somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশরীরী

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টানা চার ঘণ্টা ঘুম দিয়ে রাতুলের শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। এখন শুধু এক কাপ চা, ব্যস! সব ক্লান্তি দূর! চুলোয় পানি চরিয়ে দিয়ে রাতুল চা পাতি খুঁজতে থাকে। হঠাৎ কিচেনের পাশেই তালাবদ্ধ একটা দরজার দিকে চোখ পরতেই তীব্র এক ভয়ে রাতুলের সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠে। এই ফ্লাটে যে আরেকটা রুম আছে সেটা সে খেয়ালই করেনি। ভয়টা কিছুতেই যাচ্ছে না। তালাবদ্ধ একটা ঘর দেখে এত ভয়ের কি আছে সেটাও ঠিক মাথায় ঢুকছে না। ভয় কাটানোর জন্য রাতুল উচ্চস্বরে গান ধরে।কিন্তু তারপরও যতবারই সেই বন্ধ ঘরের দিকে চোখ যাচ্ছে ততবারই শরীরের লোমগুলো যেন দাড়িয়ে যাচ্ছে। নাহ! ওই ঘরের দিকে আর তাকানোই যাবে না। রাতুল তাড়াহুড়ো করে চা বানিয়ে বারান্দায় চলে আসে। বারান্দায় আসার পরেই ভয়টা যেমন হঠাৎ করে এসেছিল তেমনি হঠাৎই চলে যায়। এখান থেকে কুয়ালালামপুর শহরের অনেক খানি দেখা যাচ্ছে। অসাধারণ লাগছে দেখতে!
রাতুল দাবা খেলোয়াড়। এখানে এসেছে একটা টূর্নামেন্ট খেলতে। উঠেছে বড় ভাইয়ের বন্ধু শামিমের বাসায়। শামীমরা ৪ বন্ধু মিলে ১৩ তলার এই ফ্লাটটা ভাড়া নিয়ে থাকে চাকরিও করে একই কোম্পানিতে।
“হ্যালো, আপনি কি বাংলাদেশী?” একটা চাইনিজ মেয়ে পাশের ফ্লাটের বারান্দা থেকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলছে।
“হা! কীভাবে বুঝলেন?”
“বুঝব না কেন? এই ফ্লাটে তো সব বাংলাদেশিরাই থাকে” মেয়েটা হাসতে হাসতে জবাব দিল।
চাইনিজদের বয়স যদিও বোঝা যায় না তারপরও মেয়েটার বয়স সতের/আঠারোর বেশি হবে না। মেয়েটার নাম জেবিন। চাইনিজ হিসেবে নামটা খাপ খায় না, রাতুল এটা বলতেই জেবিন জানালো ওর আগের নাম ছিল জূ চেন। এখানে এসে ওরা মুসলিম হয়ে নাম পরিবর্তন করেছে। জেবিনের বাবা অনেকদিন ধরেই এখানে ব্যবসা করে,একটা নিজস্ব কন্সট্রাকসন ফার্মও আছে। রাতুল দাবা খেলতে এসেছে শুনে জেবিন খুব অবাক হোল। এর আগে কখনও ও দাবা খেলোয়াড় দেখেনি। ও বায়না ধরল ওকেও দাবা খেলা শিখাতে হবে। প্রথম দেখাতেই জেবিনকে ভালো লেগে যায় রাতুলের। খুব উচ্ছল আর প্রানবন্ত মেয়ে। ওর সাথে গল্প করতে করতে লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যায়। জেবিন বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর রাতুল কিচেনে ফিরে লাঞ্চ করার জন্য। আবার সেই ভয়টা জাঁকিয়ে বসে। মনে হয় কেও যেন সেই তালাবদ্ধ ঘরটা থেকে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাতুল ভাবে বাইরেই লাঞ্চটা সেরে নিবে। লাঞ্চ সেরে বাইরে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে রাতুল ইচ্ছে করেই দেরি করে ফিরে। ততক্ষণে শামিম আর তার বন্ধুরা কাজ সেরে বাসায় ফিরেছে।
“কি ব্যাপার? তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষন?” শামিম একটু রাগত স্বরে জানতে চায়।
