somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুজীব কর্পোরেট বিজ্ঞাপনগাঁথা (তৃতীয় কিস্তি)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জিন্স! আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে সবসময়ের ফ্যশান অনুসঙ্গ। শুধু তরুণ কেন সব বয়সের মানুষের কাছেই জিন্স এর আবেদন অতুলনীয়। যদিও কয়লা শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য সর্বপ্রথম জিন্স কাপড়ের প্রচলন শুরু হয়েছিলো সময়ের পরিবর্তনে সেই জিন্স এখন হয়ে উঠেছে সকল সমাজের মানুষের ব্যবহার্য পণ্য...

কত নামী-দামি কোম্পানি বিশ্বজুড়ে ব্যবসা করে লাভবান যাচ্ছে শুধু এই জিন্স এর পোশাক বিশেষ করে প্যান্ট বাজারজাত করে ! আমার অণুজীব কর্পোরেট বিজ্ঞাপন গাঁথা সিরিজ এর তৃতীয় কিস্তিতে আমি আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব আমার একজন অণুজীব ক্লায়েন্ট যিনি বিগত কয়েক বছর ধরে জিন্স প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর জন্য (নীল রং করবার কারিগর হিসেবে)কাজ করে যেতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করে যাচ্ছেন !
শুধু জিন্স কেন অন্য যেকোনো কাজেই ব্যবহার্য নীল রং করবার দক্ষ কারিগর হিসেবে তিনি কাজ করতে প্রস্তুত ! আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি আবার কি আবোল তাবোল কথা বলছি, অণুজীব আবার কিভাবে এই কাজ করবে তাই না?
হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষ নীল রং প্রস্তুতির অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে। বাইবেল এ বর্ণিত প্রাচীন মেডিটেরারিয়ান অঞ্চলে ব্যবহৃত এক ধরণের নীল রং এর কথা বর্ণিত আছে যা এক প্রকার শামুকের লালা থেকে তৈরি করা হত। এই শামুকের লালা বাতাশ এবং আলোর সংস্পর্শে আসলে নীল রং এ পরিণত হতো। নীল রং উৎপাদন করার আরেকটি পদ্ধতি হলো নীল গাছ থেকে নীল উৎপাদন। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের গণ আন্দোলনের মাঝে বাংলার নীল বিদ্রোহ ছিলো অন্যতম যার প্রেক্ষাপট ছিলো ইংরেজ ব্যবসায়ী এবং সরকার দ্বারা বাংলার কৃষকদের জোর পূর্বক নীল চাষ করানো। এই নীল রং ইন্ডিগো নামক রাসায়নিক উপাদান হতে উৎপন্ন হয়। পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন নীল রং রাসায়নিক উপায়ে কৃত্তিমভাবে তৈরি করা শুরু হতে থাকে। ১৮৯৭ সালে জার্মানিতে প্রথম এই সিনথেটিক ইন্ডিগো কোল-টার (আলকাতরা) এর উপাদান হতে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীর দিকে এই সিনথেটিক রং “ব্লু ফ্যশান” এর দিকে মানুষকে তাড়িত করা শুরু করে। পুলিশে কালো ইউনিফর্ম এর পরিবর্তে নীল চালু হতে থাকে, ব্ল্যাক স্যুট থেকে ব্লু স্যুট এর প্রচলন শুরু হয়। আর ১৯৫০ এর দিকে তরুণ প্রজন্ম ব্যপকভাবে আকৃষ্ট করে ব্লু জিন্স।
এতোক্ষণ বলছিলাম ব্লু জিন্স এর ট্রেন্ড শুরুর গোড়ার কথা। তারপরের অংশটা প্রায় সকলেরই জানা। ডেনিম, লেভিস এসব নামকরা ব্র্যান্ড এর কথা উঠলেই আমাদের মনে ভেসে উঠে সেই ব্লু জিন্স এর কথা। আমাদের জন্যে জিন্স তৈরি করতে গিয়ে এই কোম্পানিগুলো ব্যবহার করে আসছে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যা কারখানা থেকে ব্জ্র্য হিসেবে বের হয়ে আমাদের পরিবেশের ইকোসিস্টেম অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে। যেমন ডেনিম তাদের জিন্স কালার করার জন্য যে সালফার ডাই ব্যবহার করে তার ৫০% ই পানিতে অব্যবহৃত থেকে যায় যা রিকভার করা প্রায় অসম্ভব।

অথচ আমাদেরকে পরিবেশ দূষণ ছাড়াই সুন্দর সুন্দর জিন্স পরবার অভিনব এক পদ্ধতি নিয়ে এগিয়ে এসেছে অনেক কাজের কাজী আমাদের পরিচিত ব্যাকটেরিয়া ই. কোলি (Escherchia coli). আপনারা অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি গুল মারছি ! আসলে তা নয়।
ই. কোলি ব্যাকটেরিয়ার এমন গুণের কথা প্রথম নজরে আসে অস্ট্রেলিয়ান টক্সিকোলজিস্ট এলিজাবেথ গিলাম এর। ভদ্রমহিলা তার গবেষণাগার এ মানুষের ডি এন এ দিয়ে প্রতিস্থাপিত ই. কোলি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কিন্তু তিনি দেখতে পান ব্যাকটেরিয়ার কালচার মিডিয়াম টি কেন যেন নীল রং এ পরিণত হয়ে যাচ্ছে। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো কালচার মিডিয়ামে মোল্ড সংক্রমণের ফলে এমনটি হচ্ছে। পরবর্তীতে তিনি আরও সতর্কতার সাথে ব্যাকটেরিয়ার কালচার করেন। এবার যেন কোনো রকম সংক্রমণ না হয় সেজন্য তিনি সচেষ্ট থাকলেও ব্যাকটেরিয়ার মিডিয়াম পুনরায় নীল রং ধারন করলে তিনি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি কালচার মিডিয়ামের এই অনাকাঙ্ক্ষিত নীল রং এর উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সমস্যার সমাধানের জন্য ভ্যন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরই সহযোগী ফ্রেড গুয়েনজেরিখ এর স্মরণাপন্ন হন। তাঁদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে এই ই. কোলি ব্যাকটেরিয়া তার মেটাবলিজম এর অংশ হিসবে কালচার মিডিয়ামে বিদ্যমান উপাদান ব্যবহার করে নীল রং উৎপন্ন করতে সক্ষম। পরবর্তী পোষ্টে ই. কোলি ব্যাকটেরিয়ার নীল রং উৎপাদনের এই প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করব।

প্রথম কিস্তি

দ্বিতীয় কিস্তি
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×