হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত দিবস মুবারক ’১৮ ই জিলহজ্জ শরীফ। যা কুল-কায়িনাতের কাছে বেমেছাল একটি সম্মানিত, মহিমান্মিত ,সুমহান দিন। তাই এ মুবারক দিবস আলিশান এবং জাক-জমকভাবে পালন করা মুসলমান সহ কুল-কায়িনাতের দায়িত্ব-কর্তব্য। এই মহান দিবস উপলক্ষে উনার জীবনী মুবারকের কিছু দিক নিচে তুলে ধরা হলো:
মূল নাম মুবারক- ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। কুনিয়াত (ডাক নাম) মুবারক’ আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা’ আলাইহিস সালাম এবং সর্বাধিক পরিচিত লকব মুবারক ‘যুন নূরাইন’ ও গনি আলাইহিস সালাম। পিতা- আফফান, মাতা- আরওরা বিনতু কুরাইয। কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা গোত্রের সন্তান। উনার পূর্বপুরুষ ‘আবদে মান্নাফে’ গিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে।
তিনি খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের তৃতীয় খলীফা তথা খলীফায়ে ছালিছ। তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন হস্তী বছরের ৬ বছর পরে ৫৭৬ ঈসায়ী সনে। এ হিসাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তিনি ছয় বছর পরে দুনিয়াতে আগমন করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। উনার ছিল ঘন দাড়ি মুবারক; গাত্র বর্ণ ছিল উজ্জ্বল ফর্সা; বুক ও কোমর মুবারক ছিল চওড়া; ছিল ঘন এবং কান পর্যন্ত ঝোলানো বাবরী চুল মুবারক; পায়ের নালা মুবারক ছিল মোটা; ছিল পশম ভরা লম্বা বাহু মুবারক এবং মুক্তাখচিত দাঁত মুবারক।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে এখানে সামান্য কিছু দেয়া হলো: তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুব প্রিয় ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি বারবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার জান্নাতে সঙ্গী আছেন, আর আমার সঙ্গী হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।” তিনি ক্বাতিবে ওহী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী দুইজন খলীফা আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি প্রতি বছর হজ্জ করতেন। তবে শাহাদত মুবারক গ্রহণ করার বছর তিনি হজ্জ করতে পারেননি। প্রায় সারা বছর রোযা রাখতেন এবং সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এক রাকাত নামাযে কুরআন শরীফ একবার খতম করতেন। তিনি কবরের পাশ দিয়ে গেলে প্রচুর কাঁদতেন এবং দাড়ি মুবারক ভিজে যেত। রাতে গোলামদের খিদমত নিতেন না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। আত্মীয়-সঙ্গীদের প্রতি ছিলেন পম দয়ার্দ্র। তিনি সর্বপ্রথম তারাবীহ নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করার পদ্ধতি চালু করেন। মিম্বর শরীফ উনার ২য় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ১ম খুতবা এবং ১ম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ২য় খুতবা প্রদানের সুন্নত জারি করেন এবং ৩০ পারা কুরআন শরীফ নতুনভাবে সঙ্কলন করেন এবং বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর উনাদের কাছে প্রেরণ করেন। যার জন্য উনাকে ’জামিউল কুরআন’ বলা হয়।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুস্তবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল উনার গভীর ইলম। উনার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্যতা, সদয়তা ইত্যাদি গুণাবলীর জন্য সবসময় উনার পাশে মানুষের ভীড় জমে থাকত এবং তিনি হাত খুলে তাদের উপকার করতেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিলো উনার সুমহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যৌবনে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায় অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ‘গনী’ লক্বব মুবারক-এ প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ‘আস-সাবেকুনাল আউওয়ালুন’ (প্রথম পর্বের ইসলাম গ্রহণকারী) এবং ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল এবং উনার দাওয়াতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে উনার খালা উনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন। এরপর আজীবন জান-মাল দ্বারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাসহ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন হযরত ওয়ালিদ, হযরত খালিদ, হযরত আম্মারা, হযরত উম্মু কুলসুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই মুসলমান হয়েছিলেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্য ভাই-বোন পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও উনাকে কাফিরদর দ্বারা কষ্ট পেতে হয়। উনার চাচা হাকাম ইবন আবিল আস সে উনাকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করে। সে বলতো, একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে আপনি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছন। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্ত আপনাকে ছাড়া হবে না। এতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ঈমান আরো শক্ত হয়। তিনি বলতেন: তোমাদের যা ইচ্ছে কর, তবুও এ সম্মানিত দ্বীন আমি কখনো ছাড়তে পারবো না।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের পর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ কন্যা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে পবিত্র মদীনা শরীফে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ করেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরে মুশরিকদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে প্রথম যে দলটি হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত মুবারক করেছিলেন উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার আহলিয়া হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনিও ছিলেন। অর্থাৎ হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার পর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় পরিবারসহ প্রথম হিজরতকারী।