“এই একটু ঘুরেফিরে দেখলাম, সরি! দেরি হয়ে গেলো” শামিম ভাইয়ের রাগ দেখে রাতুল হকচকিয়ে যায়।
“আমাকে একটু ফোন করে জানাবে না? আমিতো অনেক টেনশনে ছিলাম”
শামিম ভাইয়ের এক বন্ধু ঠাট্টার ছলে বলে, “আমরা তো ভাবলাম, আপনে ভাই! ভয়ের চোটে আবার দেশে ফিরে গেছেন”
রাতুল ভাবছিল এই ভয়ের ব্যাপারটা সবার সাথে শেয়ার করবে কিন্তু এরা সবাই যেরকম ঠাট্টার মুডে আছে তাতে সেটা করা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। আর এছাড়াও পরদিন থেকে খেলা শুরু হচ্ছে। সকালে সবার সাথে নাস্তা করে দুপুর পর্যন্ত বারান্দায় কাটিয়ে দিলেই হবে। তারপর বাইরে লাঞ্চ করে বাকি সময়টা খেলতে খেলতেই কেটে যাবে।
পরদিন জেবিন ইন্টারনেট ঘেঁটে রাতুলকে বাংলাদেশ সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানালো যার অনেক কিছু রাতুল নিজেও জানত না। বাংলাদেশের মুষলধারে বৃষ্টি জেবিনের অনেক পছন্দ।
“আমার সাথে চলো, তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজব” রাতুল হাসতে হাসতে বলে।
“সত্যি বলছ? ঠিক আছে নিয়ে যাও আমাকে!” জেবিনও হাসতে হাসতে জবাব দেয়।
সেই ভয়ের অভিজ্ঞতাটা বাদ দিলে বাকি সময় রাতুলের ভালই কাটছিল। রাতুল বুঝতে পারে জেবিন ওর প্রতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পর জেবিন জানতে চায় রাতুলের কোনও প্রেমিকা আছে কিনা? রাতুলও অবলীলায় না উত্তর দেয়। সত্যি কথা বলে এই সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করার কোনও মানে নেই।
দেশে ফেরার সময় হয়ে গেছে। আর মাত্র দুই দিন বাকি।শেষ দুই দিন জেবিনের কোনও দেখা নেই। পাশের ফ্লাটে যেয়ে খবর নিবে সেই সাহসও হচ্ছিলো না।
শামিম রাতুলকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিতে আসে। ফ্লাইটের এখনো অনেক দেরি।
“তোমাকে বেশি সময় দিতে পারলাম না। দেখলে তো কিরকম পরিশ্রম করতে হয়। দেশের মানুষতো ভাবে আমরা এখানে হাওয়া লাগিয়ে টাকা রোজগার করি”
“না না! ঠিক আছে। আমার সময় খারাপ কাটেনি। আপনাকে একটা কথা বলবো ভাবছিলাম, আপনাদের কিচেনের পাশে যে ঘরটা দেখলাম, ওখানে কেউ থাকে না কেন?”
“ওহ! ওই তালামারা ঘরটার কথা বলতেছ? ওইটার একটা কাহিনী আছে তুমি ভয় পেতে পারো ভেবে এতদিন জানাইনি। একটা মেয়ে ওই ঘরে আত্মহত্যা করেছে। এরপর থেকে ওই ঘরে কেউ থাকতে পারে না, ভয় পায়”
“ওহ! আত্মহত্যা কেন করেছে?”
“শুনেছিলাম...এক বাঙ্গালী ছেলের সাথে নাকি গভীর প্রেম ছিল। ওই ছেলেটা আবার দেশে একটা বিয়ে করে এসেছে। এইখানে ওয়ার্ক পারমিট শেষ হয়ে গেলে মেয়েটাকে না জানিয়েই চলে যায়। এটা জানার পর মেয়েটা আত্মহত্যা করে”
“মেয়েটা কি এই দেশেরই?”
“নাহ! এক মুসলিম চাইনিজ মেয়ে”
এই কথা শোনার পর রাতুলের সারা শরীর কেমন যেন শিরশির করে উঠে।
“মেয়েটার নাম জানেন নাকি?”
“জেরিন না জেবিন মনে হয়। আমার ঠিক খেয়াল নেই”
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৫৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×