.........................।
...............................।
আব্বা তুমি এতদিন আমাদের ছেড়ে দূরে থাকছ কেন? তুমি কি জানো তুমি নেই তবুও আমাদের বৃহস্পতিবার এলে তুমি আসবে সেই অপেক্ষায় এখনো দিন কাটে? আম্মা এখন কেন যেন ওইদিনে আগের মত রান্না নিয়ে ব্যাস্ত থাকেনা। শুধু দেখি তোমার দুই সন্তানের মত আম্মার চোখেও অপেক্ষার কান্না। আব্বা তোমাকে জানানো হয় নি যেদিন তুমি চলে গেলে, সেদিনের সেই অসহ্য ঘটনাগুলো। আব্বা আমি এখন রাতে ভাত খাইনা, তোমার সাথে সেদিন রাতে খাওয়া হয়নি তাই আমি তোমার অপেক্ষায় আছি কবে তুমি আসবে আমরা চারজন মিলে আবার একসাথে খাব। তোমার সাথে খাওয়া ওই ইফতারি ছিল আমার জীবনের শেষ আনন্দ সন্ধ্যা। তোমার কি মনে আছে তুমি তোমার প্লেট থেকে জিলাপি তুলে দিয়েছিলে আমাকে? অমন করে কেউ এ কদিনে আমকে জিলাপি তুলে দেয়নি... আব্বা শবেবরাত নাকি ভাগ্য রজনী, সেদিন মহান আল্লাহ তায়ালা সবার ভাগ্য আগামি বছরে কেমন হবে তা লিখে রাখেন। তোমার ভাগ্যে আল্লাহ তো পরের বছর টা লিখলেন না! কেন আব্বা তুমি কি ওই রাতে নামাজ কম পড়েছিলে? ছয় ঘণ্টার বাস জার্নি করে সেদিন কি তুমি ক্লান্ত ছিলে? কেন আব্বা? তোমাকে তো কোনদিনও ক্লান্ত হতে দেখিনি! তবে সেদিন কেন তুমি আরও বেশি নামাজ পড়লে না?
সকালবেলা তোমার সাথে আমার নাস্তা খাওয়া হয়নি, সন্ধ্যায় অনেক ইফতারি খেয়ে আমি তুমি কেন রাতে ভাত খেলাম না? সেদিনের পর সেহেরি ছাড়া তোমার সাথে যে আমার কক্ষনও ভাত খাওয়া হয়নি। এখন ভাতগুলোকে দেখলে আমার যে ঘৃণা জাগে...
আব্বা সেদিন একটু সময় আম্মার সাথে বেশি থাকবার জন্য কি তুমি এক ঘণ্টা পরের ওই সর্বনাশা, রাক্ষুসে বাসের টিকিট কিনেছিলে? আব্বা সেদিন বাসে ওঠার পর তুমি আমাকে ফোন করনি কেন? তোমার তো এমন ভুল হবার কথা নয়। আব্বা সেদিন আমার স্যান্ডেল ছিরে গিয়েছিলো, এখনো ওটা সারানো হয়নি। আব্বা তুমি ছাড়া তোমার এই অপদার্থ ছেলেটি যে নিজে চর্মকার এর দোকানে স্যান্ডেলটা সারাতে দিয়ে আসতেও পারেনা!
আব্বা তুমি কি জানো তোমার ছোট ছেলেটি তোমার ওই রক্তাক্ত দেহখানা শেষবার দেখার মত মানসিক অবস্থা ছিলোনা। তাকে হাসপাতালে সাত দিন ঘুম পারিয়ে রাখতে হয়েছিল। রাতে দিনে সে আব্বা আব্বা বলে ডেকে ফেইন্টেড হয়ে যেত। আব্বা আমারা যে এখনো মেনে নিতে পারিনা যে তুমি আর আসবে না!
