তপু আর তিতির। ১৮ বছরের কিশোর-কিশোরী।
তপুর মত ইমোশোনাল ছেলে তিতির কি কখনো দেখেছে? এতবড় একটা ছেলে কিভাবে বাচ্চাদের মত এত কাঁদে !
তপুও কি তিতির এর মত ভয়ংকর সুন্দর কোনো মেয়ে কখনো দেখেছে ? সে তার নাম দিয়েছে মোমের পরী। গালটায় হাত ছোঁয়ালেই যেন গলে গলে পড়বে !
সেই বাচ্চা ছেলেটা তার মোমের পরীকে চিঠি লেখে। মোমের পরীও চিঠি দেয়।
বাস্তব যেমন ইমোশোনাল মানুষগুলোর জন্য বড় বেশি নিষ্ঠুর তেমনি আমাদের গল্পেও তপু খুব একটা মুখ্য না।
তিতির লেখে……
“......তুই নাকি তুমি করে বলব বুঝতে পারছি না ! আমার মনে হয় তুই করে বললে সব freely বলা যাবে। সে যাই হোক, একদিন না একদিন তো তুমি করে বলতেই হবে। তুমি দিয়ে শুরু করছি।
তিতির নামের মেয়েটা তোমাকে অনেক কষ্ট দেয় তাই না ? এমন কি’বা কষ্ট দেয় যা কিনা তুমি সহ্য করতে পার না ? ‘কেন আমাকে এত কষ্ট দাও’...এই বাক্যটা প্রতিনিয়ত আমাকে শুনতে হয়। আমি কি তোমাকে খুব বেশি কষ্ট দেই ? আর যেটা তোমার উপর মানসিক ভাবে প্রভাব ফেলে ! এত সহজ সরল কেন তুমি ? মন কে কি একটু শক্ত করা যায় না ? আর এ রকম সোজা টাইপ হলে তো খুব স্বাভাবিক একটা কথাকেও অস্বাভাবিক মনে হবে। হ্যাঁ আমি জানি তুমি আমাকে খুব খুব খুউউউউউউউউউউউব ভালোবাসো। প্লিজ আবারো বলছি মনটাকে একটু শক্ত কর। আরো একটা বাক্য আমাকে সবসময় শুনতে হয়, ‘কেন আমাকে বুঝতে চাও না’। এটা কি আমার শুনতে খুব বেশি ভাল লাগে ?? আমি তোমাকে বুঝতে চাই না !! তুমি কি মনে কর আমি তোমার অনেক দূরের কেউ ? তাহলে কেন আমাকে এ কথাটা বারবার শুনতে হয় ? তোমার মনে হয় আমি তোমার কথা শুনি না ! আমি কি আর কয়েকটা ছেলের সাথে প্রেম করি নাকি যে ওদের কথা শুনব ? তর্ক তো অনেক করলাম। আর ভালো লাগছে না এই ধরনের কথা বলতে।
মাঝে মাঝে খুব কষ্ট লাগে যখন ফোন করে তোকে পাই না। তোর সাথে কথা বলতে পারি না। তখন তোকে খুব খুব মিস করি। আর বসে বসে তোর কথা ভাবি। Sorry, ভুলে আমি তুমি না বলে তুই করে বলে ফেলসি ! হি হি হি। যখন ফোনে কথা বলার সুযোগ থাকে কিন্তু তোমাকে পাই না কিংবা তুমি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাক রাগে তখন ইচ্ছে করে যখন তোমার সাথে দেখা হবে তখন আরো বেশি বেশি করে কষ্ট দিব। আমার সবচেয়ে বেশি কষ্টের দিন যেদিন তুমি আমার সাথে কথা বলনি সেদিন। ওই যে ওইদিন, মনে আছে? সেদিন আমি কিন্তু ঠিকই হলুদ জামাটা পড়ে এসেছিলাম, কিন্তু তুমি কি করলা?? আর সবচেয়ে বেশি আনন্দের দিন যেদিন তোমার সাথে রিকশায় ছিলাম কিছুক্ষনের জন্য ! কেন ওইদিন একটু করে হাতটা ধরলা না? ভীতু কোথাকার ! হি হি হি। তোমাকে মাঝে মাঝে আমি বলি আমি তোমাকে কম ভালোবাসি। আর তুমি আমার কথা বিশ্বাস করে মুখটা ভারী করে ফেল। তখন কিন্তু আমি তোমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি যা তোমাকে বুঝতে দেই না ! ওই ফোলা গাল দুইটা দেখতে কি যে ভালো লাগে !! আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটা তুমি আদৌ জান না। আমি বলি আমি তোমাকে কম ভালবাসি শুধুমাত্র তোমার গাল ফোলানোটা দেখার জন্য। আর তুমি তাই বিশ্বাস কর! তোমাকে রাগাতে আমার এত্ত ভালো লাগে !
