আমার আম্মুর চুলও মহা কোঁকড়া বলে বিডি তার আদরের কোঁকড়াচুলওয়ালীর নামানুসারে আম্মুকে কোঁকড়াচুলওয়ালী ডাকে, সে আমি আগেই বলেছি। সবার আম্মু তার কাছে স্পেশাল, কিন্তু আমার কোঁকড়াচুলওয়ালীর স্পেশালটি হলো, সে আমার বন্ধুদের কাছেও স্পেশাল । অনন্ত তার জানের টুকরার নামে আমার জননীর নাম রেখেছে, সুতরাং তার কাছে আমার আম্মু কি সে আমি না ই বললাম ।
অথবা শারেকা। তার আর আমার মায়ের প্রেম দেখলে আমার পিত্তি জ্বলে । সে এক অমর প্রেমগাঁথা। আজকে সে তার ময়ের বাড়ি যেতে পারেনি, শ্বাশুড়ির জন্য গিফট কিনেছে আন্তির সাথে দেখাও করতে পরেনি, তাই মন খারাপ করে আমাকে বলে আমার কোঁকড়াচুওয়ালীকে তার কাছে পাঠায় দিতে । রাত পৌনে দশটা না হলে হয়তো আমার আম্মাজানও রওনা দিয়ে দিতেন । মনে করলেও আমার মেজাজ খারাপ হয়, এর জন্য ব্লগটাই লেখা হবে না, সুতরাং শারেকার গল্পও বাদ দেই ।
আদবানা বাসায় এসে কাজ করা তো দূরে থাক, আমাদের সাথে দেখা করার আগেই আম্মার সাথে ঘন্টাখানেক আড্দা মেরে আসবে । ইয়াহুতে নক, মিসিং আন্টি । কি আজিব। আম্মা ইয়াহু আইডি ঠাকলে মনে হয় আমারে নকই করতো না ফাজিলটা ।
সিনথি বাসায় আসবে, আমার সাথে না আম্মুর সাথে দেখা করতে । আমার চেহারা তো রোজ ই দেখে, তাই পাত্তা নাই ।
মুনভির আতিথেয়তার আইডল আমার জননী , কারণ বিনা নোটিশে এগারো জন মানুষ ( তাও যদি হয় ভার্সিটি পড়ুয়া আক দঙ্গল জংলী খাদক, এবং টারা ক্ষুদার্ত।) কিভাবে একটা বাসায় লান্চ করলেও খাবারে কোন সমস্যা হয় না, সে গত তিন বছর ধরে তারই গবেষণা করে যাচ্ছে ।
আমার বাসা বুয়েটের খুব কাছে হওয়ায় মোটামুটি হলের কাজ করে। বরং এখানে স্বধীনতা বেশি, কোন সান্ধ্য আইন নাই। আর যেহেতু আমার মা আছে সেহেতু কোন চিন্তাও নাই ।
এখন পর্যন্ত আমি আকটা মাত্র জমা একা দিয়েছি। না হলে কেউ না কেউ থাকেই। একবার তো আমি, তানি, মৌটুসী তিন জনের প্রজেক্ট নেমেছে আমার বাসায় । এবং আম্মু আমাকে যেভাবে মুখে তুলে সবাইকে সেভাবেই। তানি জমার সময় কলা ছাড়া কিছুই খেতে পারেনা, বাসায় কলা আসে আলাদা এটা তানির ওটা সবার যাতে কম না পড়ে।
আম্মা জানে কে কোন সাইজের লোকমা খায়, কে কি তরকারি পছন্দ করে, কে কি ড্রিংক্স পছন্দ করে, কে কি চা খায় এবং চায়ে কত চামচ চিনি খায়।
রাত ভরে যখন আমরা কাজ করি, মা মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে আসে, এটা সেটা বানায়, মুখে তুলে খাইয়ে পরে আবার ঘুমায় (কেমনে যে পারে আল্লাহ মাবুদ) ।
মা গুলা এমনই হয়, জানি।
কিন্তু আমার কোঁকড়াচুলওয়ালীর কেরামতি এই খানেই শেষ না।
আমার এখন পর্যন্ত একটা মডেল নামে নাই যাতে আমার মা হাত দেয়নি :#> । এবং আমার সব মডেলের সব সিড়ি আম্মুর বানানো। আমি বানাই না কখনোই।
শুধু আমার না, যাই আমার বাসায় কাজ করুক আম্মা তাকেই সাহায্য করে।
উঁহু, কাজ করতে করতে যে এক্সপার্ট এমন না, তাকে প্রতিবার নতুন করে বোঝাতে হয়। আমার খারাপ লাগে না। (জানি, ভাবছেন কি খুনে মেয়েরে বাবা। একমাত্র মেয়ে তো, তাই আহ্লাদটা অনেক বেশি। :!> ) আর কাজ না দিলে যে মা ঘুমিয়ে পড়ে, আর মা সামনে না থাকলে যে আমার কাজ হয় না।
কিন্তু তার থেকেও জরুরি কথা হলো, মা নিজেই খুব আগ্রহ নিয়ে করে। পাশের যে নতুন বিল্ডিংটা হচ্ছে, মা দাঁড়িয়ে দেখে যে তার মেয়ে কি করে আর সত্যি সত্যি কি হয়। জিনিস গুলো বোঝে, বোঝার চেষ্টা করে।
আমি যখন ডিজাইন করতে করতে দু'তিনটা অপশনের মাঝে কনফিউজ হয়ে বসে থাকি তখনও আমার উদ্ধার কর্তা আমার মা, তার লজিক যে ভালো।
মোদ্দাকথা হলো আমার কোঁকড়াচুলওয়ালী আমার সবচে স্পেশাল মানুষ।
এজন্য না যে সে আমার মা, বরং এজন্য, যে সে আমার সবচে ভালো বন্ধু, আমার সব কাছের মানুষ। মাতে-মেয়েতে দূরত্ব কম নেই, কিন্তু বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আবার সেরকম কোন আড়ালও নেই। আজিবটিক শোনাচ্ছে ? আমার মা না? একটু আজিবটিক তো হবেই ।