হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের প্রথম দিকে হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বায়তুলমাল দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। একবার ঈদের আগে আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে উনার আহলিয়া বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না হলেও চলবে কিন্তু ছোট ছেলেটি ঈদের নতুন কাপড়ের জন্য কাঁদছে’। প্রতউত্তরে হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই’। তখন উনার আহলিয়া আগামী মাসের বেতন থেকে অগ্রিম নেয়ার জন্য হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে অনুরোধ করেছিলেন। ফলে হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এক মাসের অগ্রিম ভাতা দেয়ার জন্য চিঠি পাঠান।
সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা যিনি, যিনি অর্ধপৃথিবী শাসন করছেন, উনার এ ধরণের চিঠি পাঠ করে হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারচোখে পানি এসে যায়। উম্মতের আমীন হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বাহককে টাকা না দিয়ে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন, ‘হে সম্মানিত আমীরুল মুমিনীন! অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে ফয়সালা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তাহলো:
০১. আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি?
০২. বেঁচে থাকলেও মুসলমান উনারা আপনাকে খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কি?’
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চিঠি পাঠ করে এত কেঁদেছিলেন যে উনার মুবারক চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে গিয়েছিল। আর হাত তুলে হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য মুনাজাতে বলেছিলেন, ‘ আয় আল্লাহ পাক হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর রহম করুন, উনার হায়াত মুবারক দারাজ করে দিন’।
হযরত আবু উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন বায়তুলমালের আমানতের ব্যাপারে এক অটল ব্যাক্তিত্ব। আর ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার মত সুবিচারক খলিফাও জগত মাঝারে বিরল। দুইজন দুইজনকে নিজ নিজ জায়গায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করে দিয়েছিলেন। যা মুসলিম জাতির জন্য অনন্তকাল ধরে উনাদের আমানতদারী এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনের চেতনা গোটা উম্মতের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। মূলত এ ঘটনা গুলো উনাদের মাধ্যমে ঘটিয়ে আল্লাহ পাক এবং নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। উনারা এগুলো ভাতা বা কাপড়ের মুহতাজ ছিলেন না।
আর আজ নামদারী মুসলিমরা নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় ঈমান বিসর্জন দিতেও কুন্ঠাবোধ করে না। ফলে আমরা ছাহাবী যুগের বিপরীত অবস্থার সমুক্ষীন হয়েছি। সব জায়গায় সম্মানের হিতে অপদস্ত পোহাতে হচ্ছে।
সুতরাং আমাদেরকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করে পরিপূর্ন সুন্নতী জীবন-যাপনে প্রবেশ করতে হবে। নইলে অপেক্ষা করবে আরও ভয়ংকর পরাজয়।