইয়া রাসূলাল্লাহ', 'নূরে রাসূল, নূরে খোদা', 'হক বাবা, হক বাবা' ইত্যাদি।
কামেল পীরের গোনাহ নেইঃ খোদা পাক, কামেল পীরও পাক। তাদের কোন গোনাহ নেই। তারা নিষ্পাপ। এ ধরনের কথা বলা ও বিশ্বাস করা।
পীরের পায়ে সিজদা করা বা কদমবুসি করাঃ সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পীরের পায়ে সিজদা করা বা নেক মাকছূদ পূরণের জন্য, রোগমুক্তির নিয়তে পীরের পা চাটা, পায়ে চুমু খাওয়া, দাড়ি চাটা, দাড়িতে চুমু খাওয়া, ব্যবহার্য থালাবাটি বা অন্য কোন বস্ত্ত চাটা বা চুমু খাওয়া, মাযারে চুমু খাওয়া।
আল্লাহ্ সত্তার সাথে মিশে যাওয়াঃ অনেকের ধারণা মুরীদ যখন 'ফানাফিল্লাহ' পর্যায়ে পৌঁছে, তখন সে আল্লাহ্ সত্তার সাথে মিশে বিলীন হয়ে যায় এবং তাঁর পৃথক কোন অস্তিত্ব থাকে না। খাওয়া, ঘুম, স্ত্রী সহবাস সহ যাবতীয় কাজকর্ম তখন আর নিজস্ব থাকে না। এগুলো সব আল্লাহ্ হয়ে যায় অর্থাৎ এসব কাজ আল্লাহ নিজেই করেন (নাঊযুবিল্লাহ)।
আল্লাহ যা করান, তাই করিঃ একদল ফকীর বলে, আল্লাহ যা করান, তা-ই করি। আল্লাহ ছালাত আদায় করান না, তাই আদায় করি না, আল্লাহ গাঁজা টানাচ্ছেন, তাই টানি। তাক্বদীরে ছালাত থাকলে তো আদায় করব।
দিলে দিলে ছালাত পড়িঃ অনেক পীর ছালাত, ছওমের ধার ধারে না; কিন্তু খুব সাধনা করে। দু'তিন দিন পর পর একটু খায়। কম কথা বলে। লোকজনের সাথে কম মিশে। দিনের বেশিরভাগ সময় চুপ করে ধ্যান-মগ্ন অবস্থায় বসে থাকে। এরা বলে, আমরা দিলে দিলে ছালাত পড়ি। তোমরা মাত্র ৫ ওয়াক্ত পড়, আর আমরা সারা দিন-রাতই ছালাত পড়ি।
সীনায় সীনায় মা'রেফতীঃ পীর বা দরবেশ দাবীদার একদল লোক বলে থাকে, 'কুরআন শরীফ মোট ৪০ পারা। ৩০ পারায় যাহেরী ইলমের বিষয় আছে। বাকি ১০ পারা মা'রেফতী বিদ্যায় ভরপুর। এ ১০ পারা আমরা সীনায় সীনায় পেয়েছি। শরী'আতের আলেমরা এগুলোর খবর রাখেন না।
শরী'আতের ইত্তেবা সর্বাবস্থায় ফরয নয়ঃ অনেকের ধারণা, মুরীদ যখন মা'রেফাতের উচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়, তখন তার জন্য শরী'আতের হুকুম-আহকাম, ছালাত, ছওম ইত্যাদি মাফ হয়ে যায়।
ইনশাআল্লাহ চলবে ...
রচনাঃ নূরজাহান বিনতে আব্দুল মজিদ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৭