-দোস্ত মেয়েটার পিছনে ঘুরিস না প্লিজ,
-কেন?
-এই মেয়ে অন্যরকম,
-হুম,জানি নারীবাদী,
-পুরুষ বিরোধী,ছেলেদের একটুও দেখতে পারেনা,
.
আমি রাফির কথা শুনে একটু অবাক হলাম। রাফি আবার বলল,
-এই মেয়েক একবার একটা ছেলে প্রপোজ করছিল তাকে পুলিশ এ দিছে।
-কি বলিস?
-হুম,
-মেয়েটার নাম জানি কি?
-জারিন,
-ও,আচ্ছা। দেখি কি করা যায়,
-না তুই ভুলেও এই কাজ করিস না।পুরাই ফাসবি।
.
আমি আর কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম। রাফিকে পেয়ে ভালই হয়েছে মেয়েটার সমন্ধে অনেক কিছু জানা গেল।মেয়েটা কোথায় পড়ে এটাও শুনে নিলাম।কাল থেকে এই মেয়ের পিছনে ঘুরতে হবে।আর মেয়েটাকে পটাতেও হবে।
.
ঘটনা আজ বিকেলের,
বিকালে টিউশনি শেষে এক দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম।এই এলাকায় খুব কম আসা হয়, আর প্রাইভেট টাও নতুন তাই আশ পাশ টা একটু চেনার চেষ্টা করছিলাম তখনি কানে এল,
"সমস্যা মেয়েদের পোষাকে নয়, ছেলেদের চরিত্রে।তাই মেয়েদের আগে ছেলেদের শোধরানো উচিত"
.
আশেপাশের কোথাও একটা ভাষন হচ্ছে। ইদানিং প্রায় প্রায় এমন ভাষন হয়,নারীদের সচেতনতা নিয়ে।এখানে নারীদের সচেতন করা হয়না,শুধু পুরুষদের অপমান করা হয়।এসব থেকে নারীরা খুব একটা সচেতন ও হয়না। কবে সচেতন হবে কে জানে?
.
তবে যাই হোক, খুব আগ্রহ জন্মাচ্ছিল আমার ভাষন টা দেখার জন্য। যে মেয়েটা ভাষন দিচ্ছে তার গলা খুবই সুন্দর।এটা অনেক রেয়ার, আসলে যারা নারীবাদী ভাষন টাষন দেয় তাদের গলা হয় মোটা,বেসুরা কিন্তু এই মেয়ের গলা খুবই সুন্দর লাগছে।এই মেয়ের উচিত টিভিতে গান করা।একবারেই হিট হয়ে যাবে।
আরো একটা জিনিষ দেখতে চাইছিলাম সেটা হচ্ছে এই মেয়ের পোষাক।কি পরে আছে এটাও দেখতে হবে,ছেলেদের দোষ এমনি এমনি কেন দিবে?
.
পাশেই একটা প্রাইমারী স্কুল আছে,স্বভাবত ওখান থেকেই মাইকের শব্দ আসার কথা। আমি সেদিকেই যেতে লাগলাম।যতই সামনে যেতে লাগলাম ততই মাইকের শব্দ ভালভাবে কানে পৌছাতে লাগল।
স্কুল মাঠে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে।ঠিক ভাবে স্টেজ টা দেখা যাচ্ছেনা কারণ যে সব ছেলেরা ভাষন শুনছে তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাষন শুনছে। আর মেয়েরা সামনের দিকে,চেয়ারে বসে বসে শুনছে। এসব সভায় এত মানুষ হওয়ার কথা না, মনে হয় কোন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আছে।
.
