শুরু করছি স্টেফান হেনরী রবার্টস এর বিখ্যাত একটি উক্তি দিয়ে। একবার এক আস্তিককে লক্ষ্য করে তিনি বলেছিলেন - "আমার মনে হয় আমি আর তুমি দুজনেই নাস্তিক। তুমি যতগুলো ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমি তার চেয়ে একটি কম ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। যখন তুমি বুঝে উঠতে পারবে যে তুমি কেন আর অন্যান্য (ধর্মের) সম্ভাব্য ঈশ্বরকে অস্বীকার করছ, তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে কেন আমি তোমার (ধর্মের) ঈশ্বরকে অস্বীকার করছি"।
ব্লগে নাস্তিকতা আস্তিকতা নিয়ে অনেক কথা হয়। আর নাস্তিকতার শেষ গন্তব্য হয় কোরআন শরীফের ভুল ধরার পথে। স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন আসে তবে নাস্তিকতা কি শুধু ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে।
তবে তো এটা ইসলামবিরুদ্ধতা হয়ে গেল। তবে কি নাস্তিকতা মানে ধর্মের বিরুদ্ধে গালাগারি করা?
আমি এই লেখায় মূলত এই প্রশ্নটারই উত্তর খুজেঁছি। এর মধ্যে আবার আমাদের বন্ধুপ্রবর এক ব্লগার নতুন একটা টার্ম এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, "মুসলিম নাস্তিক"। Click This Link উনার এই লেখাটি পড়ে আরেকটু চিন্তার পরিসর বেড়েছে। নাস্তিক আবার মুসলমান হয় কিভাবে? উত্তর খোজাঁর চেষ্টা করছি।
প্রথমেই বোঝা যাক নাস্তিকতা আর আস্তিকতার মূল সংঘর্ষটা কোথায়।
ধর্মঃ
মূলত আদিম মানুষের ভয়ই প্রাথমিক ধর্মচিন্তার মূলে। এই ভয় কখনও ক্ষুধার ভয়, কখনও আগ্রাসী জন্তুর ভয় আবার কখনও প্রকৃতির তাণ্ডবের ভয়। দুর্বল মানবচিত্তে এইসব কার্যকারণের পারস্পরিক কাকতালীয় যোগসূত্রের মাধ্যমে এক কাল্পনিক চরিত্রের উদ্ভব হয় - যার ইচ্ছা ও চিন্তার ওপরেই ভীতিকর এইসব ঘটনা পরিচালিত হয়। আর এই কাল্পনিক চরিত্রের বা চরিত্রগুলোর করুণা বা কৃপালাভের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট অসংখ্য যাগযজ্ঞ ও আচার-বিচার যুগ-যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হস্তান্তরিত হতে হতে মূল ধর্মের আকার ধারণ করেছে।
ধর্মের উদ্ভবের পেছনে সামাজিক কারণও কম ছিল না। পরামর্শ, ভালবাসা আর সান্ত্বনা পাবার আশায়ও মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়েছে। এই ঈশ্বর আবার এক পরম-জ্ঞানী নীতিনিষ্ট ঈশ্বর, যিনি বিচার করেন - শাস্তি ও পুরস্কার দেন। ইনিই মৃতের আত্মাকে সংরক্ষণ করেন, বিশ্বাসীকে পদে পদে সাহায্য করেন, মানবজাতিকে পথ দেখান। এই ঈশ্বর এক নীতিনিষ্ট বিবেকবান ঈশ্বর।
নাস্তিকতাঃ
অপরদিকে, যে ব্যক্তি কার্যকারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা আর আস্থা রাখে, যে ওই কার্যকারণের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখে সে কিছুতেই তার মধ্যে এক কাল্পনিক চরিত্রের অদৃশ্য হস্তক্ষেপের গল্প মেনে নিতে পারে না। এই ব্যক্তির কাছে কোনো ঈশ্বরের শাস্তি দেওয়া আর পুরস্কারের ধারণা পুরো গল্পকথার মত লাগবে। কারণ সে জানে সব মানুষই বাহ্যিক বা আন্তরিক প্রয়োজনের বশেই কাজ করে, সে কাজ আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে ভাল লাগুক বা না লাগুক। তাই একজন নাস্তিকের কাছে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি মোটেও প্রয়োজনীয় কোনো ব্যাপার না।