হাবশায় অবস্থানকালে উনাদের সন্তান হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আগমন করেন এবং এ ছেলের নাম অনুসারে উনার কুনিয়াত হয় আবু আবদুল্লাহ। হিজরী ৪র্থ সনে হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনাদের দাম্পত্য জীবন সুন্নতী এবং খুব সুখের ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলাবলি করতেন কেউ যদি সর্বোত্তম সংসার দেখতে চায়, সে যেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম ও উনার আহলিয়া হযরত রুকাইয়া আলাইহিস সালাম উনাদেরকে দেখে নেয়।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান করেন। অতঃপর পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন এই কথা শুনে যে, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নেতৃবৃন্দ পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর আবার তিনিও মদীনা শরীফ হিজরত করেন। এভাবে তিনি ‘যুল হিজরতাইন’ অর্থাৎ দুই হিজরতের অধিকারী হন।
একমাত্র বদর জিহাদ ছাড়া সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদের সময় অঢেল সম্পত্তি দান করে দিতেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থ ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে তিনি নিজ আহলিয়া হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার খিদমতের জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ শহরেই অবস্থান করেন। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের খিদমত সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং জিহাদও এর সমতুল্য না।
পবিত্র বদর জিহাদে বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফ এসে পৌঁছলো সেদিনই হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মতো সওয়াব ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন। এ হিসাবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী ছাহাবী।
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে তৃতীয় হিজরী সনে হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সাথে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাদী মুবারক দেন। এ কারণে তিনি ‘যুন-নূরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই নূর মুবারক উনার অধিকারী’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু নবম হিজরী সনে নিঃসন্তান অবস্থায় হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তাবুক জিহাদে এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় খরচ বহন করেন। তিনি একাই ৯০০টি উট এবং ৫০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন। এছাড়া অন্যান্য জিহাদ, বিশেষ দিন (আখিরী চাহার শোম্বা, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ইত্যাদি), দুর্ভিক্ষের সময়সহ অন্য যেকোনো সময় মুক্তহস্তে দান করতেন। ‘বীরে রুমা’ নামক ইহুদীদের কূপটি তিনি ক্রয় করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদেরকে হাদিয়া দিয়েছিলেনে। এরকম অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন তিনি। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে মাল বোঝাই এক হাজার উটও দান করে দিয়েছেন। কিন্তু সবসময় নিখুঁতভাবে হিসাব রাখতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হুদাইবিয়ার দূত হিসেবে তিনিই পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেন এবং উনাকে তিন দিন আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে সন্ধি হয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করা পর প্রথম খলীফা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে শুনামাত্রই বাইয়াত হন এবং উনার পরবর্তী খলীফা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করে যে অঙ্গীকারনামাটি লেখা হয়, উহার লেখক ছিলেন স্বয়ং তিনি। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তিনিই প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করেন।
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার সময় তিনি বেশ কয়েকজনের নাম মুবারক প্রস্তাব করে গিয়েছিলেন এবং তিনদিন-তিনরাত্রি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এরমধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকেই সর্বাধিক সম্মানিত এবং উপযুক্ত হিসেবে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে সবার উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হিসেবে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং সকলেই বাইয়াত গ্রহণ করেন। অতঃপর আমজনতা বাইয়াত গ্রহণ করেন। হিজরী ২৪ সনের পহেলা মুহররম সোমবার শরীফ সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতের দায়িত্ব খুব নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। কোথাও কোনো সমস্যা ছিলো না। খিলাফত বিস্তার হয়েছিল কাবুল খেকে মরোক্ক পর্যন্ত। কিন্তু কিছু কুচক্রী ইহুদীদের দ্বারা রোযা অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় শাহাদত মুবারক গ্রহণ করেন। এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫ সনের ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ। দিনটি ছিল জুমুয়াবার, আছর নামাযের সময়। তিনি কয়েক দিন কম ১২ বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী উনার ‘হাশমে কাউয়াব’ নামক স্থানে রওযা শরীফ করা হয়। মাগরিব নামাযের পর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। তবে ইহুদী ও মুনাফিকদের বাধার কারণে লোকসংখ্যার উপস্থিতি কম ঘটে।মূল নাম মুবারক- ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। কুনিয়াত (ডাক নাম) মুবারক’ আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা’ আলাইহিস সালাম এবং সর্বাধিক পরিচিত লকব মুবারক ‘যুন নূরাইন’ ও গনি আলাইহিস সালাম। পিতা- আফফান, মাতা- আরওরা বিনতু কুরাইয। কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা গোত্রের সন্তান। উনার পূর্বপুরুষ ‘আবদে মান্নাফে’ গিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে।
