নৈতা রূপং পরীক্ষন্তে নাসাং বয়সী সংস্থিতিঃ। সুরূপং বা বিরূপং বা পুমানিত্যেব ভুঞ্জতে। ( মুরারিমোহন)
অর্থাৎ, " তোমরা তার রূপ বিচার করো না এমনকি তার বয়সও না।সুরূপা কিংবা কুরূপা যাই হোক না কেনো পুরুষ পেলেই তারা সম্ভোগের জন্য অধীর হয়ে উঠে। "
এরকমই আমাদের আদিপিতা ও পৌরাণিকগ্রন্থ গুলো আমাদের বিভিন্ন উপদেশ বানী দিয়ে আসছে নারী নিয়ে। এমনকি আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা ও আমাদের সাহিত্যে নারীকে ধরা হয় দুর্বল, কুরূপা কিংবা এমন কোন কিছুর সাথে তুলনা করা হয় যা নষ্ট কিংবা যার আদৌ কোন প্রয়োজন নেই। প্রাচীনতম ইতিহাসে লিলিথ কে ধরা সর্বপ্রথম বিদ্রোহী সেই কুমারী বেশ্যা যেখানে সে তার পুরুষ সঙ্গীর উপরেই উঠে সঙ্গম করতে আগ্রহী। কিন্তু যেহেতু পুরুষ এক অলৌকিক শক্তি দ্বারা সর্বদাই নারীর উপর প্রাধান্য বিস্তার করে, তাই লিলিথের এই ইচ্ছে সে মেনে নিতে পারেনি। এবং যার ফলে মন্ত্র উচ্চারণে অদৃশ্য হয়ে যায়। নারীদের নিয়ে এরূপ অনেক কল্পকাহিনী আমরা জানি। যা নতুন কোরে জানানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই।
নারী শরীরের দিকে তাকালে আমরা সর্বপ্রথম যা উপলব্ধি করি তা হচ্ছে কাম্যতা। আমরা জ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে তার শরীরকে কাম্য করি অতিগোপনে। কিন্তু যখনই সেই শরীরে স্বাভাবিক রীতিতে ঋতুস্রাব হয় তখন আমরা নারীকে বর্জন করি। পুরনো পৌরাণিক গ্রন্থগুলো থেকে আমরা জানি তখন নারীর শরীরে লেগে থাকে অপদেবতা। সেসময় তার সাথে সঙ্গম তো দূরের কথা। সাধারণ চলাফেরাও আমাদের জন্য অস্বস্তিজনক। আধুনিক যুগেও তার খুব একটা তারতম্য নেই। যেই সময়টা স্ত্রীর পাশে দরকার ছিলো স্বামীকে, সেই সময় টাতে স্বামী ঘৃণা ও অস্বস্তি নিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় পাশা খেলায় মত্ত। আর এইসব ধ্যানধারণা থেকে আমাদের সমাজ যেদিন মুক্তি পাবে,সেদিনই হবে নারীদের মুক্তি। তারজন্য পুরুষ না যতোটা এগিয়ে আসা উচিৎ, তারচেয়েও বেশি উচিৎ নারীর নিজেকে নিজে বের করে আনা।
কয়েকদিন আগে একজন আমাকে কসমিক সেক্স ছবিটি দেখতে বলে। যদিও এ ছবি আমি আরো অনেক আগেই দেখি, তবু আবার দেখলাম। আমি জানিনা কসমিক সেক্স ছবিতে পরিচালক কী বুঝাতে চেয়েছেন। শরীরের কামহীনতা ছাড়া আর কোন উপাদেয় কিছু নেই বলে তার মনে হতে পারে। ঠিক যেমনটা আজ থেকে বহুবছর আগে মুক্তকন্ঠে ঋষিদের রচিত উপাখ্যান ও শ্লোক গুলোতে ভরে আছে অশ্লীলতা ও নারী বিদ্বেষ। ঠিক যেমনটা ফ্রয়েডের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যায় নারীর বৈশিষ্টে খোজা গূঢ়ৈষা ও শিশ্নাসূয়া ধারণার উদ্ভব হয়। আধুনিক যুগের এইসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত হতে গিয়েও আমরা এইসব ভ্রান্ত ধারণায় আবারো ঢুকে যাচ্ছি টেলিফিল্ম গল্প উপন্যাস ও শিল্প সাহিত্যের আরো নানা অঙ্গন দিয়ে।আর এইসব ধারণা কে ভেঙে দিতে হলে নারীদেরই বের হয়ে আসতে হবে। নাকি আমাদের আবারো প্রমাণ করতে হবে কেনো এবং কেনো পৌরাণিক গ্রন্থ গুলো নারীকে সবসময় ছলছাতুরিপনার সাথেই তুলনা করা হয়। যার ফলে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের নারীদের মাঝে তৃতীয় সিঁড়ি ভেঙে চতুর্থ সিঁড়িতে যাওয়ার বদলে প্রথম ও দ্বিতীয় সিঁড়ি ভেঙে ভূমিতেই নেমে আসতে হয়।
হায় আমাদের মেয়েরা, তোমরা প্রেমিকা হতে চাও কিন্তু রোকেয়া হতে চাও না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৫:০৮