আমি ভিড় ঠেলে ঠুলে সামনে এগিয়ে গেলাম।
তারপর স্টেজের দিকে তাকালাম,একটা কম বয়সী মেয়ে ভাষন দিচ্ছে।শাড়ি পড়া,পেস্ট কালারের শাড়ি।মেয়েটার চেহারা ঠিক মত বোঝা যাচ্ছেনা কারন স্টেজ থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম । তবে মেয়েটা সুন্দরী এটা ঠিকই বোঝা যাচ্ছে।আমি ভিড় থেকে বের হয়ে স্টেজের কাছে গেলাম।ওখান থেকে মেয়েটাকে খুব ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে।মেয়েটাকে সুন্দর বললে মেয়েটার রুপের অপমান করা হবে তাই মেয়েটার প্রশংসা থাক।
.
অল্প কিছুক্ষনের মধ্য মেয়েটার ভাষন শেষ হয়ে গেল।আমারো মন খারাপ হয়ে গেল,জীবনের এই প্রথম কারো ভাষন এত মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। যদিও সেটা পুরুষ বিরোধী ভাষন।
..
ভাষন শেষ করে মেয়েটা আর স্টেজে দাঁড়াল না,সোজা নেমে আসল।মনে হয় অনুষ্টান থেকে চলে যাবে, আমিও মেয়েটার পিছন পিছন বের হলাম ওখান থেকে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায় তাই রিকশা টিকশা পাওয়া মুশকিল।ভয় হচ্ছিল যদি মেয়েটা একটা রিকশা নিয়ে নেয় তাহলে ফলো কিভাবে করব? কেন জানি মেয়েটাকে হারাতে ইচ্ছে করছিল না।মোটেও না।
.
মেয়েটা রিকশা স্ট্যান্ডে এসেও রিকশা নিল না, সোজা হাঁটতে লাগল।মনে হয় মেয়েটার বাসা কোথাও কাছাকাছি।আমিও মেয়েটার পিছন পিছন কিছুটা দুরত্ত বজায় রেখে হাঁটতে লাগলাম।
.
মেয়েটা দু একবার পিছনে তাকিয়েছিল তবে খুব একটা সন্দেহ করেনি মনে হয়।
আর কিছুদুর হেঁটে গিয়ে মেয়েটা একটা দোতলা বাসায় ঢুকে গেল।
বাসাটার সামন থেকে যখনি ফিরে আসব তখনি রাফির সাথে দেখা।রাফি আমার বন্ধু। রাফির বাসা নাকি এ এলাকাতেই।কিন্তু রাফি মেয়েটার মানে জারিনের সমন্ধে যা বলল তাতে এ মেয়ের পিছনে ঘোরা বেকার আর বিপদ জনক ও। তবে আমি মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি তাই মেয়েটার পিছনে ঘুরতেই হবে, দেখা যাক কি হয়।
সবচাইতে ভাল হত জারিনের নাম্বার পেলে,তবে না পেলে আর কি করার।
.
পরের দিন জারিনের কলেজে চলে এলাম।
এত বড় কলেজে ওকে কোথায় খুঁজব কে জানে?তবুও যে করেই হোক খুঁজতে হবে তাই খুঁজতেও লাগলাম।ভাগ্য কে খারাপ বলব না ভাল বলব জানিনা,ডান দিক থেকে বা দিকে মুখ ঘুরাতেই দেখি জারিন দাঁড়িয়ে আছে।
একটা সাদা সেলোয়ার কামিজ,মাথায় স্কার্ফ দারুন লাগছিল।কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল খুব কঠিন লুক নিয়ে। এই রকম লুকের কারণ কি?
এই মেয়ে আমাকে চিনে নাকি?
রাফি কিছু বলে দিছে?
মাথায় কিছুই ঢুকল না।তবে মাথায় যা আসলো তা হল ওখানে দাঁড়ানো খুব একটা সুবিধার হবেনা। তাই পা বাড়ালাম ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য। যেই এক পা ফেলেছি তখনি পিছন থেকে ডাক পরল,
-দাঁড়ান,,
.
আমি দাঁড়ালাম। যদিও খুব ভয় করছিল। আমাকেও পুলিশে দিয়ে দেয় কিনা?
