শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যেয়ে দেখি সেখানে বর্নমালা শিখানো হচ্ছে। “ক” তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার, তুই রাজাকার। “গ”তে গোলাম আজম তুই রাজাকার তুই রাজাকার। “দ” তে দেলোয়ার সাইদি ওরফে মেশিনগান তুই রাজাকার তুই রাজাকার। “স” তে সাকা চোরধরি তুই রাজাকার তুই রাজাকার, “ম” তে মখা আলমগীর তুই রাজাকার তুই রাজাকার, থুক্কু “ম” তে তো কিছু ছিল না, মনের ভুলে বইলা ফেলছি। সবার দাবি একটাই, সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। সবাই স্লোগান দিতে ব্যস্ত, কারো কথা বলার সময় নাই। তারপরও অনেক কষ্টে একজনকে বাগাইতে পারলাম।
“ভাই কি তাহলে সব যুদ্ধাপরাধীদেরই ফাঁসি চান?”
“হ্যাঁ, সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই।এই বাংলার মাটিতে রাজাকারের কোনো ঠাই নাই”
“তাহলে ভাই যাদের এখনো ধরা হয় নাই তাদের কথা কিছু কন না কেন?”
“আরেহ মিয়া, আগে এদের ফাঁসি হোক, তারপর বাকিদের ধরমু”
"নাকি ভাই, বাকিদের কথা কইলে পুলিশ পেদায়া পাছা লাল কইরা দিব”
“ওই মিয়া ফালতু কথা কন কেন? যান ফুটেন!”
“আরেহ ভাই, মজা করলাম...এতো চেতেন ক্যান? আচ্ছা ভাই ফাঁসিটা চান কার কাছে? সরকারের কাছে?”
“কি কন মিয়া! সরকারের কাছে চামু কি? সরকারও তো আমাদের সাথে। ওদেরও তো একি দাবি। আমাদের দাবি হইল ট্রাইব্যুনালের কাছে”
“তার মানে ট্রাইব্যুনালের উপরে সরকারের কোনো প্রভাব নাই?”
“প্রভাব থাকলে কি আর ফাঁসি হইত না?”
“ওহ তাইতো!!” (হঠাৎ করে দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় মনডা আনন্দে ভইরা উঠলো)
আবার জিগাইলাম “কিন্তু ভাই, ট্রাইব্যুনালই কন কিংবা গ্রামের পঞ্চায়েতই কন? বিচার চাইতে হইলে তো ন্যায়বিচার চাইতে হয়। রায় যদি আমরাই দিয়া দেই তাইলে আর বিচার কইরা লাভ কি?”
“আরেহ ভাই,ওরা যে অন্যায় করছে তাতে ফাঁসিই ওদের একমাত্র শাস্তি”
“তাহলে আর বিচার চান ক্যান? ট্রাইব্যুনালরে কন, আসামি গুলারে আপনাদের হাতে তুইলা দিতে, আপনারা প্রজন্ম মঞ্চেই ওদের লটকায়া দেন”
ভাইজানে কিছুক্ষনে চোখ গরম করে তাকায়া বলা শুরু করলো “তুই রাজাকার, তুই রাজাকার”
প্রজন্ম চত্বর থেকে রাজাকার উপাধি নিয়ে পরদিন গেলাম বায়তুল মোকারাম মসজিদে জুমার নামাজ পরতে। নামাজের পর দেখি সব মোল্লারা ষাঁড়ের মতো ফোঁস ফোঁস করতেছে। এক মোল্লারে জিগাইলাম “ কি ভাই? এরকম ফাল পারতেছেন ক্যান?”
মোল্লায় জবাব দিল, “সব প্রজন্ম মঞ্চ গুঁড়া কইরা দিয়া আসমু, শালা নাস্তিকের দল আমাদের ধর্ম আর নবীজিরে নিয়া উল্টাপাল্টা কথা লিখছে”
“ ভাই, ওড়াত লিখতেছে অনেক আগে থেকে হঠাৎ করে আপনি জানলেন ক্যামনে?”
“পত্রিকা পইড়া জানছি, আর হুজুররাও বলছে”
“এতদিন পত্রিকায় দিল না হঠাৎ কইরা এখন দেয়া শুরু করলো, বুঝতেছেন না? এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো চালাকি আছে”
“কোনো কিছু বুঝাবুঝির মধ্যে নাই।বাংলার মাটিতে নাস্তিকদের কোনো ঠাই নাই”
“ কিন্তু ভাই, ওই মঞ্চে তো শুধু নাস্তিক নাই, মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৈদ্ধ সব ধর্মের লোকই আছে। আর ঐখান থেকে তো ধর্মবিরোধী কিছু বলা হইতেছে না। যারা যুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এইসব অন্যায়ের সাথে জড়িত ছিল তাদের ফাঁসি চাইতেছে।”
মোল্লায় আমার উপর কিছুক্ষণ চোখ গরম কইরা তাকায়া বলল “এই শালারে ধর! এই বেটা নাস্তিক!”
“আরেহ মিয়া আমারে পরে ধইরেন, আপনার যে কান নাই সেই খেয়াল আছে!”
“ হ্যাঁ?কন কি? কান কে নিল?”
“ কানতো চিলে নিয়া গেছে!”
“ চিলে নিছে? হায় হায়! চিল কোনদিকে গেছে?”
“ চিল গেছে শাহবাগের দিকে। তারাতারি যান তা নাহইলে সারাজীবন কান ছাড়া ঘুইরা বেড়াবেন”
মোল্লায় প্রানপন চিলের পিছে ছুটল আর আমিও জান নিয়া ঘরে ফিরলাম।