" মৃত্তিকার ভাজে ভাজে আমি বর্ণ লুকিয়ে নষ্টনীড়ে
অতীতস্মৃতি -কল্পিত ভবিষ্যৎ,
একটি কবিতায় আমি কবি হতে চেয়ে "
কবিতিকা / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
হ্যাঁ - একটি কবিতায় আমি কবি হতে চাই। আমার মায়ের মতো একটি কবিতা। আইসিউতে পরে থাকা আমার বাবার মতো একটি মুমূর্ষু কবিতা। কিশোরী বোনের খোঁপায় ঝুলে থাকা নয়নতারার মতো একটি কবিতা। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি - সবুজ শ্যামল একটি কবিতা।
আমার এরূপ ইচ্ছে'কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য কোরে প্রাক্তন সব প্রেমিকারা আমাকে সজ্জিত করে ব্যঙ্গচিত্রের প্রদর্শনী সামগ্রী রূপে। কিন্ত তারা জানে না তাদের গর্ভে দিনে দিনে জন্ম নিয়েছে আমার একটি সন্তান, " পঞ্চাশ প্রণয়ী " ; আমার প্রথম পাপগ্রন্থ একুশে বইমেলা ২০১৮ তে প্রকাশিত হবে আর কয়েকটি ঘন্টা গত হবার সাথেই।
"সারারাত বসে মগজ থেকে শব্দ এনে শাদা কাগজে আত্নহারা প্রেমিকার নাম লিখে দেই। তার শিয়রে রাখা মোমবাতি আর খোলা সোনালি চুলের দিকে তাকিয়ে দু'মুঠো বৃষ্টির প্রার্থনা করি।আমার বিচ্ছেদ নিয়ে সে যখন ঘুমোয় পৃথিবীর বুক জরিয়ে, আমি তখন নিথর নিরবে ভাঙা কলমে অক্ষরের দস্তখত করি।
নেশা / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
মীরা তোমার কি মনে আছে আমি যখন রাত জেগে তোমার নেশায় মেতে থাকতাম, তোমাকে আঁকতাম আমার কবিতার ক্যানভাসে, ঠিক তেমনই এক দিন তোমার পায়ে একটি বৃষ্টি এঁকেছিলাম। আমি ছুঁতে চাই সে বৃষ্টি ফের আরেকবার -
"সহসা ধূমায়িত প্রবল হাওয়ায়
এলোমেলো কিছু নির্মল ঘ্রাণে উড়ে আসা
সদ্য জন্ম বৃষ্টি কণা তোমার পায়ে।
আমি বুঝিনি সেই বাধাহীন বৃষ্টির জল
কৈশোরে ফেলে আসা আবুলেশ স্মৃতি।
বড্ড নিঃসঙ্গতায় নীরব নিস্পন্দিত
একাকী অপেক্ষায় প্রথম ও শেষ রাত্রির মাঝে
তোমার পায়ে একটি বৃষ্টি -
আমি ছুঁতে চাই। "
মীরার পায়ে একটি বৃষ্টি / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
ভালোবাসার অপরাধে ওরা আমাকে কারাগারে বন্দি করলো। আমাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হলো প্রিয়তমা। এই হিংসুক পৃথিবী পরিতৃপ্তি চাইলো তোমার প্রেমিকের ঝুলন্ত একটি লাশে। জেলখানার কারাগারে আমি নিশ্চুপ, নির্বাক ছিলাম। মিছেমিছি ছটফটাইনি। তুমি দেখেছো'তো প্রিয়তমা, কারাগার থেকে আমার ফেলে আসা শেষ চিঠি -
" আমি জেলখানায় আজ বহুদিন ধরে
ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিছেমিছি ছটফটাবো জানি
প্রিয়তমা -
আমাদের সঙ্গমে রক্তের উত্তরায়ণ উজ্জ্বলতা
জল্লাদের লোমশ হাতে মৃদু কম্পিত ভয়ের শ্লোক
তুমি দেখে নিও
হিংসুক পৃথিবীকে তৃপ্ত করে নিশ্চুপ ঘুমে । "
কারাগার থেকে / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
বন্দির মুক্তির পরেই তুমিহীনা আমি আবার ফিরে আসি একটি রাতের ভ্রমণে। জুয়াড়ির ইঙ্গিত'তে আমি বুঝতে পারি, আমরা মরচে পরা বেওয়ারিশ।
"জুয়াড়ির টেবিলে চার রঙ
ইঙ্গিতে বুঝে নাও,
আমি তুমি ও আমরা
এককথায় -
মরচে পরা বেওয়ারিশ। "