আসলে আস্তিকতা আর নাস্তিকতার মূলে আছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস আর অবিশ্বাস। আস্তিকতা নিয়ে আমার মনে হয় না কিছু বলার দরকার আছে, কারন আমাদের সমাজ প্রেক্ষাপটে আমরা ধর্মটাকে সব সময়ই কাছে থেকে দেখি বা দেখতে বাধ্য হই। তাই নাস্তিকতা নিয়ে বিষদ আলোচনা করছি সবার বোঝার সুবিধার্তে।
অনেকের মনে প্রশ্ন ওঠে তবে নাস্তিকতা কি কোন কিছুই বিশ্বাস না করা? না তা না। কখনোই তা না। বরং একজন নাস্তিক যখন নিজের আকাঙ্খা বা বাসনার তুচ্ছতা অনুভব করতে শিখে আর বিশ্বব্রম্ভাণ্ডের বিশালতা আর শৃঙ্খলাবদ্ধতায় বিমোহিত হয়ে যায়,তখন সমগ্র মহাবিশ্বের অভিজ্ঞতা নিজের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে চায়। স্কোপেনহাওয়ার লেখা থেকে জানা যায় যে বৌদ্ধধর্মে এই ধরনের মহাজাগতিক একাত্মতার কথা বলা আছে। সর্বকালের সেরা ধর্মগুরুরা কিন্তু এই ধরণের ব্যক্তি-ঈশ্বর-বিহীন ও নিয়মকানুন-বিহীন মহাজাগতিক ধর্মের প্রচারই করে গেছেন। তাদের কেউ কেউ সমসাময়িকদের মধ্যে সাধুসন্ত হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছেন আর নাহলে নাস্তিক বলে পরিগণিত হয়েছেন। এদের মধ্যে যেমন আছেন গৌতম বুদ্ধ, তেমনই আছেন ডেমোক্রিটাস, স্পিনোজা আর ফ্রান্সিস অব আসিসি।
প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে যে সাহসী ব্যক্তিরা প্রথম প্রতিবাদ করেন সেই মহান দর্শন যোদ্ধাদের একজন হলেন ঋষি বৃহস্পতি। তিনি ছিলেন সেকালের একজন দুঃসাহসী চিন্তানায়ক। প্রকৃত জ্ঞান ও প্রগতির পক্ষে তার অবস্থান ছিল অটল ও দৃঢ়। সাম্রাজ্যবাদী দর্শন ও নীতিবোধের বিরুদ্ধে তিনিই সর্বপ্রথম জোর গলায় প্রতিবাদ জানান। এ অঞ্চলের যুক্তিবাদী ও মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের চিন্তানায়কদের আদিগুরু হচ্ছেন ঋষি বৃহস্পতি। "ঋগ্বেদে" বৃহস্পতি বলেছেন, ‘বস্তুই চরম সত্তা’।
আবার, মাধবাচার্য এর ‘সর্বদর্শন সংগ্রহ’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে বার্হস্পত্য দর্শনের এই উদ্ধৃতি আছে - “স্বর্গ নেই, মোক্ষ নেই, আত্মা নেই, পরলোক নেই, জাতিধর্ম নেই, কর্মফল নেই। ত্রিবেদ, ত্রিদণ্ড এবং ভস্মলেপন এসব বুদ্ধি ও পৌরুষহীন কিছু মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপায় মাত্র (বুদ্ধি পৌরুষহীনানাং জীবিকা, ধাতৃনির্মাতা)।” এই বার্হস্পত্য দর্শনের প্রধান ভাষ্যকার হিসাবে চার্বাক ঋষি ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ খ্যাত ছিলেন।
উপমহাদেশের দর্শন পরিমণ্ডলে চার্বাকের দার্শনিক অবস্থানের পরিচিতি ও প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের যথার্থ কারণ চার্বাকের মত করে আর কেউ বলতে পারেনি। তাই জনজীবনের আত্মিক গঠনে তার দর্শনের ভূমিকা ছিল প্রবল। একারণেই চার্বাকের দর্শনকে বলা হয় ‘লোকায়ত দর্শন'’।