.
জারিন আমার সামনে এসে বলল,
-কি চাই এখানে?
-নাহ কিছুনা,
-এখানে কি করছেন?
-এমনি ঘুরতে আসছি,,
-আমাকে দেখতে আসছেন,
-আরেহ নাহ,,বাট আপনার এমন কেন মনে হলো?
-কাল সন্ধ্যাতেও আপনি আমাক ফলো করছেন। বাসার সামনে রাফির সাথেও কথা বলছেন।
-রাফি কিছু বলছে আপনাক?
-হুম,,সব বলছে।
.
রাফির উপর রাগ উঠল। মেয়েটাকে এত ভয় করার কি আছে বুঝিনা। আমি একটু ভেবে বললাম,
-তাহলে সব জেনেই গেছেন যে আমি আপনাকে পছন্দ করি,,
-আপনার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি,আপনি জানেন আমি এ শহরের মহিলা কমিটির সেক্রেটারি।
-হুম,জানি।কাল আপনার ভাষন ও শুনলাম। দারুন ভাষন দেন।আমি প্রথমে আপনার কন্ঠেরই প্রেমে পড়েছি,
-বেশি হয়ে যাচ্ছে?
-সত্যি বলছি,
-আমি আপনাকে চাইলেই পুলিশে দিতে পারি,
-হুম,দিতে চাইলে দিবেন। ভালবাসার জন্য তো দুই একবার হাজতে যেতেও হতে পারে,
-আমি ছেলেদের দেখতেই পারিনা,ভালবাসা তো দূরের কথা,
-অন্য কাওকে দেখতে হবেনা,আমাকে দেখবেন তাতেই হবে,
-কি আজব,
.
জারিন আর কথা বাড়াল না।সোজা চলে গেল। আমি রাফিকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। সব বলে দিছে, এখন জারিন আর আমার কিছু হলেও হতে পারে।
.
ফোন নাম্বার জোগাড় করাও খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না।রাত্রে ফোন দিলাম,জারিন ফোন রিসিভ করেই বলল
-কে?
-আমি
-আমি কে?
-রাফির বন্ধু,
-নাম্বার কই পাইছেন,
-কলেজ থেকে?
-কি চাই,এসব প্রেম ভালবাসা আমার দাঁড়ায় হবেনা, অন্য মেয়ে খোঁজেন।
-আচ্ছা, বন্ধু তো হবেন,
-হুম,বন্ধু
-ধন্যবাদ,
-বন্ধুর চাইতে বেশি কিছু নয় কিন্তু,
-না এর বেশি কিছু না।
.
প্রথম দিন কথা বলেই আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম। তবে জারিনের সাথে কথা বলে বোঝা যায় মেয়েটা কঠিন পুরুষ বিরোধী।এর পিছনের কারণ হচ্ছে ওর বাবা,জারিনের বাবা দুটা বিয়ে করে।পরে ওর মাকে তালাক দেয়। এই সব কারণেই জারিনের মনে ছেলেদের স্থান অনেক নিচে।ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে কখনো বিয়ে করবেনা।তবে ইদানিং আমার আর ওর রিলেশন প্রেমিক প্রেমিকার মত যদিও ও মুখে কখনোই বলেনা ভালবাসি তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় জারিন আমাকে ভালবাসে।খুব ভালবাসে।
.
আমি জারিন কে প্রেম করার কথা বলিনা কখনো।সরাসরি বিয়ে করতে চাই।কিন্তু ওর মতামত অন্যরকম।
সেদিন ওকে ফোন করে বললাম,
-জারিন,প্রেম না করো চল বিয়ে করি?
.
জারিন উত্তরে বলল,
-আজকের পেপারের সাত পৃষ্টার তৃতীয় কলাম এ দেখ,স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন,
.
