আপনি যতোদিন সার্ভিস দিতে পারবেন ততোদিন আপনাকে সবাই ভালো বলবে- ভালোবাসবে। সারাদিন একজন মেয়ে পুরোটা সংসার সামলায়- বাচ্চা সামলায়- বাজার করে- বাইরে জব করে। এরপরে উনিশ থেকে বিশ হলেই আপনারা বলেন তুমি কি একাই সংসার করো নাকি আশেপাশে অন্য নারীরা সংসার করেনা? কিন্তু গিয়ে দেখেন অন্য নারীদের স্বামীরাও তাদের সেইম কথাটাই বলে। কিন্তু কোনো মেয়ে যদি তার স্বামীকে বলে, অমুকের স্বামী বাড়ি কিনেছে- গাড়ি কিনেছে- বৌকে জুয়েলারি গিফট করেছে- আইফোন গিফট করেছে তখন আপনাদের সহ্য হয়না! বলেন, ওহ তুমিও সেই ব্যাটার বৌ এর মতোই লোভী! আপনি অন্যের বউদের উদাহরণ দিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত ছোটো করেন কিন্তু সে উদাহরণ টানতে গেলেই আপনার পৌরষত্বে লাগে!
এখন সারাদিন এতো কষ্ট করার পরেও এই সংসারে সে তার কাজের কোনো স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন পায়না। দিনশেষে ক'জনইবা বলেন- তুমি অনেক করছো একটু বিশ্রাম নাও। আবেগে ক'জনইবা মাথায় একটু হাতটা বুলিয়ে দেন? সেটাতো নয়ই বরং উল্টা বলেন, ওমা তোমার সংসার তুমি করবা না অন্য কেউ এসে করবা নাকি? তোমার বাচ্চা তুমি পালবা না তো কে এসে পালবে?
এইযে শুধু কাজের বেলাতেই তোমার সংসার তোমার সংসার বলেন কিন্তু কোন কারণে মনোমালিন্য হলে এই তোমার সংসারটা তখন আপনার হয়ে যায়। বলেন, বের হয়ে যাও বাসা থেকে এটা আমার বাসা! বাচ্চাদের অভিভাবক এর অধিকার পেতে আদালতে যান! কি পরিমান হিপোক্রেট আপনারা ভেবে দেখেন!
দিনশেষে একটা জিনিস ভুলে যান আপনারা যে, এই শরীরটাও রক্ত-মাংসের। সে শরীরটাও বিশ্রাম চায়! জব, সংসার,বাচ্চা এসবের বেড়াজালে এই মানুষটাকে কতটুকু সাপোর্ট দেন? নাইবা দিলেন কিন্তু সার্ভিস আশা করেন ১০০%! জব আপনারাও করেন কিন্তু দিনশেষে বাসায় এসে পা দুলিয়ে টিভি দেখতে পারেন- টেবিলে রেডি খাবার খেতে পারেন। কিন্তু যে মেয়েরা জব করে তারা সব সামলে অফিস যায় এবং অফিস থেকে এসেও রান্না বাচ্চা সব সামলায়। সবাই ঘুমিয়ে গেলে সে ঘুমাতে যায় তবুও সে তাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়, কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারোনা! অথচ আপনারা কজন তাকে একটু রান্নাঘরে সাহায্য করেন? বাচ্চাদের সামলাতে সাহায্য করেন?
কাজের সাহায্যকারীর বেতন ও আজ পাঁচ হাজারের কম নয় কিন্তু ঘরের বৌকে আপনারা অনেকেই কাজের সাহায্যকারীর চেয়ে নীচে নামায়ে ফেলেন। কবুল বললাম, ব্যাস সে এখন আমার আর আমার পরিবারের বিনা বেতনে সার্ভিস দিবে। সার্ভিস দিলেই হবেনা সবার মন রক্ষা করে চলতে হবে। শ্বাশুড়ি - ননদ- দেবর সবাইকে খুশি রাখতে হবে। বাচ্চা মানুষ করতে হবে! এসবের চাপে একটা মেয়ের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তার শখ- আহ্লাদ - স্বপ্ন- ভালোবাসা- আবেগ! অনেক কর্মজীবি মেয়েদের বেতনটাও তাদের কাছে রাখার অনুমতি নেই। বেতন পেয়েই স্বামী বা শ্বাশুড়ির হাতে তুলে দিতে হয়!
আমাদের সমাজের বিবাহিত মেয়েগুলোরে নিয়ে একটা জরিপ করেন তখন বুঝবেন বিয়ের পর একটা মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি এবং স্বামীর ঘরে কতটুকু কাজ করার মেশিন মনে করে আর কতটুকু মানুষ মনে করে!
ত্যাগ খালি একজনেই করবে এমনি নিয়ম বানায়ে দিয়েছেন আপনারা। সবাই শাবানার মতো বউ চায়- যে সব কিছু নীরবে হজম করে স্বামী আর তার পরিবারের টর্চার সহ্য করেও সেখানে পড়ে থাকবে। আর সবাইকে ক্ষমা করবে।
জীবন একটাই। নিজের মতো করে বাঁচার জন্য আল্লাহ কাউকে দুবার পৃথিবীতে পাঠাবেনা। পাশের মানুষটা যেদিন ক্ষেপে যাবে সেদিন সে বিদ্রোহ করবেই। তখন দেখবেন আগ্নেয়গিরি থেকে কিভাবে লাভার বিস্ফারণ ঘটে! আপনি যখন তার কাছ থেকে শ্রদ্ধা- ভালোবাসা বঞ্চিত হবেন এবং সেই মানুষটা যখন আপনাকে ছেড়ে যাবে তখন বুঝবেন সেই মানুষটার মূল্য!
আমাদের সমাজের অনেক ছেলে এবং তার পরিবারের মানসিকতাই এমন। এই সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে! ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে তবে সেটা সমাজের উদাহরণ হয়না এবং সংখ্যার বিচারে সেটা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা!
পাশের মানুষটার যত্ন নিন। সে কাজ করার মেশিন নয় তাকেও রক্ত মাংসের মানুষ ভাবুন- তার কাজের স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন করুন। অন্যের স্ত্রীদের সাথে তুলনা না করে বরং তার প্রশংসা করুন। শাসন করে- ঝগড়া করে আপনি তাকে ফোর্স করছেন কিন্তু ভালোবেসে প্রশংসা করে দেখেন সে তারচেয়ে দশগুন বেশি আপনাকে ফেরত দিবে! বেলাশেষে সেই মেয়েটিই আপনার পাশে থাকবে বন্ধু হয়ে। সে আপনার সন্তানর মা- তাকে শ্রদ্ধা করুন।
***কোনো লেখাকেই লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না***