তিনি খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের তৃতীয় খলীফা তথা খলীফায়ে ছালিছ। তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন হস্তী বছরের ৬ বছর পরে ৫৭৬ ঈসায়ী সনে। এ হিসাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তিনি ছয় বছর পরে দুনিয়াতে আগমন করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। উনার ছিল ঘন দাড়ি মুবারক; গাত্র বর্ণ ছিল উজ্জ্বল ফর্সা; বুক ও কোমর মুবারক ছিল চওড়া; ছিল ঘন এবং কান পর্যন্ত ঝোলানো বাবরী চুল মুবারক; পায়ের নালা মুবারক ছিল মোটা; ছিল পশম ভরা লম্বা বাহু মুবারক এবং মুক্তাখচিত দাঁত মুবারক।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে এখানে সামান্য কিছু দেয়া হলো: তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুব প্রিয় ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি বারবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার জান্নাতে সঙ্গী আছেন, আর আমার সঙ্গী হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।” তিনি ক্বাতিবে ওহী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী দুইজন খলীফা আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি প্রতি বছর হজ্জ করতেন। তবে শাহাদত মুবারক গ্রহণ করার বছর তিনি হজ্জ করতে পারেননি। প্রায় সারা বছর রোযা রাখতেন এবং সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এক রাকাত নামাযে কুরআন শরীফ একবার খতম করতেন। তিনি কবরের পাশ দিয়ে গেলে প্রচুর কাঁদতেন এবং দাড়ি মুবারক ভিজে যেত। রাতে গোলামদের খিদমত নিতেন না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। আত্মীয়-সঙ্গীদের প্রতি ছিলেন পম দয়ার্দ্র। তিনি সর্বপ্রথম তারাবীহ নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করার পদ্ধতি চালু করেন। মিম্বর শরীফ উনার ২য় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ১ম খুতবা এবং ১ম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ২য় খুতবা প্রদানের সুন্নত জারি করেন এবং ৩০ পারা কুরআন শরীফ নতুনভাবে সঙ্কলন করেন এবং বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর উনাদের কাছে প্রেরণ করেন। যার জন্য উনাকে ’জামিউল কুরআন’ বলা হয়।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুস্তবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল উনার গভীর ইলম। উনার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্যতা, সদয়তা ইত্যাদি গুণাবলীর জন্য সবসময় উনার পাশে মানুষের ভীড় জমে থাকত এবং তিনি হাত খুলে তাদের উপকার করতেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিলো উনার সুমহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যৌবনে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায় অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ‘গনী’ লক্বব মুবারক-এ প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ‘আস-সাবেকুনাল আউওয়ালুন’ (প্রথম পর্বের ইসলাম গ্রহণকারী) এবং ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল এবং উনার দাওয়াতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে উনার খালা উনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন। এরপর আজীবন জান-মাল দ্বারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাসহ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন হযরত ওয়ালিদ, হযরত খালিদ, হযরত আম্মারা, হযরত উম্মু কুলসুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই মুসলমান হয়েছিলেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্য ভাই-বোন পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও উনাকে কাফিরদর দ্বারা কষ্ট পেতে হয়। উনার চাচা হাকাম ইবন আবিল আস সে উনাকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করে। সে বলতো, একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে আপনি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছন। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্ত আপনাকে ছাড়া হবে না। এতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ঈমান আরো শক্ত হয়। তিনি বলতেন: তোমাদের যা ইচ্ছে কর, তবুও এ সম্মানিত দ্বীন আমি কখনো ছাড়তে পারবো না।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের পর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ কন্যা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে পবিত্র মদীনা শরীফে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ করেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরে মুশরিকদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে প্রথম যে দলটি হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত মুবারক করেছিলেন উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার আহলিয়া হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনিও ছিলেন। অর্থাৎ হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার পর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় পরিবারসহ প্রথম হিজরতকারী।