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
-তোমার কি মনে হয় আমিও তোমাকে খুন করব,
-করতেও তো পারো,
-আজব,
-ছেলেদের বিশ্বাস নাই,
-কটা ছেলেকে চেনো,
-চিনতেও চাইনা,
-জিবনে বিয়ে করবানা?
-নাহ,
.
এসবই হয় সবসময়।অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে যদি দেখা করি,তাতেও ওর এ কাহিনী হবে।
সারাদিন বলবে,এই খবর পড়ছ,ওই খবর পড়ছ। সব সময় ছেলেদের দোষ দিবে।
কোথাও কোন রেপ হলেও জারিন আমাকে এমন ভাবে বলবে যেন সেটা আমি করেছি।ওর মতে সব ছেলেরাই এক রকম।যদিও এ ভুল আমি কখনোই ভাঙাতে পারিনি ওর।
.
মাঝে মাঝে ওর সাথে নারী বাদি ভাষন এও যেতে হত,মাঝে মাঝে ছেলেদের বিরুদ্ধে কথাও বলতে হত।নিজেকে আজব চিড়িয়া মনে হত।
কট্টর নারী বিরোধী ছেলে আমি, একটা মেয়ের জন্য এসব করছি। তবে যখন জারিন আমার প্রতি খুশি হত তখন আপনা আপনি মন ভাল হত। আমি শুধু চাইতাম ও আমাকে বিশ্বাস করুক।
.
বিশ্বাস হয়ত করেছে তবে ভরসা করতে পারেনি তাই আমার প্রস্তাবে ও কখনো রাজি হয়নি।জারিনের মা পর্যন্ত রাজী শুধু জারিনই নয়।
অনেক চেষ্টার পরেও যখন ওকে রাজি করাতে পারলাম না তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যা করতে হবে জোর করে।আমার ও মনে হচ্ছিল ওকে জোর করে বিয়ে করলে ও খুব একটা রাগ হবেনা। তাই সব কিছু ঠিক ঠাক করে আজ সকালে ওকে ডাকলাম দেখা করার জন্য,ও আসতেই বললাম আমার একটা কাজ আছে,চল একটু।রিকশা ঠিক কতে দুজনেই উঠে পড়লাম।
.
কাজী অফিসের সামনে রিকশা থামতেই ও বলল,
-কোথায় তোমার কাজ?
-কাজী অফিসের ভিতরে,
-শিউর?
-হুম,
-অন্য কিছুর প্লান নাই তো,
.
আমি জানি এই মেয়ে বুঝতে পারছে আমার মনের কথা,তবুও ভনিতা করতেছে।
আমি আর তেমন ভনিতা না করে বললাম,
-দেখ বিয়ে করার জন্য নিয়ে আসছি,
-না প্লিজ, এমন করিও না,
.
আমি ওর কোন কথা না শুনে,সোজা ওর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলাম ।আমি জানি এই মেয়ে রাজী তবুও না না করতেছে।
.
তবে ভিতরে ঢুকে আর কোন শব্দ করেনি জারিন।শুধু একবার বলল,
-আম্মু,
-তোমার আম্মুও রাজি,
-কথা বলছ আম্মুর সাথে,
-হুম,বলছি।
.
এর পর আর কিছু বলেনি জারিন চুপচাপ সাইন করে দিয়ে বের হয়ে এসেছে। রিকশায় উঠে ও মুখ খুলল,
-কাজ টা কি ঠিক করলা?
-হুম,অবশ্যই।তুমি যেমন তেমনই থাকবা,নারী বাদী।
-উম,
-নারীবাদিরাও বিয়ে করে,এত টেনশনের কিছু নাই।আর সব পুরুষ এক রকম হয়না।আমি তোমাকে ভালবাসি সব সময় এভাবেই বাসব।
.
জানিনা আমার কথা টা জারিন বিশ্বাস করল কিনা তবে ও আমার কাধে মাথা ঠিকই রাখল।
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন