বদলে যাচ্ছে বইয়ে লিখিত প্রানের সংজ্ঞা !!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
জীববিজ্ঞান বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী আমরা জানি জীবনের মৌলিক উপাদানগুলো হল কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফার। এর মধ্যে ফসফরাস হল DNA এবং RNA এর রাসায়নিক গঠনের কেন্দ্রীয় উপাদান, যেগুলোকে আমাদের জিনের মূল হিসেবে আমরা চিহ্নিত করে থাকি। এই ফসফরাস আবার ফসফোলিপিড রূপে জীবদেহে প্রোটিন এর অংশ হিসেবেও কাজ করে। আবার Energy currency (শক্তিমুদ্রা) নামে পরিচিত ATP রয়েছে ফসফরাস।
আমাদের প্রাণকে আবার কার্বন ভিক্তিক প্রাণও বলা হয়, কারণ কার্বনের রয়েছে নিজের সাথে নিজেকে যুক্ত করে যৌগিক অনু তৈরী করার ধর্ম। Stephen Hawkins তার গ্রান্ড ডিজাইন বইয়ে কার্বন ভিত্তিক ব্যতীত প্রাণের কথা বলেছেন। কার্বনের মতই ধর্ম দেখা যায় সিলিকনের মাঝে। তাই Hawkins তার বইয়ে বলেছেন বহিঃবিশ্বে আমরা হয়তো কার্বন ভিত্তিক প্রাণ পেলাম না, কিন্তু কে বলতে পারে, সিলিকন ভিত্তিক প্রাণ পেতে পারি। তারপরেও এটি কেবল তাঁর একটি অনুমান ছিল। তাই বহিঃবিশ্বে আমরা শুধু আমাদের মত প্রাণের কথাই চিন্তাই করেছি এবং আমাদের পৃথিবীর পরিবেশের মত আরেকটি পরিবেশই খুঁজছি।
কিন্তু আমরা যে আমাদের নিজেদের বাড়ির সীমানাই ভাল করে জানিনি তার একটি প্রমাণ পাওয়া গেল সাম্প্রতিক নাসার Astrobiology গ্রুপের গবেষণায়। এবার নাসার গবেষকেরা গবেষণায় পেয়েছেন এমন একটি প্রাণ যার গঠন আমাদের প্রাণের গঠন থেকে ভিন্ন। এই গবেষণা আমাদের প্রাণের সংজ্ঞাকে আরো বৃহৎ ব্যাপ্তিতে নিয়ে যাবে, এবং পাঠ্য বইয়ের প্রাণের সংজ্ঞাকে বদলে দিবে। এর ফলে মহাবিশ্বে এখন আমরা শুধু আমাদের পৃথিবীর মতই পরিবেশ খুঁজবো না, কিংবা আমাদের মতই প্রাণ খুঁজবো না। আমরা এখন যে কোন বিরূপ পরিবেশেও প্রাণের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিবো না। এই গবেষণা মহাবিশ্বে প্রাণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরো অনেক গুণে বাড়িয়ে দিল।
আর্সেনিক আমাদের মত ফসফরাস ভিত্তিক প্রাণের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু আর্সেনিক এবং ফসফরাসের ধর্ম অনেক কাছাকাছি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন যে, যদি ফসফরাসকে আর্সেনিক দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা সম্ভবপর হয় তবে ভিন্ন প্রাণ সম্ভব হলেও হতে পারে। তাই গবেষকেরা California এর Mono Lake, যেখানকার পানি প্রচুর আর্সেনিকযুক্ত, লবনাক্ত, সেখানে হতে কিছু মাইক্রোব সংগ্রহ করেছেন। এই মাইক্রোবগুলো অনেক ক্ষুদ্র আকারের ব্যাকটেরিয়া যা GFAJ-1 নামে পরিচিত। নাসার Astrobiology Instituteএর বিজ্ঞানী Wolf-Simon এর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা এরকম মাইক্রোবকে খুব অল্প ফসফরাস কিন্তু বেশি আর্সেনিক এর মত পরিবেশে রেখে দেখতে পেলেন যে মাইক্রোবগুলো সেই পরিবেশেও টিকে আছে এবং নিজেদেরকে সংখ্যায় বৃদ্ধি করছে । এরপর গবেষকেরা ফসফরাস সম্পূর্ণ সরিয়ে শুধু আর্সেনিক পূর্ণ পরিবেশে এই মাইক্রোবদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে পেলেন যে সেই পরিবেশেও মাইক্রোবগুলো টিকে থাকছে এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি করছে। এই মাইক্রোবগুলো তাদের DNA তে অবস্থিত Sugar-Phosphate চেইন এ ফসফরাস এর পরিবর্তে আর্সেনিক মৌল নিয়েই কোন রকম লক্ষণীয় পরিবর্তন ছাড়াই বংশবৃদ্ধি করেছে।
