এই বিশাল মহাবিশ্বে আমরা কি একাই বসবাস করছি? মহাকাশের আর কোথাও কি বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব নেই? যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞান মনীষীদের লেখা কল্পকাহিনীতে যে আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতার বর্ণনা পাওয়া যায় তার সবই কি মিথ্যা? হয়তো বা তা নয়...
কারণ বিশাল মহাবিশ্বের কতটুকুই বা আমরা জানতে পেরেছি। মহাবিশ্বের কোথায় কি আছে তার প্রায় সবকিছুই আমাদের কাছে অজানা রয়ে গেছে। হয়তো বা আকাশে বিদ্যমান কোনো তারকার মাঝেই বসবাস করছে আরেকটি বুদ্ধিমান জাতি অথবা তারা হতে পারে নিম্ন বুদ্ধিমত্তার কোনো জীব। পৃথিবীর মত হয়তো সেখানেও রয়েছে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।
আমাদের মত তারাও হয়তো ভাবছে মহাজাগতিক প্রতিবেশীর কথা। আবার তাদের অবস্থান হতে পারে আমাদের থেকে অনেক অনেক দূরে। এখন প্রশ্ন হলো আমাদের কল্পনাজগতে বাস করা এই বুদ্ধিমান প্রানিদের আমরা কিভাবে খুঁজে পাব? কিংবা বাস্তবে মহাকাশে এমন কোনো সভ্যতার অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা!
কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন মহাকাশে প্রানের সন্ধান করার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার পুরোটাই পানিতে যাচ্ছে। আসলে মানুষ ব্যতিত আর কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। আবার একদল বিজ্ঞানীর মত ঠিক উল্টো। এই মতেরই একজন বিজ্ঞানী বিল টারটার। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সার্চ ফর এক্সট্রা ট্যারেসট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ( SETI) নামক একটি উচ্চভিলাসি প্রকল্পের ডাইরেক্টর। এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা রেডিও ওয়েভ এর মাধ্যমে মহাকশে বুদ্ধিমান প্রাণীদের সন্ধানে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। টারটারের মতে সৌরজগতের বাইরে বুদ্ধিমান প্রাণী খুঁজে পাওয়া সময়ের ব্যপার মাত্র। তবে তিনি এও বলেন যে মহাবিশ্বটা অনেক বড়। ১০০ বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সির সমন্বয়ে গঠিত এই মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণীর আবাস বের করতে একটু সময় লাগবেই। তবে ঠিক কতটা সময় লাগবে তা আগে থেকেই বলা সম্ভব নয়।
কোথায় আছে তারা
আমাদের কল্পনার রাজ্যে বসবাস করা এই আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতাগুলো কোথায় থাকতে পারে? এক সময় ধারণা করা হতো সৌর জগতের কোনো গ্রহেই হয়তো পাওয়া যাবে প্রানের স্পন্দন। কিন্তু এখন জানা যে প্রানের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও বুদ্ধিমান প্রাণী সৌরজগতের আর কোথাও নেই। তবে বিজ্ঞানীরাও বসে নেই। সৌরজগতের সীমানা পেরিয়ে তাঁদের দৃষ্টি এখন অসীমে। দিন দিন গবেষণার পরিধি বেড়েই চলেছে। সুতরাং সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আমরা আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করব। আশাবাদী হতে দোষ কিসের বলুন?
সৌরজগতের মত অসংখ্য নক্ষত্র জগত রয়েছে মহাকাশে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র আর ১০০ বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত আমাদের এই মহাবিশ্ব। হিসাব করে দেখুন এই বিপুল সংখ্যক নক্ষত্রে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব গানিতিক সম্ভ্যবতার সাধারণ সূত্র মানে ওই কয়েন-লুডুর ডাইস সূত্র মতেই কত বেশি!