তোমার প্রতি এখন একটা বিশেষ অনুরোধ, বৃষ্টিতে কখনো ভিজবে না। তুমি যখন বল ‘আজকে আমি বৃষ্টিতে ভিজছি রাত্রে জ্বর আসার জন্য’ জান তুমি তখন আমার কত্ত খারাপ লাগে ?? তোমার কষ্ট লাগলে তুমি বৃষ্টিতে ভিজ এটা আমি বিশ্বাস করি। তখন বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া কি আর কিছু মাথায় আসে না? আমার সাথে আনন্দের দিন গুলোর কথা মনে করবা। দেখবে নিজেকে কতটা হালকা হালকা মনে হচ্ছে। আরো একটা অনুরোধ করব, সেটা হচ্ছে Please একটু Seriously পড়াশুনা কর, প্লিইইইজ। যাতে ভালো একটা রেজাল্ট করতে পার। আর সেটা হবে আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট। আমি তখন সবাই কে গর্ব করে বলতে পারব।
সবশেষে একটি কথা বলব ……………. I love you soooooooooooooo much.
(পুনশ্চ ঃ লেখক চাইলেই তিতিরের কাঁচা আবেগের কথাগুলোতে খানিকটা পরিপক্বতা এনে দিতে পারতেন। কিন্তু তিতির তো ঠিক এভাবেই তপুকে লিখেছিল ! তার একান্ত সরল ভাবনা গুলোতে কাটা-ছেঁড়া করা কি লেখকের উচিত হবে?)
“তপুউউউউউউউউ,
কেমন আছ? এই মুহূর্তে খুবই জানতে ইচ্ছে করছে। প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে ভীষণ মিস করি। আমার তোমাকে তপু নাম ধরে ডাকতে বেশি ভালো লাগে। কিন্তু আমি আমার নামটা তোমার মুখ থেকে খুব বেশি শুনতে পাই না। যখন তোমার কোনো চিঠি আমাকে দাও কেবল তখনই তাতে তিতির নামটা ধরে ডাক। বাকিটা সময় সেটা কোথায় হারিয়ে যায় ? কিন্তু আমার তো তিতির নামটা তোমার মুখ থেকে খুবই শুনতে ইচ্ছে করে ! ঠিক আছে এখন না ডাক বিয়ের পর তো ঠিকই তিতির তিতির বলে ডাকতে হবে, তখন ?
বৃহস্পতিবার ভাইয়া ইটালি চলে যাবে তাই আম্মু বলছিল বাসায় কেউ থাকবে না তাই স্যার এর বাসায় যেওনা। তখন থেকেই খুব খারাপ লাগছিল তোমার জন্য। আগের দিন তোমাকে বললাম যে আমি কাল আসবনা। আর তুমি বললে তাহলে কি একেবারে রবিবার দেখা হবে ! আর তখন থেকেই মনে হচ্ছে আমি যেন তোমাকে অনেক অনেক দিন দেখবনা। কেমন করে এতদিন কাটাব ? একদিকে ভাইয়া চলে যাবে আর অন্যদিকে তোমার সাথে আমার দেখা হবে না ! শুধু তোমার কথা মনে পড়ছিল। তুমি স্যারের বাসায় আসবে আর আমাকে দেখবে না ! আর তুমিও কষ্ট পাবে। সেদিন আমার জ্বর ছিল। তারপরও ভাবলাম চলেই যাই। ওর সাথে দেখা হলে আমার মন এম্নিতেই ভালো হয়ে যাবে। আমি যে আসব সেটা আমি নিজেও আগে থেকে জানতাম না। আর তাই তোমাকেও বলা হল না। কিন্তু যখন আসলাম তখন দেখি তোমাকে এত্ত সুন্দর লাগছে যে আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না !! বিশেষ করে অফ হোয়াইট শার্ট টা পড়াতে। কিন্তু তোমাকে কথাটা বলা হয়নি। আমার একটাই সমস্যা, আমি সবকিছু তোমার মত খুলে বলতে পারি না। যখন প্রাইভেট শেষে বাসায় আসলাম তখন মনে মনে বলছিলাম ছেলেটাকে আজ কি যে সুন্দর লাগছিল ! কিন্তু ওতো জানতো না আমি আসব, তাহলে কেন ও ওই শার্ট টা পড়ে আসল ? অন্য কোনো মেয়ে যদি ওর দিকে তাকাতো ! আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগতো তখন।
