" লে বাবা ! এবার মাধ্যমিক স্কুল ভর্তিতেও কোটা ঢুকাইয়া দিলাম। কবে বড় হইয়া দেশের সেবা করবি তদ্দিন কি আর ক্ষেম্তায় থাকুম ? তাই তরে অহনই সব সেট কইরা দিলাম ! "
অনেকেই নিশ্চয় এতক্ষনে পত্রিকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে এবার এমপি কোটা! শিরোনামের সংবাদটি পড়ে ফেলেছেন ? আপনাদের ভাষ্য কি ? আপনার আমার ভাষ্য বাদ দিন। দেখি প্রতিবেদনে প্রকাশিত সুধীজনেরা কি বলেছেন ---
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রত্যেক শিশুরই ভর্তির অধিকার রয়েছে। ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি কোটা থাকতে পারে। অন্যদের বেলায় কোটা থাকবে কেন?' তিনি বলেন, 'কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য কোনো অবস্থায়ই কোটা থাকতে পারে না। কারণ তাঁরা এখানে সেবা দেওয়ার জন্যই বসেছেন। এখন তাঁদের সন্তানদের কোটার ভিত্তিতে ভর্তি করলে কিভাবে হবে? এটা হতে পারে না। একজন কৃষকের সন্তানকে তো কোটার ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় না। অথচ সেই কৃষকের ট্যাক্সের টাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়। এখন আবার সংসদ সদস্যদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে। আমি এর ঘোর বিরোধী।'
গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, কোটা পদ্ধতির ফলে দেখা যাবে সাধারণ জনগোষ্ঠীই বঞ্চিত। তিনি বলেন, 'বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য কোটা পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কোটা পদ্ধতি বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে কোন গোষ্ঠীর প্রয়োজনে? নীতিনির্ধারণীদের প্রয়োজনেই যদি কোটা পদ্ধতি ব্যবহার হয়, তাহলে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছুই নেই।' এ ছাড়া এ ধরনের কোটা পদ্ধতির অপব্যবহারও হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
আরেকজন অধ্যক্ষ বলেন, সংসদ সদস্যরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের ঢাকার বিখ্যাত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর জন্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে এই কোটা রাখার 'আবদার' করেছেন।
আবদার বলে কথা ! অবশ্য তেনাদের যুক্তিও (!!) বেশ জোরদার। বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোটা থাকলেও তাঁদের বেলায় কেন থাকবে না_সে প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। কথা তো ঠিক ! সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা রয়েছে। এত কোটা থাকতে পারে এমপিদের সন্তান বা পছন্দের প্রার্থীদের জন্য কোটা থাকতে পারেনা ? বেশি তো চাইতেসেন না তেনারা, মোটে ২ শতাংশ। এতে কারই বা কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে ? আরে বেটা চাষার বাচ্চা তুই মেধাবী হইতে পারস কিন্তু তোর বাপ তো আর এমপি না !
এর আগেও বিসিএস এ কোটা পদ্ধতি নিয়ে বহুত ক্যাঁচাল হয়ে গেছে। এগুলো তো বড়দের জন্য। শিশুরা বাদ যাবে কেন ? আমরা কেউই কিন্তু বলিনা, তেনাদের সন্তানরা কিংবা যাদের জন্যে এত কোটাকুটি তাদের কারোই ঘিলু নাই। বরঞ্ছ দেখা যেতে পারে অনেকের ঘিলু ম্যাংগো জনতার সন্তানদের চাইতেও ঢের বেশি। তয় বেটা ডরাস কেন্ ?? আমি ল্যাংটা হয়েই আসবো, তুই নাহয় স্টেইনলেস স্টিল এর জামা আর ঢাল তলোয়ার নিয়ে আসিস, কিন্তু বেটা আয় না দেখি সামনা সামনি লড়ি ! তুই জিতলে তুই বীর আমি জিতলে আমি।
যত কাহিনীই বোঝাক না কেন সবাইতো জানি কি হতে যাচ্ছে। স্বয়ং মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা জানি এই ২ শতাংশের অপব্যবহার হবে। তবুও কিছুই করার নেই। সংসদ সদস্যরা চেয়েছেন।' ম্যাংগো পিপলকে বস্তা পচা ম্যাংগো বহুত খাওয়ানো হয়েছে। তারাও জানে কোনটা কিসের ডোজ। কিন্তু কি করবাম ? হগ্গলের বাপতো আর মন্তিরি নয় ! হেয় আম্লিগ হউক আর বি'ম্পি হউক। যাহা আম্লিগ তাহাই বি'ম্পি !
দুদিন আগে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স ২ বছর বাড়িয়ে দলীয় জ্যেষ্ঠদের আরো কিছুদিনের বন্দোবস্ত করা হল। এখন তাঁদের কনিষ্ঠদের জন্য বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। সকল রাজনীতিক খারাপ তাও আমরা কেউ বলিনা। কিন্তু ভাই একটা ভালোর উদাহরন দেয়ার তো কাউকে পাইনা। এখনতো ভালো বলতেও তিনবার ভাবতে হবে ! পাছে লোকে যারে বড় বলে তারে যদি প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশ ফায়ারে মরতে হয় ??
তাই হুমায়ুন আজাদের সুরে বলতে হচ্ছে সব কিছু তাহলে নষ্টদের অধিকারেই যাচ্ছে !