এই দর্শনে বলা হয়েছে, “প্রত্যক্ষ ছাড়া পরোক্ষ কোন প্রমাণ নেই। শরীর থেকে পৃথক কেন চৈতন্য নেই।” তিনি মনে করেন বস্তুই সব কিছু সৃষ্টির মূলে। তিনি বলেন, “মৃত্তিকা, বায়ু, অগ্নি ও জল, এই চারিতত্ত্বের সমাহারে শরীর সৃষ্টি হয়। দেহাতীত কোন আত্মা নেই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কোন বহিঃশক্তির সহায়তা ছাড়া, এমন কি অদৃষ্টেরও সহায়তা ছাড়া নিজে নিজেই সৃষ্ট হয়।”
Ethnic Epic রামায়ণেও আমরা এই বস্তুবাদী দর্শনের চিত্র পাই। বনবাসে যাওয়া রাম ছোটভাই ভরতের অনুরোধেও যখন অযোধ্যায় ফিরে যেতে অস্বীকার করেন তখন তাদের সামনে এসে উপস্থিত হন বস্তুবাদী ঋষি জাবালি। তিনি রামকে উপদেশ দিয়েছিলেন- “চতুর লোকের রচিত শাস্ত্রগ্রন্থে আছে যজ্ঞ কর, দান কর, ত্যাগ কর, তপস্যা কর ইত্যাদি। এর উদ্দেশ্য কেবল জনসাধারণকে বশীভূত করা। অতএব হে রাম, তোমার এই বুদ্ধি হোক যে পরলোক নেই। যা প্রত্যক্ষ তার জন্যই উদ্যেগী হও যা পরোক্ষ তা পরিহার কর।”
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, নাস্তিকতা মানে কোন ধর্মের নামে কুৎসা রটনা না বা কোন ধর্মকে হেয় করা না বরং নাস্তিকতা মানে হলো যৌক্তিক কারনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান নিয়ে দ্বিমত পোষন করা। তবে এই "যৌক্তিক কারনটি" আপেক্ষিক।
যেমন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ ভূ-প্রকৃতির কাঠামো ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যভেদে মানুষ বিভিন্ন রকম। কেউ পাহাড়বাসী, কেউ সমতলবাসী, কেউ দ্বীপবাসী, কেউবা বনবাসী। কেউ রুক্ষ অঞ্চলে, কেউবা উর্বর ভূমিতে বাস করে। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে দেয় মানুষের সার্বিক অগ্রগতির আয়তন। মাটির গঠন, বাতাসের আর্দ্রতা, সূর্যালোকের প্রখরতা, গাছপালার পরিমাণ মানুষের আত্মিক বিকাশ ও নৈতিক মানদণ্ড গঠনে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যে ব্যক্তি বাস করে রুক্ষ্ম ভূমিতে তার তুলনায় বাংলাদেশের ন্যায় উর্বর জলাভূমিতে বসবাসকারী ব্যক্তির মন অনেকাংশে নরম হবেই। অর্থাৎ মানুষের মানসিক পরিবর্তন সারা পৃথিবীতে সমান্তরাল গতিতে অগ্রসর হয়নি। যে ব্যক্তি মরুভূমিতে বাস করে সে পৃথিবী সম্পর্কে যেরকম ধারণা পোষণ করে তার সম্পূর্ণ বিপরীত ধারণা লালন করে উর্বর ভূমিতে বাসকারী মানুষ। যে জনগোষ্ঠী পাহাড়ে বাস করে তাদের ধারণার সাথে দ্বীপবাসীর ধারণার কোন অংশেই মিল নেই। প্রত্যেকে পৃথিবী, প্রাণীজগত এবং মনুষ্যত্বকে বিচার করে ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক অবস্থান থেকে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে জগৎকে বিচার করার ফলেই মানুষে মানুষে এত পার্থক্য। নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীও মানুষ বিভিন্ন রকম।