এটি একটি সম্পূর্ণ নুতন বিষয় বিজ্ঞানীদের জন্য। কারন Watson-Crick এর DNA মডেল অনুযায়ী এর মূল কাঠামো তৈরি হয় Sugar-Phosphate molecule এর alternating চেইন দ্বারা। একটি Phosphate molecule একটি ফসফরাস এবং চারটি অক্সিজেন অনু ধারন করে, যার অর্থ ফসফরাস না থাকলে ফসফেট গঠন সম্ভব না আর ফসফেট না থাকলে DNA এর সংগঠনই অসম্ভব আর DNA সংগঠিত না হলে যে জীবনের অস্তিত্বই কল্পনাতীত!!
আরও সঠিক পর্যবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞানীরা DNA তে Arsenic যুক্ত GFAJ-1 ব্যাকটেরিয়া গুলোকে এবার ফসফরাস সম্বৃদ্ধ culture medium এ বংশবৃদ্ধি করান এবং দেখতে পান এগুলো ফসফরাস- আর্সেনিক এর কম অথবা বেশি পরিমানের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী Generation গুলোর DNA ফসফরাস অথবা আর্সেনিক দ্বারা গঠিত হচ্ছে। Micro extended X-ray absorption fine structure spectroscopy (µEXAFS) পদ্ধতির মাধ্যমে তারা দেখেন যে, আর্সেনিক ঠিক ফসফরাসের মত DNA তে অক্সিজেন এবং কার্বন এর সাথে বন্ধন গঠন করেছে।
ফসফরাস ভিন্ন এমন প্রাণের সম্ভাবনা বিজ্ঞানীরা কখনো ভাবেননি। দেখা যাচ্ছে যে এই মাইক্রোবগুলোর প্রাণের গঠন এখন সম্পূর্ণ আর্সেনিক ভিত্তিক হয়ে গেছে। আগের প্রাণের সংজ্ঞায় এদেরকে জীবিত বলা সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু এই নুতন মাইক্রোবগুলো জীবিত এবং বংশবৃদ্ধি করছে। অর্থাৎ এদেরকেও এখন আমাদের পাশাপাশি নুতন প্রাণ হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে। এখন আমরা আশা করতে পারি যে অন্য কোন গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে, কিন্তু তারা হতে পারে ভিন্ন রাসায়নিক গঠনের।
বিবর্তন বিদ্যাকেও এখন আবার নুতন ভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু মাত্র একটি ট্রি অফ লাইফ হিসেবে চিন্তা না করে একাধিক ট্রি অফ লাইফকে সম্ভাবনায় রাখতে হবে। কে বলতে পারে হয়তো বিলিয়ন বছর পরে এই আর্সেনিক যুক্ত প্রাণ থেকেও উন্নতর বুদ্ধিমত্তা বিশিষ্ট প্রাণ তৈরী হতে পারে। ততদিন এই মানুষ টিকে থাকবে না কিনা সেটা তারচেয়েও বড় প্রশ্ন। আমরা পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, ওজোন স্তর নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলেও, মানুষ বা কার্বন/ফসফরাস ভিক্তিক প্রাণ ধ্বংস হয়ে গেলেও, এই আর্সেনিক ভিক্তিক প্রাণ হয়তো টিকে থাকতে পারে এবং কিংবা নুতন প্রাণের উদ্ভব হতে পারে এবং প্রাণের বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কে জানে !!!!!!!!!
নাসার Astrobiology Institute (NAI) এর বিজ্ঞানী Wolfe-Simon এর এই গবেষণা ফলাফল ২/১২/২০১০ইং তারিখে Science Express এবং Science জার্নাল এ প্রকাশিত হয়।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন