সময়মত ট্রেন না পৌছায় আমরা পাঁচ দাবাড়ু প্রায় মধ্যরাতে পুরাতন দিল্লি রেলস্টেশনে পৌঁছলাম। আমাদের যে হোটেলে রাখার কথা ছিল সেটা খুব বেশি দূরে না কিন্তু এত রাতে রিস্ক নিয়ে যাওয়াটাও ঠিক হবে না। তাই ভোরের অপেক্ষায় ওয়েটিং রুমে বসেছিলাম। সেখানে এক বাংলাদেশি তরুন দম্পতির সাথে পরিচয়। তরুণটি পেশায় ডাক্তার আর উনার স্ত্রী গৃহিণী। পরিচয়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা হয়ে গেলাম শ্রোতা আর ডাক্তার গৃহিণী হয়ে গেলো বক্তা। উনি এবং উনার ডাক্তারপতি কিভাবে উনাদের একান্নবর্তী পরিবারের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে দিচ্ছেন তার বিশদ বর্ণনা শুনতে শুনতে সময় কেটে যাচ্ছিলো। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য উনার স্বল্পভাষী ডাক্তার স্বামীর সাথে আলাপ শুরু করলাম। পেশায় ডাক্তার হলেও টাকা উপার্জনের চেয়ে ঘুরে বেড়ানোতেই উনার আনন্দ বেশি। এর আগে কি একটা ট্রেনিং এর জন্য পাকিস্তানের পেশোয়ারেও উনি বেশ কিছুদিন ছিলেন। পাকিস্তানের প্রসঙ্গ আসলেই চোখের সামনে সন্ত্রাসবাদ, বোমাবাজি, খুন-খারাপি এইসব দৃশ্য আপনাআপনি চলে আসে। এই কারনে পাকিস্তানীদেরও আমরা উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী ভেবেই অভ্যস্ত। উনার কাছে জানতে পারলাম পাকিস্তানের সাধারন মানুষেরা নাকি মোটেও সেরকম নয় বরং আতিথীয়তায় তাদের তুলনা মেলা ভার।কিন্তু ওদের রাজনীতিবিদরা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মতোই ভয়ংকর খারাপ। ক্ষমতার লোভে ওরা এমন কোন কাজ নেই যা করতে পারে না। এই কারনেই দেশটার অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। আত্মঘাতী বোমা হামলার কথা উল্লেখ করাতে উনি জানালো এইসবই ঘটায় কিছু কিছু প্রদেশের বঞ্চিত মানুষেরা। বেলুচিস্থান সহ আর কিছু প্রদেশের মানুষেরা সব রকমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যে সরকারই আসুক সব সুবিধা ভোগ করে করাচি, লাহোরের লোকজন। এই কারনেই ওদের ভিতরে অনেক দিন ধরেই প্রচণ্ড রকম ক্ষোভ জমে আছে। এমনকি এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওরা সংঘঠিত হতে গেলেও দেখা যায় ওদের নেতাদের গুম করে ফেলা হয়। আত্মঘাতী হামলা এই ক্ষোভেরই প্রকাশ। বঞ্চিত মানুষের ক্ষোভ একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ঠ।
(চলবে)