স্বাভাবিক ভাবে সম্ভ্যবতার মাত্রাটা অনেক বেশি হলেও আসলে তা হবার নয়। কারণ এই অসংখ্য নক্ষত্রের সবারই গ্রহ বা উপগ্রহ থাকবে এমন ধারণা সম্ভব নয়। তারপরেও জ্যোতির্বিদ এনড্রু ক্যমারনের মতে মহাবিশ্বে বিদ্যমান নক্ষত্রগুলোর ৩০ শতাংশেরই রয়েছে গ্রহ পরিবার। তারপরেও সম্ভাবনার মাত্রা কিন্তু অনেক বেশি। এই অসংখ্য গ্রহরাজির কোনটাতে প্রানের স্পন্দন রয়েছে তা শনাক্ত করা সহজ কাজ নয়! এদের কোনটিতেই হয়তো বাস করছে বুদ্ধিমান প্রাণীর পরিবার...
হ্যাবিটেবল জোন
হ্যবিটেবল জোন হলো নক্ষত্রের আওতাধীন একটি বিশেষ অঞ্চল। হ্যবিটেবল জোন হলো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে যে জগত তার একটি নিরাপদ অঞ্চল। যে কারণে এ অঞ্চলে প্রানের বিকাশ সম্ভব হ্য় এবং প্রানের অস্তিত্ব টিকে থাকে। যেমন সৌরজগতের মধ্যে পৃথিবীর অবস্থান একটি হ্যবিটেবল জোনে। হ্যবিটেবল জোনের অবস্থানের ক্ষেত্রে নক্ষত্রের আকার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে মহাকাশে হ্যবিটেবল জোন ব্যতীত প্রানের বিকাশ নিরাপদ নয়। মহাকাশের অসংখ্য নক্ষত্ররাজির মধ্যে কতগুলোতে এই জোন রয়েছে তা জানা গেলে আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতার কথা জানা যেত। হয়তো পৃথিবী যেমন সূর্যের একটি বিশেষ হ্যবিটেবল জোনে অবস্থান করছে তেমনি আরও অসংখ্য হ্যাবিটেবল জোন রয়েছে মহাকাশে এবং অসংখ্য সভ্যতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মহাকাশে!!!
ড্রেকের সমীকরণ
মহাবিশ্বে বিদ্যমান বুদ্ধিমান প্রাণীর সংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণায় বিজ্ঞানী কার্ল সেগান এবং ড্রেক যৌথভাবে সমীকরণ প্রদান করেন। আমাদের গ্যালাক্সিতে কতগুলো গ্রহ থাকতে পারে তার বিজ্ঞানসম্মত অনুমান এবং আরও কিছু রাশির সমন্বয়ে এই সমীকরণ প্রদান করা হয়েছে। এই সমীকরণের মাধ্যমে এই দুই বিজ্ঞানী হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, মহাবিশ্বে অসংখ্য বহির্জাগতিক সভ্যতা ছড়িয়ে আছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র মিল্কিওয়ে গ্যলাক্সিতেই রয়েছে ১০ লাখ সভ্যতা ! তাই যদি হয় তাহলে খুব শীগগিরই হয়তো আমরা আমাদের বহির্জাগতিক সঙ্গীদের খুঁজে পাব...
যদিও ড্রেকের সমীকরণ মহাকাশে প্রানের সন্ধান সম্পর্কে বাস্তব কোনো প্রমান নয়, তবুও ড্রেকের এই পূর্বভাস থেকেই জন্ম নিয়েছে বহির্জাগতিক কাল্পনিক সভ্যতা “এলিয়েন-কালচার” আর স্টার ওয়ার, এক্স ফাইলস, এভাটার- এর মতো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা, সিরিয়ালের কল্যাণে এলিয়েনরা মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে বাস্তবরূপে... আবার কিছু প্রাচীন নিদর্শন এবং কিছু ব্যাখ্যাতীত ঘটনা ভিন গ্রহের প্রাণীদের নিয়ে আমাদের কল্পনার জগতকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
মহাকাশে প্রানের অস্তিত্ব নিয়ে তেমনি কিছু রহস্য এবং প্রমাণ নিয়ে এই সিরিজ লেখার ইচ্ছা আছে।
কৃতজ্ঞতাঃ শওকত ওসমান ভাই এবং রকিব হাসান
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০২