জুয়াড়ির ইঙ্গিত / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
এভাবেই আমি শূন্য থেকে শূন্যতায় হারাতে থাকি। একটি নিষ্পাপ মৃত্যু লিখে দেয় দেয়ালে একটি নাম। এঁকে দেয় তোমাকে আঁকতে গিয়ে একটি নদী। একাই কাঁদতে কাঁদতে ঈশ্বরের সাথে সহস্র নির্ঘুম রাত পার করি আমি -
" ঈশ্বর আপনার কি মনে আছে
আমি কেঁদেছিলাম
আমি কেঁদেছিলাম ঈশ্বর
সমুদ্রের নোনাজলে আমি ঝরিয়ে ছিলাম দু'ফোঁটা চোখের জল
আর যন্ত্রণা সইতে হবে না বলে ভারী এক চোখে মুক্ত করি
আমি সেই চুলের কথাই বলছি ঈশ্বর
আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম আমার ভালোবাসা
আমি খুন করেছিলাম নীরব ঘাতকের মতো
আমি পলাতক আসামী হয়ে শালিকের ডানায় লুকিয়ে ছিলাম
ঈশ্বর আপনি কি দেখেছেন
কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি তারপর। "
তুমি / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
আর সেই নির্ঘুম রাত গুলোতেই আরোভী এসে আমায় আঁকড়ে ধরে। সে কি তোমারই অন্য কোন রূপ ছিলো? নাকি আমার ভ্রম। আমি শেষবার পৃথিবীর কাছে সেদিন মুক্তি চাইলাম। আমাকে মুক্তি দিন। আমি আমার প্রেমিকার বল্কল ঘুমাতে চাই, একটি নিশ্চিত ঘুম, ক্লান্তিহীন।
" আমি শেষবার পৃথিবীর কাছে মুক্তি চাই
তোমার কাছে বন্দি হবো বলে
আমি বাতাসের কাছে বলতে চাই
আমি কাঁদতে চাই
তোমার চোখে জল দেখি বলে
বাতাসে এখন জল শুকোয় না আরোভী
বরং চলো দু'জনে কাঁদি নানা রকমে
বাতাস তখন মুখ লুকোবে
বলবে সে হেরে গেছে
চলো পৃথিবীকে হারিয়ে দেই "
আরোভী / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
কিন্তু আমি ভুলে যাই আমি এক নিষিদ্ধ সন্তান। পথ শিশুর মতো হাহাকার। ঘর আছে তবু ঘর নেই। আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে তুমি ; আমার পৃথিবী। তবে কেনো হত্যা করলে না ? আমি যে এক অসমাপ্ত হয়ে পড়লাম।
" কবরের কাঁচা মাটিতে আমার
অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি,
লুটোপুটি খায় - গাঢ় অন্ধকারে
আমাকেই তুমি - হত্যা করো | "
অসমাপ্ত / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
আমি রঙ হয়ে হারিয়ে যেতে লাগলাম রঙের মাঝে। ঠিক তখনই দেখলাম আমি কিছু মানুষ মানুষকে বেশ্যা বলে। আমি বললাম, আমি চিৎকার কোরে বললাম -
" উড়ালপুর জংশনে বসে উড়াল সঙ্গীত বাজিয়ে - উড়ে যা, উড়ে যা, উড়ে যা পাখি। বিড়ালচোখী হরিনী এসে স্বপ্নের মাঠে ঘাস খায়। আর আমায় কানে কানে বলে বেশ্যার দোকানে চা পাওয়া যায়। পৃথিবীতে ওরা ছাড়া আর কোন মানুষ নেই। "
মানুষ না বেশ্যা / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
আর আমার এরূপ ধৃষ্টতার পর প্রাক্তন সব প্রেমিকারা আমকে তাদের গোপন আদালতে দাড় করালো। আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলে তোমরা।
"আমাকে বুকে জড়িয়ে আপনারা যখন চিৎকার করে কেঁদেছিলেন পূর্ববর্তী সাতাশ জন প্রেমিকের নাম ধরে ঠিক ওই মুহূর্তে আমি কি করেছিলাম আপনাদের মধ্যে যে বলতে পারবেন আমি ঠিক এই মুহূর্তে তার সাথে সঙ্গম করতে প্রস্তুত।
The court is adjourned."
