(এই লেখাটি ৮ জন ব্লগারের মিলিত লেখা। এর প্রতিটি প্যারা একজন করে ব্লগার লিখেছে। এখন আপনাদের বলতে হবে কোন প্যারা কে লিখেছে। বিজয়ীকে কুলুজআপ১ ঘোষনা করা হবে এবং তার জন্য পুরস্কার হিসাবে থাকছে একটি লেটেষ্ট মডেলের বিএমডাব্লি্উ গাড়ী মোছার গামছা ও গাবতলি টু সায়দাবাদ চিটিং সার্ভিসের রিটার্ন টিকেট।)
লেখকরা হলেন : জেবীন, বিষাক্ত মানুষ, তানজিলা হক, রাশেদ, মাথামোটা, নাদান, আউলা এবং মানুষ।
মুবিন আজ সারাদিন বিডিচ্যাটে বসে আছে এই আশায় যে, যদি কোন 'মুরগি' পাওয়া যায়। কিন্তু লিষ্ট ধরে সবগুলো মেয়ে নিক গুলোকে নক করেও এখন পর্যন্ত একজনেরও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বলে এখনো আশা হারায়নি সে। মনে মনে যদিও অনেক বিরক্ত। ভাবছে বিডি চ্যাটে আসলেই সব মেয়ের যেন ভাব বেড়ে যায়। এর মধ্য মা এসে কয়েক বার খেতে ডেকে গেছে। ইউনিভার্সিটির জরুরি প্রজেক্ট করছে বলে মহা বিরক্ত হয়ে মাকে বিদায় করেছে। অবশেষে বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিড়ে- রিমি নামের এক মেয়ে তাকে 'হাই' বলে। একম সময়ে দোস্তের ফোন- বলে চল বেইলি রোড থেকে একটা ফিল্ডিং দিয়ে আসি। ফোন ধরে ব্যাস্ত ভাবে মুবিন বলে দোস্ত বাড়ি ভর্তি মেহমান, আইজ যাইতে পারুম না। তোর লগে পড়ে কথা কমু। এই বলে ফোন রেখে দেয়।
লাল কফির মগটা টেবিলে রেখে মুবিন চেয়ারে বসে , মুখে একচিলতে হাসি তার । মাথার উপর পাখা ঘুরছে তবুও শিহরন বয়ে গেলো মুবিনের শরীরে, বুকের ভিতর একটু দুরুদুরু করছে , যাক অবশেষে শিকে ছিড়লো তাহলে । তবে মনে একটু সন্দেহ করলো - ছেলে না তো আবার !
দেখি আগে যাচাই করে ..
কথা শুরু করার আগে মুবিন গুছিয়ে নেয় কিভাবে শুরু করা যায় !
নিজেকে একটু স্মার্ট হিসেবে দেখাতে হবে । মোটেও ছ্যাবলামো করা যাবে না ।
একটু সময় নিয়ে মুবিন কিবোর্ডে হাত চালালো ---
-হ্যালো !
-হাই
-কেমন আছেন?
-আমি কেমন আছি জাইন্না তোর লাভ কি?
-এমনি জিগেস করছিলাম আর কি?
-খাইয়া কাজ নাই তোর মাইয়া নিক দেখলেই লাফায় পরছ!!!
-ছি আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
-তয় কেমনে কমু?
-ভদ্র ভাবে বলুন
-তুই আমারে ভদ্রতা শিখানের কে রে?
-আপনি আবার খারাপ ব্যবহার করছেন।
-ভালা না লাগলে ভাগ।কানের সামনে ঘ্যন ঘ্যন করছ কেন?
-আপনিত ইচ্ছে করলে ভালো ভাবে কথা বলতে পারেন
-বলুম না।তুই কি করবি?
-আপনি আবার খারাপ ব্যবহারি করছেন।
সাথে সাথে আফ লাইন হয়ে গেল মেয়েটা
টিনএজ মেয়েদের মত আচরনটা করলো অর্পিতা, ইদানিং কালের ওরা এইযে বাজে ব্যবহার টাকেই “অস্ত্র” মানে । মানুষ আকর্ষন করার হাতিয়ার । ভালো ব্যবহার আজকাল মানুষকে কাছে টানে না, সবাই চায় নতুন কিছু । আসলে সীমা ছাড়িয়ে কল্পনার স্বপ্নটা প্রবল আকর্ষন করে আমাদের ।
এই নিয়ে হাতে গোনা কয়দিন ঢু দিয়েছে চ্যাটরুমে, আজ তো ম্যালা দিন পর । সাধারনত কেউ নক করলে উত্তরও দেয় না । ও কি তবে নাক উঁচা ! আতেল জাতীয় কিছু ! কিন্তু বন্ধুদের কেউ বলতে পারবে না অমন কথা সে বিশ্বাস আছে । আসলে এই চ্যাটিং জাতীয় ব্যপারটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে নি ও । শুধুই সময়ক্ষেপনের জন্য শুরু করা । নাকি নানান মানুষের নানান ঘটনা জানতে পারার উপায় এটা ? যেসব ঘটনার অনেকটাই মনগড়া , তাও কিছু কিছু মানুষ মন ছুয়েঁ যায় । তবে আজ যে চ্যাটিং করার স্বাভাবিকরীতি “ur asl plz” এই কথাটা দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । কি অনায়াসেই না মিথ্যা বলা যায় এর জবাবে , সেটা তো যে কেউ জানে আর কারো সাথে বলার জন্যে এই অনর্থক চিরাচরিত মিথ্যা বলাই বা কেন !
