গ্রিকরা ট্রয়ে পৌছানোর পর থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বিজয় কখনো গ্রিকদের কখোনো ট্রোজানদের অনুকূল হচ্ছিলো। গ্রিকসেনাদল ছিলো খুবই শক্তিশালী কিন্তু ট্রয় বাহিনীও ছিলো পরাক্রমশালী। আক্রমন পরিচালনা করার জন্য ও প্রতিরক্ষা ব্যূহ রক্ষা করার জন্য রাজা প্রায়াম ও রানী হেক্যুবার ছিলো অনেক সাহসী পুত্র হেক্টর অপরদিকে গ্রিকদের শ্রেষ্ঠ বীর একিলিস ছাড়া পৃথিবিতে তার চেয়ে মহান ও সাহসী কেউ ছিলো না।
হেক্টর
এরিক বানা এজ হেক্টর ইন ট্রয় মুভি
প্রত্যেকেই জানতেন যে ট্রয় দখলের পূর্বেই একিলিসের মৃত্যু হবে। একিলিসকে তার মা বলেছিলেন যে তার জীবনকাল হবে খুবই সংক্ষিপ্ত অন্য দিকে হেক্টরকে যদিও কোনো দৈব চরিত্র কিছু বলেনি কিন্তু তিনিও জানতেন যে একদিন পবিত্র ট্রয় নগরী,প্রায়াম এবং প্রায়ামের লোকজন পরাস্ত হবে। মোট কথা উভয় পক্ষই যুদ্ধ করছিলেন নিশ্চিত মৃত্যুর ছায়ায়।
হঠাৎ একদিন একিলিস এবং আগমেমননের মাঝে বিবাদ বাধলো চিরচারিত সমস্যার কারন নারী কে নিয়ে যা কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধের গতি পাল্টে দিলো ট্রোজানদের অনুকুলে। এই নারীর নাম ছিলো ক্রাইসেসিস। সে ছিলো এ্যাপোলোর পুরোহিতের কন্যা যাকে গ্রিকরা অপহরন করে এনেছিলো এবং দিয়েছিলো আগামেমননকে। ক্রাইসেসিসের পিতা এসেছিলেন তার মুক্তি ভিক্ষা চাইতে কিন্তু আগামেমনন তাকে প্রত্যাখান করেন। তখন পুরোহিত প্রাথনা করেন এ্যাপোলোর কাছে এবং এ্যাপলো তা মন্জুর করেন। তিনি সূর্য রথ থেকে গ্রিক সৈন্যদের উপর নিক্ষেো করলেন ভয়ংকর সব তীর ফলে যন্ত্রনাবিদ্ধ হয়ে লোকজন মরতে লাগলো এবং শেষকৃত্যের চিতা জ্বলতেই লাগলো অবিরাম।
অবশেষে একিলিস দলপতিদের এক সমাবেশ ডাকলেন এবং এ্যাপলোর ক্রোধ নিরসনের আহ্বান জানালেন কেননা এ্যাপলোর ক্রোধ নিরসন করা না গেলে বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। অতঃপর ক্রাইসেসিস কে তার পিতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে আগামেমনন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং ক্রাইসেসিসের বদলে কুমারী ব্রিসেইস কে দাবী করেন যে কিনা একিলিসের সম্পত্তি ছিলো ! একিলিস যদিও ব্রিসেইসকে দিয়ে দিলেন কিন্তু অঙ্গীকার করে বললেন যে এই কাজের জন্য আগামেমননকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
ব্রিসেইসকে নিয়ে যাচ্ছে আগামেমনন
একিলিসের অপমান মেনে নিতে পারেননি থেটিস ও কাজেই তিনি একলিসকে মানা করলেন গ্রিকদের সাহায্য করতে এবং জিউসকে অনুরোধ করলেন ট্রোজানদের সাফল্য দিতে।
