somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাগরতলের অজানা জগতের রহস্য

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ মহাবিশ্বে অভিজান চালাচ্ছে। কিন্তু এখনো মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে আছে আরও অনেক অজানা রহস্য। মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্ভাবনা সিরিজ লিখতে গিয়ে হঠাৎ করেই খেয়াল চাপলো মহাসাগরের নিচের রহস্য নিয়ে কিছু লিখবার। সেই খেয়াল থেকেই এই পোষ্ট লেখা...







বিজ্ঞানীরা এই রহস্য ভেদ করবার জন্য নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। মহাসাগরের জীবজগৎ যেমন বিচিত্র তেমনি বিচিত্র এর ভূপ্রকৃতি। সাগরের এই তলদেশে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারেনা। তাই নিকষ অন্ধকার এখানে। এই চির তিমিরের রাজ্যে কি ঘটছে তা জানার জন্য মেরিন বায়োলজিস্ট এবং জিয়োলজিস্টরা সাগরের তলদেশে পাঠিয়েছিলেন স্বয়ংচালিত যন্ত্রযান এবং ক্যামেরা। বিস্ময়কর সব তথ্য পেয়েছেন তারা।
অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ১১৫০০ ফুট নিচে পাঠানো হয়েছিলো ৪৪০০ ওয়াট শক্তিসম্পন্ন আলো, সঙ্গে পানির নিচে অতি উচ্চ চাপ সইবার ক্ষমতাসমৃদ্ধ শক্তিশালী হাই র‍্যেজুলেশনের ক্যামেরা। সমুদ্রের পানি এখানে ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ। কারণ সমুদ্রতলের ম্যাগমা পানিকে উত্তপ্ত করে তোলে। এই উত্তপ্ত পানির সাথে শীতল পানির সংযোগে সৃষ্টি হত ঘূর্ণাবর্ত, কুয়াশা এবং চিমনীর মত আকৃতিপ্রাপ্ত বিভিন্ন রকমের পাথর। এখানে ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য জীবের আবির্ভাব ঘটেছে অভূতপূর্বভাবে। সূর্যের আলো এখানে পৌছায়না তাই এখানে জন্ম নেয়া মেরিন প্ল্যান্টগুলোতে কেমোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় জীবনচক্র আবর্তিত হয়, ব্যাকটেরিয়ার মত অণুজীবদের বাস এখানে। এদের মাঝে বাস করে ট্রান্সলুসেন্ট বা আলোকস্বচ্ছ চিংড়ী। এই চিংড়ীগুলোর কোনো চোখ নেই। সাগরতলের নিকষ অন্ধকারে কিছুই দেখা যায়না তাই বিবর্তন আর অভিযোজনের অমোঘ নিয়মে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছে এরা। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যদিও এসব চিংড়ী দৃষ্টিহীন কিন্তু এদের পিঠের অংশে রয়েছে রডোপসিন। রডোপসিন হলো এক ধরণের আলোক সংবেদী কণিকা যা মানুষ সহ অন্যান্য উন্নত জীবদের চোখে বিদ্যমান। রডোপসিনের উপস্থিতিতে এসব চিংড়ী কিছু দেখতে না পেলেও আলোর উপস্থিতি বুঝতে পারে অর্থাৎ আলোতে সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে। কিন্তু এই অন্ধকার জগতে আলো আসবে কোত্থেকে!

আসলে সাগরতলের জগত গাড় অন্ধকার হলেও এখানেও রয়েছে বিচিত্র আলোর সমাহার। এখানে উত্তপ্ত জলের সাথে খনিজের বিক্রিয়ায় ইনফ্রারেড রশ্মির বিকিরণ ঘটে। ইনফ্রারেড রশ্মি মানুষের চোখে ধরা পড়েনা কিন্তু এই “অন্ধ” চিংড়ীরা এই আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে। এই সংবেদনশীলতার ফলে তারা আলোক বিচ্ছুরন ঘটায় এমন খাদ্যসমৃদ্ধ চিমনীগুলো খুঁজে পায়। আবার অতি উত্তপ্ত জলে নিজেদের সিদ্ধ হওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে। রিমিকালিস এক্সাকুলাটা নামের এই চিংড়ীরা অদ্ভুত কিছু আচরণ করে। এদের শিশু, তরুণ ও বয়স্কদের গ্রুপ সম্পূর্ণ আলাদা। কি কারণে তরুণ চিংড়ীরা বয়স্কদেরদের থকে দূরে থাকে এবং আলাদা ধরণের খাদ্য গ্রহণ করে বিজ্ঞানীরা সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন।