হাবশায় অবস্থানকালে উনাদের সন্তান হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আগমন করেন এবং এ ছেলের নাম অনুসারে উনার কুনিয়াত হয় আবু আবদুল্লাহ। হিজরী ৪র্থ সনে হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনাদের দাম্পত্য জীবন সুন্নতী এবং খুব সুখের ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলাবলি করতেন কেউ যদি সর্বোত্তম সংসার দেখতে চায়, সে যেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম ও উনার আহলিয়া হযরত রুকাইয়া আলাইহিস সালাম উনাদেরকে দেখে নেয়।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান করেন। অতঃপর পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন এই কথা শুনে যে, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নেতৃবৃন্দ পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর আবার তিনিও মদীনা শরীফ হিজরত করেন। এভাবে তিনি ‘যুল হিজরতাইন’ অর্থাৎ দুই হিজরতের অধিকারী হন।
একমাত্র বদর জিহাদ ছাড়া সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদের সময় অঢেল সম্পত্তি দান করে দিতেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থ ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে তিনি নিজ আহলিয়া হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার খিদমতের জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ শহরেই অবস্থান করেন। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের খিদমত সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং জিহাদও এর সমতুল্য না।
পবিত্র বদর জিহাদে বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফ এসে পৌঁছলো সেদিনই হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মতো সওয়াব ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন। এ হিসাবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী ছাহাবী।
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে তৃতীয় হিজরী সনে হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সাথে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাদী মুবারক দেন। এ কারণে তিনি ‘যুন-নূরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই নূর মুবারক উনার অধিকারী’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু নবম হিজরী সনে নিঃসন্তান অবস্থায় হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তাবুক জিহাদে এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় খরচ বহন করেন। তিনি একাই ৯০০টি উট এবং ৫০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন। এছাড়া অন্যান্য জিহাদ, বিশেষ দিন (আখিরী চাহার শোম্বা, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ইত্যাদি), দুর্ভিক্ষের সময়সহ অন্য যেকোনো সময় মুক্তহস্তে দান করতেন। ‘বীরে রুমা’ নামক ইহুদীদের কূপটি তিনি ক্রয় করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদেরকে হাদিয়া দিয়েছিলেনে। এরকম অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন তিনি। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে মাল বোঝাই এক হাজার উটও দান করে দিয়েছেন। কিন্তু সবসময় নিখুঁতভাবে হিসাব রাখতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হুদাইবিয়ার দূত হিসেবে তিনিই পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেন এবং উনাকে তিন দিন আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে সন্ধি হয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করা পর প্রথম খলীফা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে শুনামাত্রই বাইয়াত হন এবং উনার পরবর্তী খলীফা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করে যে অঙ্গীকারনামাটি লেখা হয়, উহার লেখক ছিলেন স্বয়ং তিনি। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তিনিই প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করেন।
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার সময় তিনি বেশ কয়েকজনের নাম মুবারক প্রস্তাব করে গিয়েছিলেন এবং তিনদিন-তিনরাত্রি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এরমধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকেই সর্বাধিক সম্মানিত এবং উপযুক্ত হিসেবে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে সবার উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হিসেবে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং সকলেই বাইয়াত গ্রহণ করেন। অতঃপর আমজনতা বাইয়াত গ্রহণ করেন। হিজরী ২৪ সনের পহেলা মুহররম সোমবার শরীফ সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতের দায়িত্ব খুব নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। কোথাও কোনো সমস্যা ছিলো না। খিলাফত বিস্তার হয়েছিল কাবুল খেকে মরোক্ক পর্যন্ত। কিন্তু কিছু কুচক্রী ইহুদীদের দ্বারা রোযা অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় শাহাদত মুবারক গ্রহণ করেন। এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫ সনের ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ। দিনটি ছিল জুমুয়াবার, আছর নামাযের সময়। তিনি কয়েক দিন কম ১২ বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী উনার ‘হাশমে কাউয়াব’ নামক স্থানে রওযা শরীফ করা হয়। মাগরিব নামাযের পর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। তবে ইহুদী ও মুনাফিকদের বাধার কারণে লোকসংখ্যার উপস্থিতি কম ঘটে।