-ঠান্ডা কিছু খাবে?
.
আমি রিধির দিকে একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে তাকালাম।দেখলাম,ও আমার দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে।গরমের কারণে কিছুই ভাল লাগছেনা। স্বভাব টা উগ্র হয়ে যায় মাঝে মাঝেই।কিন্তু এই মেয়ের বিরক্তি বলে কিছু নেই। সামনে একটা আখের দোকান দেখা যাচ্ছে ,আমি একশ পারসেন্ট শিউরিটি দিয়ে বলতে পারব রিধি আখের রস খেতে চাচ্ছে।
.
রিধি আবার জিজ্ঞেস করল,
-খাবে ঠান্ডা কিছু?
-না,,
-কেন খাবানা?রোদে হাঁটাহাঁটি করলে পানি শূণ্যতা দেখা যায়,
-আচ্ছা,তুমি খাবা কিছু?
-হুম,আসো আখের রস খাই,
-আচ্ছা,
.
পনের টাকা গ্লাসের হিসেবে রিধি দু গ্লাস আখের রস খেল,আমি খেয়েছি এক গ্লাস।
খেতে ভালই,তবে রাস্তার দোকান তাই বেশি খাওয়ার সাহস হয়নি।তবে ভাগ্য ভাল ও এই গরমে ও ফুচকা খেতে চায়নি,পুরা মার্ডার হয়ে যেতাম এই গরমে ফুচকা খেলে।
আখের রস খাওয়ার আগে রিধিকে বলে দিয়েছি যেন ওর পেট খারাপ হলে আমাকে দোষ না দেয়।
ও জবাবে কিছু বলেনি শুধু একটু হেসেছে।
.
রিধিকে কলেজ ড্রেসে দেখতে ভালই লাগছে, মাথায় একটা সাদা স্কার্ফ খুব মানিয়েছে ওকে। এই প্রথম ওকে এই কলেজ ড্রেসে দেখছি। চোখে হালকা কাজল ও দিয়েছে রিধি, গত পরশু দিন ওকে বলেছি,কাজল ছাড়া মেয়ে দুধ ছাড়া চায়ের মত।সেই কথাটা এভাবে কাজে লেগে যাবে ভাবিনি।
.
ওর স্বভাব এখনো বাচ্চাদের মতই ,কিভাবে যে এরকম একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরে গেলাম জানিনা।রোদ্রে হাঁটাহাঁটি করা টাও একটা বাচ্চামু স্বভাবে পরে।
এই মেয়ে অনেক বুদ্ধি করেই আমাকে ওর প্রেমে ফেলেছিল।প্রথম দিন দেখা থেকেই রিধির সব কিছুই অদ্ভুত ভাবে ভাল লাগত,এক সময় প্রেমেও পরে গেলাম।
.
-রিধি,একটা রিকশা নিবো,
-কেন?
-খুব রোদ,,এই রোদে থাকলে আরো কালো হয়ে যাব,
.
রিদি আমার কথা শুনে হেসে ফেলল।হাসতেই হাসতেই বলল,
-কাল হবে তাতে কি সমস্যা?
তুমি কালো হলেও আমি তোমাকেই বিয়ে করব,
.
আমি ওর কথার জবাবে আর কিছু বললাম না।কি বলব ভেবেও পেলাম না।
রোদে আমার মুখ কালো হয়ে গেছে কিন্তু রিদির মুখ হয়ে গেছে লাল।ও একটু বেশি ফর্সা কিনা?
.
দুপুরে রিধির জন্য বাসা থেকে বের হওয়াটা বড্ড বোকামীর কাজ হয়েছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রিধির ম্যাসেজ,
"আমাদের কলেজের সামনে এসো,আমি অপেক্ষা করব"
.