আব্বা তোমার সেই ছোট ছেলেটি এবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে। তুমি সেজন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এখনো আসলেনা কেন? তুমি অফিস যেতে ছোট বেলায় ও তখন তোমার পিছু পিছু যেত। তোমাকে দূরে যেতে দিতে চাইতনা। ক্তদিন যে ও কান্নাকাটি করে রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়েছে! আবার সপ্তাহ শেষে বৃহস্পতিবার এলেই ও তোমাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত।
আব্বা সেদিন তোমার যাবার অন্তিম মুহূর্তে কার কথা বেশি মনে পড়েছিল? আমি তোমার ছোট ছেলের সাথে ঝগড়া করতাম যে আব্বা আমাকেই বেশি ভালবাসে ও তখন আমার উপর রেগে যেত। আব্বা ওই শেষ মুহূর্তে কি তুমি নিজেকে অসহায় মনে করেছিলে? আল্লাহ্র কাছে একটু সময় প্রার্থনা করেছিলে যেন তোমার কলিজার টুকরাদের সাথে তোমার একটুখানি দেখা হয়! আজরাইল কি তোমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছিলো?
আব্বা তুমি চলে যাবার পর তোমার ছোট ছেলে টাইফয়েড, জন্ডিসে ভুগেছে আর কি এক অজানা কারণে তোমার বড় ছেলে যে সবচেয়ে বেশি অসুখে ভুগত তাড় কোনো অসুখ হয়নি। আব্বা তোমার হাতের ছোঁয়া পেলেই যে তার অসুখ ভালো হয়ে যায় কিন্তু এখন তুমি নাই তোমার হাতের ছোঁয়া নাই সে কারনেই কি এখন আর তার অসুখ হয়না?
আব্বা তোমার বড় ছেলের পরীক্ষার সময়গুলোতে কত আয়োজনই না ছিলো তোমার। সেই লাল সিডি ৮০ মোটরসাইকেলে করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষাতেও নিয়ে গিয়েছিলে প্রতিদিন! আর প্রাইভেট পড়বার জন্য স্বপন স্যারের কাছেও সেই দিনগুলোতে নিয়ে যাওয়ায় বন্ধুরা আমার সাথে তখন ঠাট্টা করত এতো বড় ছেলে তবুও বাবার পিছন ছাড়েনি সেই কথা বলে। তারা তো তখন জানতো না যে তুমি পৃথিবীতে শুধুমাত্র অল্প কিছুদিনের জন্য এসেছিলে আর এই ক’দিনে সবার বাবা অনেকদিন বেঁচে থেকে যে ভালোবাসা সন্তানদের দেয় তা দিয়ে গেছ। আব্বা তুমি কি জানতে তুমি অকস্মাৎ এভাবে চলে যাবে? সেজন্যেই কি তুমি আমাদের এতো বেশি ভালোবাসা দিয়েছিলে?
আব্বা তোমার স্বপ্ন ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবার আমি সে স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারিনি। সেদিন রাতে তুমি নাকি মামার কাছে গিয়ে অনেক কেঁদেছিলে! কিন্তু তুমি হাসি মুখে আমাকে সাহস দিয়েছিলে, প্রকাশ করনি তোমার সেই দুঃখ যাতে আমি কষ্ট না পাই! শুধু একটি কথা বলেছিলে “সব সময় এক নাম্বার হবে যদি অসৎ, খারাপ হও তবে যেন একেবারে খারাপ হও আর যদি ভালো হও তবে একদম সেরা হবে।” কজন সন্তানের এমন পিতা থাকবার সৌভাগ্য হয়? আব্বা তোমার বড় ছেলে তোমার সেই কথা মেনে চলবে। এখনো আমি তোমার অপেক্ষায় আছি তুমি আসলেই তোমাকে আমার ক্ষুদ্র কিছু অর্জনের কথা বলব। আজ শুধু আমার অনুজের কথা তোমায় বলছি... আমার পরীক্ষার সময় তুমি নফল রোযা রাখতে আব্বা ওর জন্য কি তুমি রোযা রাখবে না??? তুমি আসো আগামি পরশু যে ওর জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা! আমরা দুইজন তোমার সেই লাল সিডি-৮০ তে করে তোমার পেছনে বসে বেড়াতে যাব...... আমাদের অপেক্ষার প্রহর কি কোনোদিনও শেষ হবেনা????