ফ্যাক্টর Fi হলো চতুর্থ ফ্যাক্টর F1 এর মাঝে অবস্থিত সেই সকল গ্রহের শতকরা যেখানে শুধুমাত্র জীবন এর স্পন্দনই নয়, সত্যিকার অর্থে বুদ্ধিমান প্রাণ বলতে আমরা যা বুঝি তার সম্পূর্ণরূপে ক্রমবিকাশ ঘটবার সম্ভাবনা আছে। সত্যিকার অর্থে বুদ্ধিমান প্রাণী বলতে অনেকের মনে সেই প্রাণীর দৈহিক গঠন নিয়ে কৌতূহল জাগতে পারে। তারা দেখতে মানব প্রজাতির মত হবে না কি অন্য রকম হতে পারে এমন সম্ভাবনার বিষয় নিয়েও গ্রিন ব্যাংক কনফারেন্সে বিজ্ঞানীদের মাঝে আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনায় বুদ্ধিমান প্রাণী হলেই যে তা মানুষের মত শারীরিক আকার বিশিষ্ট হবে সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করা হয়। জন লিলি তো একটা বোমা ফাটানোর মত কথা বলেই ফেলেন! তিনি মনে করেন আমাদের পৃথিবীতেই মানুষই শুধুমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী হবার যে তকমা গায়ে লাগিয়ে আসছে তা সঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি ডলফিন এর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কথা বলেন যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের সাধারন বুদ্ধিমত্তার থেকেও উপরে! জন লিলির এরূপ ব্যাখ্যার পর ঐ কনফারেন্সে যোগদানকারী গবেষক গণ Fi এর মান ১ হিসেবে গ্রহণ করেন।
আবার এক দল গবেষক মনে করেন যদি ক্রিটেসিয়াস যুগের বুদ্ধিমান ডাইনোসর দের বিবর্তন না ঘটত তাহলে বিবর্তনের আশীর্বাদে তারাই হয়তো এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হত! এই ধারণা থেকে তারা মনে করেন অনেক গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাব হবার জন্য আবহাওয়া অনুকুলে থাকলেও আকারে বড় প্রজাতির কোনো প্রাণীর আগ্রাসী ভূমিকার জন্য সেখানে বুদ্ধিমান প্রজাতির আবির্ভাব ও তাদের বিবর্তন বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। এই উপাদান গুলোকে বিবেচনা করলে ফ্যাক্টর Fi এর মান ~ ০.১ মনে করা হয়।
ফ্যাক্টর Fc হলো সেইসব গ্রহের সম্ভাবনার পারসেন্টেজ যেখানে অবস্থানরত প্রানিরা আন্তঃ নাক্ষত্রিক যোগাযোগ করার মত যোগ্যতা অর্জন করেছে।
যদি ডলফিনের মত অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার আগমন অন্য গ্রহের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় তাহলে ঐরকম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণীর আন্তঃ নাক্ষত্রিক যোগাযোগ করবার সামর্থ্য হিসেব করা যেতে পারে। কিন্তু ডলফিনের বড় আকারের মস্তিষ্ক আর বুদ্ধিমান টাইপের আচরণ থাকার পরও তারা যে কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। এথেকে বলা যায় কোন প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা উচ্চ মানের হতে পারে, তাই বলে তারা যে মানুষের কার্যকর হাত দুটোর কারিশমা টপকে যাবে এমন অবকাশ নেই। বিজ্ঞানীদের মাঝে একটা সাধারন ধারনা হলো জলে বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব ঘটলে তা স্বাভাবিক ভাবেই নন-টেকনোলজিক্যাল হবে। ইন্টেলিজেন্স এবং টেকনোলজি শুধুমাত্র স্থল বাসীদেরই থাকবার সম্ভাবনা বেশি। এই বিবেচনা থেকে পূর্ববর্তী ফ্যাক্টর এর মত Fc ~০.১ মানটি গবেষকরা গ্রহণযোগ্য মনে করেন।
ফ্যাক্টর L হলো একটি প্রাযুক্তিক প্রজাতির গড় জীবনকাল
ড্রেকের সমীকরণের অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোর মাঝে এই ফ্যাক্টরটি বোঝা বেশ কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রেই এই ফ্যাক্টর নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়না।
আন্তঃ নাক্ষত্রিক দূরত্বে যোগাযোগ স্থাপন অর্থাৎ বার্তা গ্রহণ এবং প্রেরনে সর্বনিম্ন সামর্থ্য অর্জন করবার পর কোন একটি টেকনোলজিক্যাল এলিয়েন সিভিলাইজেশন কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন।
উদাহরণস্বরূপ পৃথিবীকেই যদি এরূপ কোনো গ্রহ মনে করা হয়। সেক্ষেত্রে হিসাবটা অনেকটা এরকম...