যা হোক, নাস্তিক তথা বস্তুবাদীদের মধ্যে দেখা পাওয়া যায় সাংখ্য মতাবলম্বীদের। তারা মনে করতেন কাজ একান্তভাবেই কারনের পরিণাম। কাজের মধ্যে এমন কিছু থাকতে পারেনা যা কারণের মধ্যে অবশ্যই অস্ফুট বা বীজাকারে বর্তমান নয়।
তাই তাদের বিশ্বাস যেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না অতএব ঈশ্বর নেই। তারা মনে করেন পৃথিবী সৃষ্টি করার জন্য ঈশ্বর ধারণার প্রয়োজন নেই। কোনো কারণ নিজের পরিবর্তন ছাড়া কোনো কাজের সৃষ্টি করতে পারে না। তাই অপরিবর্তনীয় ঈশ্বর জগতরূপ কাজের কোনো কারণ হতে পারে না।
তবে তাদের ধারণার মধ্যে বহু আত্মা সস্পর্কিত ভাবনারও মিশ্রণ রয়েছে। এই নিরাসক্ত উপলব্ধির ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় বৌদ্ধ মতের। গৌতম বুদ্ধের এই মতের নাম বৌদ্ধধর্ম হলেও এটি প্রচলিত অর্থে কোনো ধর্ম নয়। এটি একটি মতবাদ যা মানুষের জীবনযাত্রাকে অর্থবহ করতে চায়। মহান গৌতম বুদ্ধও মনে করতেন আত্মা বা ঈশ্বর বা এধরণের কোন অপরিবর্তনীয় সত্ত্বা বাস্তবে নেই। এমন ভাবনার প্রভাব জৈন ধর্মের মধ্যেও কিঞ্চিত রয়েছে।
কবীর, দাদু প্রমুখ সংস্কারকদের মতবাদের মধ্যেও অলৌকিকতার তুলনায় মানবীয়তার স্পর্শ খুবই স্পষ্ট। আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় গণ্ডীর বাইরে থেকে লোকায়ত মরমীবাদকে আশ্রয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন লালন ফকির সহ বাউল সম্প্রদায়। ভারতীয় উপমহাদেশীয় বস্তুবাদী দর্শনসঞ্চারী মনোভঙ্গিকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বহন করে এনেছেন ডক্টর রাধাকৃষ্ণন, মানবেন্দ্র নাথ রায়, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ প্রাজ্ঞ দার্শনিকেরা।
এখন আমাদের সমস্যা হলো আমরা কিন্তু আস্তিকতা বা নাস্তিকতার মূল বিষয় নিয়ে যতটা না ভাবি তার চাইতে অনেক বেশী ভাবি অন্যের মতাদর্শকে ছোট করতে।
আস্তিকতা আর ধর্মান্ধতা সমান হতে পারে না। ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকতে পারে। সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে সেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়াটা আস্তিকতা হতে পারেনা। মনে লাখতে হবে যে, একেকটি ধর্ম মানে একেকটি মতাদর্শ। বিবেকবান একজন মানুষ নিজে যে কোন ধর্মকে সমর্থন করতে পারেন কিন্তু তা মানতে অন্যকে বাধ্য করতে পারেন না। কোন ধর্মই তাকে সেই অধিকার দেয়নি। সমস্যা হলো, ধর্মের অন্ধ সমর্থকেরা নিজের ধর্ম আর বিশ্বাস বাঁচিয়ে রাখতে সদা-সচেষ্ট বলে তারাই এই ভাল-খারাপ ধার্মিকতা দিয়ে বিচার করে। কিন্তু সেই বিচার কি নিরপেক্ষতার দাবীদার? কখনোই না।
আবার তথাকথিত নাস্তিকদের মধ্যে সমস্যা তো কোন অংশেই সমান না। যারা প্রকৃত অর্থেই নাস্তিক তারা জানেন তারা কি বিশ্বাস করেন না আর কেনই বা তা করেন না। আজকে ব্লগে আমরা নাস্তিকতা নিয়ে অনেক কথা বলতে দেখি। কিন্তু তথাকথিত নাস্তিক দাবীদাররা কতজন বলতে পারবেন
