মহান আল্লাহ তাঁরই ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন {দেখুন সূরা আয যারিয়াত (৫১), আয়াত ৫৬} এবং তাদের হেদায়াতের জন্য ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী ও রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। নাযিল করেছেন কিতাবসমূহ, যাতে মানবজাতি তাঁর স্পষ্ট পরিচয় লাভ করে তাঁর ইবাদত করে এবং সমস্ত প্রার্থনা নিবেদন যেন তাঁরই নিকটে হয়। কেননা এসবের বিপরীত কর্মকান্ড ও বিশ্বাসই শিরক তথা তাঁর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করা।
আল্লাহ্র জাত বা সত্তা, তাঁর নাম ও গুণাবলী সমূহ এবং তাঁর ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক সাব্যস্ত করাই হচ্ছে শিরক। শিরক হল ক্ষমার অযোগ্য জঘন্যতম গোনাহ। এ শিরক মিশ্রিত যে কোন আমল ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন এবং আল্লাহ্র নিকটে তা প্রত্যাখ্যাত। কেউ শিরক করে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে এই শিরকই তার ঈমান ও জীবনের যাবতীয় সৎকর্মকে নিষ্ফল করে দেবে। এ ধরনের লোকদের ঈমান ও আমলের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, '(হে নবী, এদের) তুমি বলো, আমি কি তোমাদের এমন লোকদের কথা বলবো, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ (হয়ে পড়েছে); (এরা হচ্ছে) সেসব লোক যাদের সমুদয় প্রচেষ্টা এ দুনিয়ায় বিনষ্ট হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে মনে ভাবছে, তারা (বুঝি) ভালো কাজই করে যাচ্ছে।' {সূরা কাহাফ(১৮), সূরা ১০৩-১০৪}। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, '(এবার) আমি তাদের সে সব কর্মকান্ডের দিকে মনোনিবেশ করবো, যা তারা (দুনিয়ায়) করে এসেছে, তখন আমি তা (তাওহীদ শূন্য হওয়ার কারণে) উড়ন্ত ধুলিকণার মতোই (নিষ্ফল) করে দেবো' {সূরা আল ফুরক্বান(২৫), আয়াত ২৩}।
আল্লাহ্র তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ পৃথিবীতে আগমনকারী প্রতিটি নবী বা রাসূল সর্বপ্রথম তাওহীদের দিকেই আহবান করেছেন এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য বারবার তাকিদ জানিয়েছিলেন {সূরা আন্ নাহ্ল(১৬), আয়াত ৩৬}। তাওহীদের মর্মবাণী প্রচারের জন্য জীবনের সবচেয়ে বেশী সময় অতিবাহিত করেছেন নূহ (আঃ)। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-ও এজন্য অশেষ কষ্ট স্বীকার করেছেন। এ বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এ সম্পর্কে খুব কমই গুরুত্বারোপ করা হয়। এমনকি ইসলামের অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় এ বিষয়ে তেমন লেখালেখিও হয় না। ফলে তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তাওহীদের পরিপন্থী বিষয় শিরক মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার লাভ করেছে। অথচ ভয়াবহ ও জঘন্যতম পাপ শিরক থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য। শিরকের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'অথচ (হে নবী,) তোমার কাছে এবং সেসব (নবীদের) কাছেও যারা তোমার আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এ (মর্মে) ওহী পাঠানো হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহ তায়ালার সাথে (অন্যদের) শরীক করো তাহলে অবশ্যই তোমার (সব) আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থদের দলে শামিল হবে।' {সূরা আয যুমার(৩৯), আয়াত ৬৫}। পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে {সূরা আল বাক্বারাহ, আয়াত ২২; সূরা আন্ নিসা, আয়াত ১১৬; সূরা আল মায়িদাহ, আয়াত ৭২; সূরা আল আন'আম, আয়াত ৮৮}।
এ কারণে বান্দার ওপর সর্বপ্রথম অপরিহার্য বিষয় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তাওহীদ সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করা। নিজের ঈমান, আক্বীদা ও যাবতীয় আমল শিরক মুক্ত রাখা। শিরক নামের মহা অপরাধ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান রাখা। অন্যথা যেকোন সময় শয়তানের খপ্পরে পড়ে যে কারো ঈমান ও জীবনের সৎকর্মের যাবতীয় সাধনা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। এহেন পরিণতির হাত থেকে যেমন নিজেকে রক্ষা করা আবশ্যক, তেমনি এত্থেকে অন্য সকল মুসলমানকেও রক্ষা করা যরূরী। নিম্নে আমাদের বাস্তব জীবনে ও সমাজে প্রচলিত নানা ধরনের শিরক সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
সমাজে প্রচলিত কতিপয় শিরক (১ম ভাগ)
আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জে ও শহর-বন্দরে কতিপয় শিরক, বিদ'আত ও নানাবিধ কুসংস্কার ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কুসংস্কারজনিত এমন শিরক রয়েছে যা এসব দেশের লোকজন ধর্মীয় বিধান বা নিয়ম মনে করেই পালন করে থাকে। যেমন-
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ক্ষমতায় বিশ্বাস করাঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জগতের উপর কর্তৃত্ব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা। যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, সে অলৌকিক শক্তির অধিকারী এবং অলৌকিকভাবেই কোন ঘটনা সংঘটিত করতে, বিপদগ্রস্তকে বিপদমুক্ত করা, আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দান, সন্তানহীনকে সন্তান দিতে পারে, তাহলে সে মুশরিক বলে গণ্য হবে।
জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্তঃ জ্যোতির্বিদ্যা হল সৌরজগতের বিভিন্ন অবস্থা পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা। জ্যোতির্বিদরা বলে থাকেন যে, অমুক নক্ষত্রের অমুক স্থানে অবস্থানের সময়ে যে ব্যক্তি বিবাহ করবে তার অমুক অমুক জিনিস অর্জিত হবে। যে ব্যক্তি অমুক নক্ষত্রের অমুক জায়গায় অবস্থানের ক্ষণে সফরে থাকবে সে ভাগ্যবান কিংবা ভাগ্যহীন হবে। বর্তমানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের অর্থহীন-আজগুবি খবরাখবর পরিবেশন করা হয়। আর এগুলোর আশে-পাশে বিক্ষিপ্ত তারকারাজি, সরলরেখা, বক্ররেখা ইত্যাদি ধরনের আঁকা-বাঁকা রেখা অংকিত থাকে। মূর্খ ও দুর্বল ঈমানের কোন কোন মানুষ বিভিন্ন সময় জ্যোতিষীদের নিকট গমন করে থাকে এবং তাদেরকে স্বীয় ভবিষ্যৎ ও বিবাহ-শাদী ইত্যাদি সম্পর্কেও প্রশ্ন করে থাকে।
ইনশাআল্লাহ চলবে ...
রচনাঃ নূরজাহান বিনতে আব্দুল মজিদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ রাত ৯:৫৯