সূর্য ও পৃথিবীর প্রত্যাশিত গড় আয়ু প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর। আর ১০০ বছরেরও কম সময় ধরে আমরা ভিন গ্রহ বাসীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাহলে আমাদের বর্তমান সিভিলাইজেশন কত বছর পর্যন্ত টিকে থাকবার সম্ভাবনা রয়েছে? আমরা কি কয়েক বছরের মাঝেই ধ্বংস হয়ে যাব (প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে!) যেমনটি অনেক গবেষক ধারণা করে আসছেন নাকি আমরা এই সমস্যা গুলোকে উতরে গিয়ে আরও কয়েক মিলেনিয়াম আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হব? যদি আমরা আগামী কালকেই ধ্বংস হয়ে যাই তাহলে সেই উত্তর হলো অর্থাৎ আমাদের টিকে থাকবার সম্ভাবনা হলো ১/ ১০০,০০০,০০০ বছর। আর যদি আমরা আরও ১০,০০০ বছর নিজেদের সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে পারি তাহলে আমাদের টিকে থাকবার সম্ভাবনা হবে ১/ ১০০০,০০০ বছর।
ভিন গ্রহের প্রাণীদের জন্য গবেষকদের হিসাবে এই সময় একশ বছর ( অনেক নিরাশাবাদী গবেষকদের ধারনা এই সিভিলাইজেশন মানুষের লেভেলে প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ পাবার পর বিভিন্ন মহাজাগতিক অথবা নিজেদের কারণেই ধ্বংস হয়ে যায়) থেকে কয়েক বিলিয়ন বছর ( অনেক গবেষক ধারনা করেন এই সিভিলাইজেশন আবির্ভূত হবার পর ঐ গ্রহের নিয়ন্ত্রক নক্ষত্রের জীবনকাল পর্যন্ত টিকে থাকে) পর্যন্ত হতে পারে। যদিও এটি L এর মান হিসাব করবার বহু নিয়ামকের মাঝে একটি এবং তেমন গুরুত্ব বহন করেনা।
ড্রেকের সমীকরণে L দ্বারা একটি টেকনোলজিক্যাল এলিয়েন সিভিলাইজেশনের টোটাল লাইফটাইম এবং N দ্বারা ঐ সিভিলাইজেশনের সংখ্যাকে বিবেচনা করা হলেও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বর্তমান সময়ে আমরা যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা ভিন গ্রহবাসীদের সাথে বার্তা প্রেরন এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে সাফল্য আশা করছি সেই ধারণাটি সঠিক নাও হতে পারে। কারণ আমরা রেডিও ওয়েভ দিয়ে যোগাযোগের ব্যবস্থা করলেও বলা তো যায়না যে, ভিনগ্রহ বাসীরা সেই ওয়েভ এর বার্তা গ্রহণ করতে পারবে। কেই বা জানে তারা আমাদের চেয়েও উচ্চ প্রযুক্তি যেমন আলোর গতিবেগের সমান অথবা তার বেশি কোন যোগাযোগ প্রযুক্তি অথবা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক মাধ্যমে হয়তো তারা যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে, যে ম্যাসেজ গ্রহণ করবার মত সামর্থ্য বা প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ আমরা এখনো অর্জন করিনি! আবার এক শতাব্দী হতে অন্য শতাব্দীতে যোগাযোগের মাধ্যম পরিবর্তিত হওয়া স্বাভাবিক। যেমন এক সময় বার্তা প্রেরনের জন্য আমরা কবুতরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও সময়ের পরিবর্তনে আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো এসেছে তা অভাবনীয়!