আমি যে তোমাকে কম ভালোবাসি তা নয়। কিন্তু ভালবাসাটা হয়ত তোমার মত প্রকাশ করতে পারি না। এটাই আমার সবচাইতে বড় দুর্বলতা। তোমার ভালবাসায় কোনো ঘাটতি নাই। সব ঘাটতি আমার। আমার সবকিছু তোমাকে প্রকাশ করতে পারি না। সত্যি আমি খুব দুঃখিত আমার এই খারাপ অভ্যাসটার জন্য। আমি বুঝতে পারছি এটাই তোমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। তোমার চিঠিটা পড়ে তোমার জন্য খুব খারাপ লেগেছে। এই চিঠি লিখার সময় আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল। এখন এই কথাটা বললাম তাই বলেও কি তুমি কষ্ট পাবে ? এ জন্যই তো তোমাকে কিছু বলি না। তুমি তো একেবারে পিচ্চি বাচ্চার মত। ভেউ ভেউ করে শুধু কাঁদ ! আমাকে যে বল কান্না করো আমার কি খুব ভালো লাগে শুনতে? তোমার এসব কথা শুনলে আমার তো ইচ্ছে করে তোমাকে জড়িয়ে ধরে আমিই সারাদিন কান্না করি ! ভবিষ্যতে তোমার যে কি হবে আমি ভেবে কূল পাই না ! এমনওতো একটা সময় আসতে পারে যখন আমারা একজন আরেকজনের চেয়ে অনেক দূরে থাকবো ! সেই ধরনের সময়ের জন্যওতো আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে তাই না ? আমি যতটা কষ্ট পাই ততটা আমি দেখাতে পারি না। কিন্তু আমি তো সারাজীবন তোমাকে ভালবাসবো। এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। একটা দিনের জন্য, একটা মুহূর্তের জন্যও আমি তোমাকে ভুলে থাকতে পারবনা। এই বিশ্বাসটা যদি তোমার মনের ভেতর থাকে তাহলে কিসের এত ভয় তোমার ? আমি আমার সব বান্ধবীকে সবসময় বলি, তপু তো আমাকে পাগলের মত ভালবাসে। আমি কখনো কল্পনাও করিনি একটা ছেলে আমাকে এত ভালবাসবে ! কি ভাবে সম্ভব ? এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া তোমার কাছ থেকে। আমার আর কিচ্ছু লাগবেনা।
তুমি যে লকেটটা আমাকে দিয়েছ সেটা আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দ হয়েছে। মানুষটা যেমন সুন্দর তাঁর চয়েজটাও তেমন। লকেটটা যদি তুমি নিজের হাতে আমাকে পড়িয়ে দিতে তাহলে আমি আরো বেশি খুশি হতাম। শোনো, তুমি আমাকে না বলে কিনে ফেলেছ তাই আমি নিয়েছি। কিন্তু আর কিছু কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে নিছি না, যতক্ষণ না তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছ। হয়তবা অনেক কিছু দিতে ইচ্ছে করবে কিন্তু শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার কোনো দরকার নেই। খবরদার আমার Birthday Gift এর নাম করে হাবিজাবি কোনো টাকা খরচ করবে না ! আমি কিন্তু খুব রাগ করবো।
দেখলে, একটু লিখবো চিন্তা করে কলম নিলাম এখন থামতেই ইচ্ছে হচ্ছে না ! আজ আর বলবোনা। আর শোনো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায শুরু করেছ না ? একেবারে অন্তর থেকে আল্লাহ কে বলবে যেন এই তিতির তার পাগলা জামাইটাকে নিয়ে শেষদিন পর্যন্ত সুখে থাকে। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিবে। নিজে মজা করে করে দিনে তিনবার গোসল করে হাঁপানি বাঁধিয়ে আমাকে কষ্ট দিবে তাই না ? ঈদে কোনো ধরনের Cold Drinks/Ice Cream খেয়ে যদি কাশি বাঁধাও তাহলে আমি তোমার অবস্থা বারটা বাজাবো !
আর শেষ কথাটাতো তুমি জান তাই না লক্ষীসোনা ???? বলতো সেটা কি ????? ”
(পুনশ্চও ঃ পাঠকও হয়তো এক অবোধ কিশোরীর এই কাব্যের বিশালতায় লেখকের মতই বিরক্ত ! লেখক এখানেও অপারগ তিতিরের ভালবাসার কথাগুলোতে সংক্ষিপ্ততা আনতে। আর সবচেয়ে বড় কথা তপু কিন্তু এই চিঠি হাতে পেয়ে ভাবছিল, এই মেয়েকে কি আরো দুটো লাইন লিখতে পারতোনা ??)
যাদের ভালো লেগেছে তাঁদের জন্য শেষ পর্ব