আদালত / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
গতকাল বিকেলের মতো আমি আরেকবার আরেকটি বিকেল চাই।আমি আরেকবার তোমাকে চাই
আমি আরেকটি শেষ বিকেল চাই।
ভালোবাস, বিষাদ ও অপরাধের মাঝে ঘুরতে ঘুরতে আমি তিন পৃথিবী এঁকে ফেলি। আর পরপর তৃতীয় জন্মে কখনো নাফ নদীতে অদৃশ্য নীল তিমি কখনো প্রেমিক কখনোবা রোহিঙ্গা শিশুর ভেসে থাকা লাশ। আকাশেও দেখি তিনটে চাঁদ। ঠিক মাঝখানটায় দ্বিতীয় জন্মে গত হয়ে যাওয়া প্রিয়তমা, " ত্রিমিলিতি "। ভীষণ যুদ্ধ লেগেছিলো সেদিন। এক গোপন বিশ্বযুদ্ধ।
" প্রথম জন্মের কথা বলতে গেলেই তৃতীয় জন্মের কথা প্রথমে আসে। যতটুকু মনে পরে -
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে এখনো কোন তথ্য হাতে আসেনি। নীল তিমি খবরের কাগজ থেকে ভীষণ দূরে। তবে আমি যখন বে অফ বেঙ্গল পেরিয়ে নাফ নদীতে যাই তখন মৃত শিশুর মুখ আমায় বলতে থাকে, ইতিমধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত। "
তিন পৃথিবী / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
কি নিদারুণ নির্ঘাত, কি বিনম্র বিভাজন! আমার সহস্র রাত্রির অপরাধ। প্রেমিকাদের সহস্র অপবাদ। সমাজের কলুষিত অন্ধকার। তাই আজ লিখতে বসেছি Notes from my dark world.তবু তুমি ও তোমরা রয়ে যাবে অতি সযত্নে গোপনে।
" This is the hardest time to live without you. It makes me crazy tonight.
পর্দার আড়ালে বসে নক্ষত্র আর চাঁদ দূরে সরে যাওয়া দেখে অবক্ষীয় সহনশীলতায় প্রিয় অন্ধকারকে আবারো ভালোবাসি প্রথম দিনের মতো। তুমি পুনরায় চলে যাবে তা ভাবতেই আত্নসমাধি দেখার জন্য রাতের পাখিদের নিমন্ত্রণ জানাই।
The fear of death is not too much important for me. Remembering that I'll be quit forever. "
NOTES FROM MY DARK WORLD / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
মা দ্যাখো -
তোমার একমাত্র ছেলেটি আজ কবি হয়ে উঠেছে। তোমাকে ভীষণ মনে পরে তার। রাইফেলের স্বীকারোক্তির মতো আজো তোমার শেষ কথা কানে আসে -
" তুমি হারিয়েছো পৃথিবীর কোলাহলে
ঘুমিয়েছো রোমশ ঘাসের বিছানায়,
তুমুল তুফান ঝড়ে থুবড়ে পরা কিছু
চিৎকার ধ্বনি !