রিধির কলেজ ছূটি হয় বারোটায়,এ ভর দুপুরে রোদ্দুরে বের হওয়ার কোন মানে ছিল না কিন্তু রিধি অপেক্ষা করত তাই আসা।
এসে দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে কলেজ গেটের সামনে,সাথে ওর কয়েকজন বান্ধবীও।এত গুলো কলেজ ড্রেস পড়া মেয়ে দেখে একটু ভয়ই লাগল।তবে কিছুই করার ছিলনা।সবার সাথে পরিচয় হয়ে,সবাইকে বিদায় দিয়ে রিধিকে নিয়ে সামনে আগালাম।রিকশা নিতে চাইলাম,রিধি বলল,
-না হাঁটি,
.
আমি জিজ্ঞেস করলাম
-কেন?
-রিকশায় গেলে বাসায় তাড়াতাড়ি পৌছে যাবো। আমি তোমাকে ডেকেছি সময় কাঁটানোর জন্য,
.
আমি একটু ভেবে বললাম,
-তাহলে কোন পার্কে বা রেস্টুরেন্টে বসি,
-মাথা খারাপ নাকি? কেউ দেখলে পুরা শেষ।
-তাহলে এভাবে রোদে হাঁটব?
-হুম, একদিন একটু কষ্ট করো।
-আচ্ছা,
.
আমি ভেবেছিলাম,মেয়ে মানুষ কতক্ষন আর হাঁটবে এমনি যে রোদ।কিন্তু এই মেয়ে হাঁটতেই আছে।কোন ক্লান্তি নেই।তবে হাঁটতে খুব একটা বিরক্তি লাগছে না, রিধি খুব সুন্দর করে কথা বলে। ওর সাথে কথা বললে খারাপ মন ও ভাল হয়ে যায়।
.
রিধি বলে উঠল,
-জানো,আজ কলেজে কি হয়েছে,
.
আমি রিধির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে,
-স্যার বলছে, সাত আট বছরের বড় ছেলেদের বিয়ে করতে হয়,তাহলে সংসার ঠিক থাকে।
-ওহ,
- তুমি আমার ক বছরের বড়?
-ছয়,
-ছয়,সাত,আট একই প্রায়,
-হুম
-তাহলে আমাদের সংসার ও হ্যাপি হবে,
এটা বলে রিধি নিজে নিজেই হাসা শুরু করল।
.
রিধির হাসি সব চাইতে সুন্দর।দু গালে কি সুন্দর টোল পরে।যখন ওকে প্রথম দিন দেখলাম তখন ইচ্ছে হয়েছিল ওর গাল দুটা একটু টানতে।কিন্তু সেবার এত সাহস হয়নি। তবে ইচ্ছাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইচ্ছের কথাটা বললে কি রিধি রাগ করবে। করতেও পারে,
.
-রিধি?
-হুম,
-তোমার গাল দুটো
-কি?
-খুব সুন্দর,
-চুমু খাবে?
-না,
-তাহলে,
-ছুঁয়ে দেখব?
.
রিধি আমার দিকে একটু ঘেষে এসে বলল,
-নাও ছুয়ে দেখ,অবশ্য এখন একটু তেলতেলে,ঘেমে গেছে।বেশি ভাল লাগবেনা।
.
আমি রিধির গালে হাত দিলাম না, রিধি নিজেই আমার হাত গুলো ধরে ওর গালে ছুঁইয়ে দিল।
ব্যাপারটা খুব জলদিই হয়ে গেল।আমি খুব দ্রুত হাত নামিয়ে নিয়ে পথ চলতে লাগলাম। রিধিও আমার পাশে চলতে লাগল।
.
রিধির বাসা খুব একটা দুরে ছিলনা, কিছুদুর হাঁটতেই চলে এল।ও একটা দোতলা বাসার সামনে এসে বলল,
-এটা আমাদের বাসা,
-ওহ,
-আসবে,
-আরেক দিন,
-আচ্ছা,আসি।
-আচ্ছা,,,
.
রিধি একটু এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বলল,
-ভালবাসি,
-হুম,ভালবাসি।
.
ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাড়ির ভিতর চলে গেল।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলাম কেউ দেখছে কিনা?না কেউ নেই। তবে দোতলার বারান্দা থেকে এক মহিলা আমাদের দিকে লক্ষ্য রাখছিল, এটা আমাদের দুজনের কারোর চোখেই পরেনি।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১