আসলে কোন আদর্শের ভিত্তিতে তারা নাস্তিক? ধর্মের অনুশাসনে সমস্যা থাকতেই পারে। কারন তা অনেক আগে থেকে পৃথিবীতে প্রচলিত, আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমান যুগের প্রেক্ষিতে ধর্মকে মেলানো অনেক জায়গাতেই কঠিন হয়ে পড়ে। হতে পারে কারো হয়তো ইসলাম ধর্মকে ভালো লাগে না, তার মানে কি সে নাস্তিক? কখনোই না। নাস্তিকতাও একটি মতবাদ। এখানেও মানুষকে কিছু অনুশাসন মানতে হয়। নাস্তিক মানুষকেও পাপ হতে দূরে থাকতে হয়। একজন নাস্তিক সব কিছুই মেনে চলেন যা একজন ধর্মীয় অনুশাসনে থাকা মানুষ মেনে চলেন, তবে পার্থক্য হলো একজন ধর্মীয় অনুশাসনে থাকা মানুষ সৎ পথে থাকেন পরলৌকিক মঙ্গল লাভের আকাঙ্খায় আর একজন নাস্তিক সৎ পথে থাকেন নিজের বিবেকের কাছে শুদ্ধ থাকতে। মনে থাকা উচিত সবার নাস্তিকতা মানে অন্যের ধর্মকে ছোট করা না। নাস্তিকতা মানে মুহাম্মদ বা আল্লাহ তুলে গালাগালি করা না। নাস্তিকতা মানে যা ইচ্ছা তাই করার পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়া নয়। নাস্তিকতা মানে ইসলাম তথা কোন ধর্মকে তুলে গালাগালি করা না, নাস্তিকতা মানে অদৃশ্যমান কোন শক্তির অস্তিত্ব অস্বীকার করে শুধুমাত্র নিজের বিচার বিবেচনা বোধ এর উপর নির্ভর করে কোন পরলৌকিক প্রাপ্তি ভুলে সৎ পথে থাকা।
এবার "মুসলমান নাস্তিক" এই টার্ম টা নিয়ে কথা বলছি। মুসলমান মানে সেই মানুষ যিনি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ এর উপর ঈমান এনেছেন। সুতরাং মুসলিম সেই ব্যক্তি যিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে
মহান আল্লাহ এর একত্ববাদসহ নানা পরলৗকিক ব্যাপারের অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। আর নাস্তিক হলো সেই যিনি কোন ঈশ্বর বা পরলৌকিক ব্যাপারের অস্তিত্বে বিশ্বাসী না। সুতরাং মুসলিম আর নাস্তিক দুইটি শব্দই একজনের ক্ষেত্রে কিভাবে প্রযোজ্য হতে পারে?
তার চাইতে বরং এমন হতে পারে যে, তিনি অতীতে হয়তো ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু এখন আর তিনি ইসলাম ধর্মের অনুগামী নন, হতে পারে তার মনে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন উদয় হযেছে, হতে পারে তার মনে হয়েছে ইসলাম ধর্মে নানা অসংগতি আছে। তাহলে সেই ক্ষেত্রে যদি তিনি ইসলাম ধর্মকে আর না মানেন বা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ এর উপর আর বিশ্বাস না রাখেন, তবে তিনি তো আর মুসলমান নন। সেই ক্ষেত্রে কিভাবে তিনি মুসলমান নাস্তিক হতে পারেন তা আমার বোধগম্য নয়।
আস্তিকতা-নাস্তিকতা আসলে দুটি ভিন্ন মতাদর্শ। যে মতাদর্শগুলোর আছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। তাই এই ব্যাপারগুলো নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। যে যে মতাদর্শের ই হই না কেন, তার যথাযথ দিকগুলোকে জানতে হবে। কোন কিছু না জেনে নিজেকে নাস্তিক বলে প্রমান করা আর সেই প্রমানের সুযোগে অন্য ধর্মকে ছোট করার মানসিকতা থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি আমরা তা না করি তবে নিজেরাই নিজেদের অবস্থানকে ক্রমাগত দূর্বল করে দেব।
ধন্যবাদ সবাইকে।