সিরাজগঞ্জ আমার জন্মস্থান হলেও গ্রামের সাথে আমার হৃদ্যতা তৈরি হয় মূলত বিয়ের পরে ঘন ঘন শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কারনেই। শহরে পাশের ফ্লাটে কে থাকে সেই খবরও অনেকে রাখে না কিন্তু গ্রামে সেটা হওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানে সবাই সবাইকে চিনে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই এরা থমকে দাঁড়াবে, বলবে "বাবা, তোমারে তো চিনলাম না! তুমি কোন বাড়ির ছাওয়াল?" গ্রামের মানুষরা এমনিতেই সহজ সরল হয় আর আমাদের এই অঞ্চলের মানুষদের সরলতার একটা নিজস্ব সুনাম আছে। কাউকে সাহায্য করতে পারাটা এদের জন্য খুব আনন্দদায়ক একটা ব্যাপার। আপনি যদি কারো কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চান, দেখবেন এরা আপনাকে সানন্দে সেই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছে। তবে চাপাবাজিতে এদের জুড়ি মেলা ভার। পরনে ছেড়া শার্ট, বাসায় হয়তো বাজার নাই কিন্তু কথা দিয়ে এরা অনেক রাজা উজির মেরে ফেলবে। আর এই অঞ্চলের মানুষের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো, এরা আদর করেও এমন সব ভয়ংকর গালি দিয়ে বসে যা শুনলে আপানার নিজেকেই অপবিত্র মনে হবে।
কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনের সময় আমি গ্রামেই ছিলাম। সেই সময়ের একটা মজার ঘটনা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না। গ্রামের এক ভদ্রলোক মেম্বার পদপ্রার্থী। উনার নিজস্ব বাঁশের কারবার আছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে বিশেষ করে দাফনের সময় বাঁশের প্রয়োজন হয়, গ্রামের অনেক দরিদ্র্য পরিবারের সেই বাঁশ কেনার সামর্থ্য থাকে না। উনি অনেক অসহায় পরিবারকে বিনামুল্যে বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। যাহোক, উনি উনার নির্বাচনী প্রচারণায় কিভাবে মাইকিং করেছেন সেটা হবুহু তুলে ধরছি "ভাইসব, আপনাদের অতি আপনজন গ্রামের বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক জনাব চান মিয়াঁ এইবার মেম্বার পদে নির্বাচন করতেছেন। আপনারা সবাই জানেন যে, উনি গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের বিপদে আপদে সবসময় বাঁশ দিয়েছেন। এরজন্য উনি কোনো টাকা-পয়সা নেন নাই। আপনারা যদি উনাকে এইবার ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন তাহলে উনি আবারো আপনাদের বাঁশ দিবেন। এর জন্য আপনাদের কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না।"