কেন এমন করলো অর্পিতা নিজেও জানে না, কারন সেতো টিনএজ কেও না। মুবিনের নিকটা দেখে মজা লাগছিল. অর্পিতা বলতে চেয়েছিল, শোন.. তোমার একটা 'আই' বাদ গেছে, হবে "মুই বিন"!! মজা করার মুডে ছিল ও, তবুও... কেন জেন মবে হচ্ছে ছেলেটা আবার নক করবে। আসলে বাজে ব্যাবহারের থিওরিতো তাই বলে!! দেখি না কি হয়!! শুধু মজা নেবার জন্যে এমন করতে গিয়ে, শুরু করা ব্যাপারটা নিজেরি খারাপ লাগলো। অর্পিতা কি আর কথা বলবে ওর সাথে? ক্ষমা চাইবে?
অর্পিতা মনে মনে হাসে বিডিচ্যাটের ছেলেদের কাঙাল অবস্থা দেখে। এদের জন্য সাইটে লগইন করাই দায়। মিনিটে দশটা hi আর asl plz উইন্ডো ওপেন হতে থাকে। এই অফিসে আবার চ্যাটিং করা মানা। মার্কেটিং এর গাট্টু বস টা আবার একটু পর পর সবার পেছন থেকে উকি দেয়।
হটাৎ ওর মাথায় নতুন একটা বুদ্ধি ঝিলিক দিয়ে ওঠে। এবার বিডিচ্যাট ওপেন করে সে মুবিন_ঢাকা নামে লগইন করে। দশ মিনিট পরেও কোনো asl plz বা hi রেসপন্স না পেয়ে খুশী হয়ে ভাবে, যাক এবার তাহলে রোমিও উৎপাত কমলো।
এইবার অর্পিতা শান্তিমনে একটা মেয়ে নিক কে নক করলো....সাথে সাথেই রেসপন্স পেল। মেয়েটার সাথে কথপোকথনের শুরুতেই asl জিজ্ঞেস করলো। মেয়েটা টিনএজ। যখন মেয়েটা অর্পিতাকে asl জানতে চাইলো অর্পিতা তার আসল সবকিছু বলে ফেললো্। সাথে সাথেই ওপাশের মেয়েটা তাকে রেসপন্স করা বন্ধ করে দিলো।
এইবার অর্পিতা অনেকগুলো ছেলেকে নক করলো কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। অর্পিতা এইবার বাজ, অডিবলস দিয়ে বিরক্ত করতে লাগলো কিছু ছেলে নিক কে। এইবার ছেলেগুলো তাকে গালিগালাজ শুরু করলো।
অর্পিতা ভয়ে চ্যাটরুম থেকে বের হয়ে দেখলো পাশে বস দাড়িয়ে.....
এদিকে মুবিন বিষন্ন মুখে বিড়ি ধরাইছে। কেবল দুইটা টান দিছে, দরজায় নক। বিরক্তমুখে বিছানার কোনা দিয়ে বিড়িটা লুকিয়ে দরজা খুললো। দেখে বাপ দাঁড়িয়ে আছে। বাপ জিজ্ঞাসা করলো বাড়ির বিল দিয়েছে নাকি। মুবিন বিড়বিড় করে বলে, কালকে দেবো!মনে মনে ভাবে, আবার ধার করতে হবে মনে হচ্ছে। সেই টাকাগুলো দিয়ে ওয়েবক্যাম কিনে আনছে একটা। বাপ গজগজ করতে করতে চলে যাওয়ার পরে আবার দরজা বন্ধ করে বিড়িতে টান দিতে দিতে চ্যাট এ বসলো। এবার ভাব ধরা যাবে না চিন্তা করে অন্য একটা মেয়েকে নক করে।পুনরায় গতানুগতিক কথোপকথন
-হাই
-হ্যালো
-এ এস এল প্লীজ
-১৯ এফ বিডি
-এ এস এল?
ওপাশ থেকে ভেসে আসা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও মুবিন থেমে গেল। বিরক্ত লাগছে। বিগত পাঁচ বছর ধরে একইভাবে শুরু হওয়া কথোপকথন আজকাল আর তাকে টানছে না তেমন। আসলে চ্যাটিং করতে করতে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে কোনটার পরে কি কথা হবে মোটামুটি একটা ধারনা করে ফেলতে পারে সে আগে থেকেই। শুধু রিমি নামক আইডিটার কোন মতি গতি বুঝতে পারছে না। বাংলাদেশের কোন মেয়ের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ আশা করা যায় না, সূতরাং মুবিন ধরে নিল এই নিকের আড়ালে কোন ছেলে রয়েছে।
ওদিকে অর্পিতা মনে মনে ঝাড়ি খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাকে অবাক করে দিয়ে বস বললে বসল,
-দুষ্টু বালিকাদের মতো আচরণ ঠিক না।
-মানে?
অর্পিতা বসের মতিগতি বুঝতে পারছে না।
-এই যে আপনি ছেলে সেজে ছেলেদের জ্বালাচ্ছেন এটা ঠিক না।
কথাটা বলেই বস হাঁটা দিল। আজকেও ব্যাটা সাকুরা থেকে দু-পেগ মেরে এসেছে, মনে মনে ভাবলো অর্পিতা।
কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে কি মনে করে আবার মুবিন কে নক করল সে,
-হাই এগেন
-হাই
-দেখুন আপনার সাথে বাজে ব্যাবহার করার জন্য দুঃখিত
-ইটস ওকে
-আপনাকে একটা কথা বলার জন্য আবার নক করলাম
-কি কথা?
-আপনার নামের বানানে একটা “I” বাদ পড়েছে। বানানটা হবে “MUI BIN”।
অর্পিতাকে ইজ্ঞি মারলো মুবিন। এখন সে নিশ্চিত এটা একটা ছেলে।