
রাস্তাটা একটু উঁচুই ছিল।দু’পাশে চা বাগান। সকালের রোদ নেহাত খারাপ লাগছে না। যাহ বাবা এখনই আবার মেঘলা আকাশ এসে হাজির হলো। সিলেটের আবহাওয়ার মুডই এমন, এই রোদ, এই বৃষ্টি!
রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম। রিক্সা্ওলাকে এখানে ড্রাইভার বলে। ড্রাইভারদের কি বলে? পাইলট? জানিনা। রাগিব রাবেয়া মেডিকেল এর পাশের রাস্তা। ড্রাইভার নিজে নিজেই কথা বলছে। সব বুঝতে পারছিনা। শুধু হু হা করে যাচ্ছি।
সকাল বেলা। রাস্তায় খুব একটা লোকজন নেই। ঘুম ভাঙছে সিলেট শহরের। রাস্তার অপর পাশ থেকে দু’টো বাচ্চা ছেলে আসছে। দেখে মনে হচ্ছে গলায় গলায় ভাব। সুখ দুঃখের গল্প করছে। ধীরে ধীরে রিক্সা আর বাচ্চা দু’টো কাছাকাছি চলে এসেছে।
রাস্তার এই জায়গাটা সমতল থেকে বেশ কিছুটা উঁচু। সিলেটের রাস্তায় প্রায়ই এ্মন উচুঁ নীচু ঢাল পাওয়া যায়। দু’জন রিক্সায় থাকলে একজনকে নেমে যেতে হয়।আবার দু’জনই মেয়ে হলে কখনো বা নামা হয় না।তখন ড্রাইভারকে একটু বেগ পেতে হয় সেই জায়গা গুলো পার হতে।এসবে তারা অভ্যস্ত। আমরাও অভ্যস্ত।
বাচ্চা ছেলে দু’টোর সাথে চোখাচোখি হতেই, তাদের একজন দাঁত বের করে একটা হাসি দিলো।ড্রাইভার সিট থেকে নেমে রিক্সাটা তখন রিক্সাটাকে ঢালু জায়গটাতে টেনে তুলতে ব্যাস্ত। আর আমি যথারীতি রিক্সায় বসে আছি।
হঠাৎ খেয়াল করলাম ড্রাইভারকে আর কষ্ট করে টানতে হচ্ছে না রিক্সাটাকে।সহজ ভাবেই সে টেনে নিচ্ছে সেটাকে।অথচ সেটা তখনো সেই ঢালে উঠে নি।রিক্সার হুডের ফাঁকা দিয়ে দেখলাম বাচ্চা ছেলে দু’টো সেটাকে ধাক্কা দিচ্ছে আর একজন আর একজনকে বলছে, “আর একটু শক্ত করে ঠেলা দে”, সিলেটি ভাষায় খুব সুইট করে বললো।
হঠাৎ করে নিজেকে খুব অপদার্থ মনে হলো।বাচ্চা বাচ্চা দু’টো ছেলে বুঝতে পরলো, ড্রাইবারটির কষ্ট হচ্ছে ঢাল টুকু টেনে তুলতে, আর আমি বুঝতে পারলাম না!একটু নেমে হেঁটে পার হলেই তো পারতাম।নিতান্তই বাচ্চা দু’টো ছেলের যে বোধটুকু আছে, অনেক কিছু বুঝে, অনেক কিছু যেনেও সেই বোধটা জাগেনি আমার ভেতর।