লস্ট সিটির একটি একটিভ চিমনীর ছবি

সাগরতলের ভূপ্রকৃতিও কম বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। আটলান্টিক সাগরেরতলে ২৩০০ ফুট গভীরে ভূতাত্ত্বিক ডেবি কেলি এবং তাঁর সহযোগীরা এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখেন। তারা দেখেছিলেন, একটা সাদা চিমনি থেকে উত্তপ্ত জল নির্গত হচ্ছে। এর চারপাশে রয়েছে লাল পাথরের অরণ্য। একেকটি পাথর প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ। এই অঞ্চলটির নাম তারা দিয়েছিলেন লস্ট সিটি বা হারানো শহর। এটা যেন রূপকথার রাজত্ব যা সাগরতলে সৌন্দর্য বিলিয়ে মুগ্ধ করে যাচ্ছে সাগরে বেড়ে ওঠা প্রাণীদেরকে! ওই সাদা চিমনী থেকে যে উত্তপ্ত জল নির্গত হয় তার সাথে অন্যান্য পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এই নানা আকৃতির সৌধমালা গড়ে উঠেছে। গুহার ভিতরে থাকা স্ট্যালামগাইটের মতই আকৃতি এগুলোর।

এই লস্ট সিটির কাছাকাছি রয়েছে মধ্য-মহাসাগরীয় প্রাচীর। এখানে আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আগ্নেয়গিরিগুলো জীবন্ত। প্রায়ই জলন্ত লাভা নির্গত হয় এগুলো হতে। সাগরের পানির সংস্পর্শে এসে লাভা অদ্ভুত আকার ধারণ করে। এ অঞ্চলে থাকে সালফাইডের চিমনীগুলো থেকে ৪০৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার উষ্ণ জল নির্গত হয়। মধ্য-আটলান্টিক প্রাচীর থেকে নয় মাইল দূরে এই লস্ট সিটির অবস্থান। ১.৫ মিলিয়ন বছর আগের পাথরে গড়া লস্ট সিটির পরিবেশ আদিম পৃথিবীর পরিবেশের অনুরুপ। ব্যাকটেরিয়া এবং আরও কিছু অণুজীব এই লস্ট সিটির বাসিন্দা। অণুজীব ছারাও কিছু কিছু রেকফিশ লস্ট সিটির পাথুরে স্তম্ভগুলোর মাঝে ঘুরে বেড়ায়।


কার্বোনেট চিমনীর মাঝে রেক ফিশগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে।

লস্ট সিটির কিছু কিছু সৌধ তিন/চার তলা ভবনের সমান উঁচু। আকৃতিতে অনেকগুলো দেখতে প্রায় গির্জার মতন। মনে হয় যেন আটলান্টিসের হারানো নগরী অথবা কিং সলোমনের দুবে যাওয়া নগরীর সৌধমালা এগুলো।

মিড আটলান্টিক প্রাচীরের কাছে কিছু কিছু পাথরে বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত নিদর্শন পেয়েছেন। পাথরের উপর অসংখ্য ছোট ছোট হেক্সাগোনাল বা ষড়ভুজ খোদাই করা রয়েছে। অনেকটা মৌচাকের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠের মত এর আকৃতি। জার্মান প্যালিয়েনটোলজিস্ট ডলফ সেলইশার মনে করেন এগুলো ৬০ মিলিয়ন বছর আগের প্যালিও ডিকটাইয়ান নোডোসাম এর ফসিল। কেঁচোর মত এই জীব আজ থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত। এরাই ওইসব পাথরের বুকে বাসা বেঁধে থাকত। এদের বাসা বাঁধার ফলেই পাথরের বুকে অমন হেক্সাগোনাল ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

হ্যান্স ক্রিসচিয়ান অ্যান্ডারসনের বিখ্যাত রূপকথা লিটল মারমেইড। সাগরতলের বুড়ি ডাইনীর বাগানের বর্ণনা আছে সে রূপকথায়। সব মৃত পাথর আর মৃত জীব দিয়ে সেই বাগান সাজিয়েছিল বুড়ি। সাগরতলের নিকষ অন্ধকার রাজত্ব দেখে হঠাৎ করে কল্পনায় এসে যায় সেই বুড়ি ডাইনীর বাগানের কথা! তবে এখানে জীবন্ত জীব আছে, আছে তাদের অদ্ভুত জগত।
মহাকাশের রহস্যভেদ করার পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা সাগরতলের এসব রহস্যকেও জয় করবেন এই প্রত্যাশা রইলো…..
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×