যদি ধরে নেয়া হয় যে, ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে কোয়ান্টাম জাম্প দেবার আগেই আমরা আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি নিয়েই তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হব সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা L এর মান ৫০০ বছর হিসেবে ধরে নেন। অর্থাৎ আমাদের মত একই ধরণের প্রযুক্তি নিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক যোগাযোগে সক্ষম বুদ্ধিমান ভিন গ্রহের প্রাণীর টিকে থাকবার গড় সময় ৫০০ বছর হতে পারে।
ড্রেকের সমীকরণের এই সাতটি ফ্যাক্টর এর মান সমীকরণে বসিয়ে আমরা পাই,
N= R (৪0) × Fp (০.৫) × Ne (০.৫) × Fl (১) × Fi (০.১) × Fc (০.১) × L(৫০০) = ৫০.
এই মান হতে এটাই মন্তব্য করা যায় যে, যদি এই ভ্যালু গুলো সঠিক হয় তবে সমগ্র গ্যালাক্সিতে কম করে হলেও ৫০ টি ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান সিভিলাইজেশন রয়েছে যারা আমাদের মতই বর্তমান সময়ে ব্যবহৃত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কে ব্যবহার করছে যোগাযোগ করবার জন্য।
যদি এরকম হয় যে, আমাদের আগেই বিগত ৫০০ বছর ধরে তারা “রেডিও-জানালা” খুলে আমাদের ম্যাসেজের অপেক্ষায় আছে। সেক্ষেত্রে আমরা যেহেতু মাত্র ৫০ বছর আগে থেকে আমরা তাদের ঐ খোলা জানালা দিয়ে ম্যাসেজ গ্রহণ আর ব্রডকাস্ট করবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছি। সেই ধারনা থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই গ্যালাক্সিতে অন্তত ৫ টি সিভিলাইজেশন আছে যারা আমাদের সমপরিমান প্রাযুক্তিক দক্ষতা এখনো অর্জন করেনি। আর তেমনি ভাবে ৪৫ টি সিভিলাইজেশন থাকবার সম্ভাবনা রয়েছে যারা কিনা আমাদের থেকেও এতো উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যা বোঝার মত প্রযুক্তি আমাদের এখনো হয়নি!
এই হিসাব থেকে দেখা যায় যে, এই ৫০ টি সিভিলাইজেশন প্রতি ৮ বিলিয়ন নক্ষত্রের মাঝে যে কোন এক গ্রহে থাকতে পারে। আবার যেহেতু সব থেকে কাছে থাকা এমন বুদ্ধিমান প্রজাতির গ্রহের দূরত্ব আমাদের পৃথিবী হতে ১,০০০ আলোকবর্ষ দূরে সেক্ষেত্রে রেডিও ওয়েভ প্রযুক্তি দিয়ে ৫০০ বছরেও তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ ঘটবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে! তবুও সেইসব খ্যাপাটে অতি উৎসাহী বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আমাদের আগেই ভিনগ্রহ বাসীরা পৃথিবীতে যোগাযোগ করবে আবার অনেকে বলেন ইতিমধ্যেই নাকি সেই যোগাযোগ কয়েকবার তারা করেও ফেলেছে!
এখন তাহলে কি করা যায়? আসুন আমরা রেডিও কানে লাগিয়ে থাকি সেই বার্তা পাবার অপেক্ষায়...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৬