ট্রয়ের যুদ্ধের রেশ ইতিমধ্যে অলিম্পাসেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেবতারা একে অপরের বিপক্ষে চলে যাচ্ছিলেন। আফ্রোদিতি অবশ্যই ছিলেন প্যারিসের পক্ষে এবং হেরা ও আ্যাথেনা ছিলেন সমভাবে বিপক্ষে। এরিস সর্বদা আফ্রোদিতির পক্ষ নিতেন। পোসাইডন সর্বদাই সমর্থন করতেন গ্রিকদের। আ্যাপোলো উদ্বিগ্ন থাকতেন হেক্টের জন্য এবং তার স্বার্থেই সাহায্য করতেন ট্রোজানদের। আর্টেমিস তার বোনের পক্ষই অবলম্বন করলেন। সার্বিকভাবে জিউস ট্রোজানদেরকেই বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেন কেননা যখন তিনি খোলাখুলি ভাবে হেরার বিরোধিতা করেন তখন হেরা খুবই অনমনীয় হয়ে উঠতেন। কিন্তু জিউস রুখতে পারলেন না থেটিস কে। তখন হেরার সাথে জিউসের যাচ্ছিলো খুব কঠিন একটা সময়, হেরা বরাবরের মতই অনুমান করেলন জিউস কোন পক্ষের। হেরা এই চিন্তায় বিভোর ছিল যে কিভাবে গ্রিকদের সাহায্য করা যায় এবং জিউসের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হতে না দেওয়া যায় তার উপায় খুজতে।
জিউস যা পরিকল্পনা করেছিলেন তা ছিলো খুবই সরল। তিনি জানতেন একিলিস ব্যাতীত গ্রিকরা ট্রোজানদের চেয়ে দুর্বল। তিনি আগামেমননের কাছে পাঠালেন এক মুমূর্ষ স্বপ্নের অঙ্গীকার যে, যদি তিনি আক্রমন করেন তবে বিজয়ী হবেন। যখন একিলিস অপেক্ষা করছিলেন তার তাবুতে তখন সংঘটিত হতে যাচ্ছিলো এক ভয়ংকর লড়াই।
দু পক্ষের সেনাদল পিছিয়ে গিয়ে জায়গা করে দিলো প্যারিস ও মেনেলাউসের জন্য। এটি পরিষ্কার যে যুদ্ধে তাদের পরষ্পরের সাথে লড়াই করাটা যথেস্ট যুক্তিসঙ্গত ছিলো।
প্রথম আঘাত করলেন প্যারিস, কিন্তু মেনেলাউস তার বর্ম দ্বারা দ্রুতগামী বর্শাটিকে আটকিয়ে ফেললেন, অতঃপর সজরে নিক্ষেো করলেন তার নিজেরটি। এটি নিদীর্ণ করে গেলো প্যারিসের যুদ্ধ পরিচ্ছদকে কিন্তু তাকে আহত করলো না। মেনেলাউস বের করলো তার তরবারি, এটি ছিলো তার শেষ অস্ত্র কিন্তু এটি তার হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেলো। নিরস্ত্র ভাবেই তিনি ঝাপিয়ে পড়লেন প্যারিসের উপর এবং প্যারিসের শিরনাস্ত্র ধরে তার পায়ের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে দিলেন, এর পর তাকে তাকে টেনে বিজয়ের বেশে নিয়ে যেতে পারতেন গ্রিকদের দিকে যদি না আফ্রোদিতি এতে হস্তক্ষেপ করতেন। তিনি প্যারিসকে তুলে নিলেন এবং ঢেকে দিলেন মেঘ দিয়ে।
ক্রুদ্ধ মেনেলাউস খুজে ফিরলেন প্যারিসকে কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারলো না। অতঃপর আগামেমনন উভয় পক্ষেই ঘোষনা দিলেন যেহেতু প্যারিস যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়েছে সুতরাং গ্রিকরাই বিজয়ী এবং ট্রোজানদের উচিত হেলেনকে ফিরিয়ে দেওয়া। ট্রোজান এতে সম্মতও হলো। আপাত দৃষ্টিতে ট্রয়ের যুদ্ধের সমাপ্তি এখানেই।
টু বি কন্টিনিউড...................
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২১