আজো বাতাসের সাথে কানেআসা ;
" তোমাদের শেষ হলে,
আমার দেহটা সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে দিও-
আমার সন্তানরা দেখলে বড় কষ্ট পাবে। "
এই বলে চোখ বুজেছিল যে নারী ( তুমি) -
সে আমার মা।"
অতঃপর নিশাগম / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
কি সুন্দর সমাজ । এক থালা ভাতের জন্য চিৎকার । মানুষ মানুষের জন্য বলেছিলেন আপনারা। কিন্তু কোথায়? আজো লেগে আছে অনীকের চোখে দাগ।
" মানুষের জন্য, মানুষের জন্য -
লেবাছ খুলে আসো
মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসো
আসো সভ্যতা
আসো সমাজব্যবস্থা
আসো রাষ্ট্র
আসো মানবতা।
জলতরঙ্গের ন্যায় উন্মুক্ত চোখে
তাকিয়ে থাকা -
এই সেই অনীকের কবিতা। "
অনীকের চোখে দাগ / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
আর পারছিনা। নিজেকে নিজেই হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণায় -
" আমি দোদুল্যমান পৃথিবীর বুকে
চুমো খেয়ে বলি
সভ্যতার অসভ্য বেড়াজালে ঘেরা
নগরীর রাজপথ জ্বালিয়ে দিতে
আমার বড় ইচ্ছে হয়
আমি আরো চুমো খেতে পারি
সমাজের বুকে
নরকের বুকে
একের পর একাধিক চুমো খেতে |
রাষ্ট্রের বল্কলে আমি ঘুমিয়ে যেতে পারি
শান্তির শয়নে আমি ঈশ্বরীয় আস্বাদনে
চুমোর পর চুমো খেতে পারি | "
চুম্বন / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রনয়ী
এই নরকে তুমি আমায় রেখে কেনো চলে গেলে? বলো তুমি কেনো গেলে? জানো আজো আমি প্রতিদিন তোমার দরোজায় ছুটতে ছুটতে আসি। আমি আসি, প্রতিদিন আসি, আমি আজো প্রতিদিন আসি -
" আমি ছুটতে থাকি, ছুটতে থাকি,
বলগা হরিণীর পিছে যেন মানুষখেকো বাঘ লেগেছে আজ,
প্রাণ বাচাঁনোই এখন দায়ভার।
ছুটতে থাকি, ছুটতে থাকি।
গোরস্থানের সদর দরোজায় এসে ধমকে দাড়াই,
কপাটে হাত দিয়ে ভয়ে পিছুপা হাটি।
হ্যাঁ। ওইতো দেখা যাচ্ছে,
আমার পঞ্চাশজন প্রেমিকার মৃতের আলয়,
একটি কবর।
সেখানে প্রেমিকারা ঘুমোচ্ছে আমার,
যাকে আমি পঞ্চান্ন হাজার লক্ষ পঞ্চাশ কোটি রূপে ভালবাসি।
মা।
আজ এই নিষিদ্ধ পৃথিবীতে আমি বড় একা।
মা।
অশ্বশালে ঘোড়ার লেজে এখনো ঝুলছি আমি।
মা।
আমি ক্লান্ত হয়ে পরি এই নরকে, তোমার প্রেমের ছায়া কেন কেড়ে নিলে?
মা।
আমি মাঝরাতে ঘুম থেকে কেঁপে কেঁপে উঠি ,
সেখানে দৈত্য দানবেরা আমায় ভয় দেখায়। আমি ভীত হই।
আমার খুব ভয় হচ্ছে ;
মা। ♥
পঞ্চাশ প্রণয়ী / অক্ষর অনীক / পঞ্চাশ প্রণয়ী
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:০৭