পহেলা বৈশাখ ১৪১৭
কমিউনিটিএকশনের একশনিয়াররা ছাতা বিতরণে ব্যাস্ত, প্রখর রোদে রিকশাচালকদের মাঝে। আর আমার সারাদিন কাটলো কম্পিউটারের সামনে হুমরি খেয়ে পড়ে, সামনের কিছু কাজ নিয়ে ... ভেবেছিলাম আজকে বের হবার টাইম পাবোনা! কিন্তু সন্ধ্যার পর বিল্ডিংএর বাচ্চা ছেলে -মেয়েদের অঘোষিত নেতা ফোন কর অফার করলোঃ আপু,যাবা? কিছু ছাতা এখন ডিস্ট্রিবিউট করতে যাবো।"
এক্কেরে বাচ্চা কয়েকজন যাবে, আমার ছোট দুই ভাইও, ১০ আর ১১ যাদের বয়স। আমি না গেলে বাসা থেকে ওদের পারমিশন মিলবেনা, তাই রাজি হয়ে গেলাম!
যখনি এরকম কাজে বের হয়েছি, আমার চোখে পড়েছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মন্দাবস্থা, এরকম সাহায্য পেয়ে তাদের আনন্দ ইত্যাদী বিষয় কিন্তু আজকে ভিন্ন। এই পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চা গুলো এই কাজে বের হতে পেরে আনন্দ দেখে এত্তো ভালো লাগলো!!!
আমার বিড়ালভীতি আছে, এরা এটা জানে। তাই অন্ধকারের দিকে পয়েন্ট করে বারবার আমাকে বলতে থাকলোঃ ওই যে বিড়াল!! ওই যে বিড়াল!
আর ওদের খুশী করার জন্য আমিও প্রতিবার চমকে ওঠার ভান করলাম! :-D
এদিকে সেই অঘোষিত নেতাকে আমরা অফিসিয়ালি আমাদের নেতা ঘোষনা করলাম। আমার চোখে এখনো সে নিতান্তই বাচ্চা! কিন্তু আজকে বুঝতে পারছিলাম ও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে আর অনেক রেসপন্সিবল!
রিকশাওয়ালা মামাদের সে শুধু ছাতা দিয়েই ক্ষান্ত হয়না, ওর বক্তব্য শুরু হয়ঃ রোদ বৃষ্টিতে কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়, তাইনা?"
স্বাভাবিক ভাবেই রিকশাওয়ালারা তাদের মলিন হাসি হেসে বলেঃহ্যা,হয়।
তখন নেতা ম্যাজিশিয়ানের মত ছাতা বের করে বলেঃতাইতো আমরা আপনার জন্য এই ছাতা এনেছি!
তারপর খুব আয়োজন করে ছাতা পড়ানো হয় রিকশাওয়ালার মাথায়। তারপর একটা ছবি তোলা হয়, সবার বত্রিশটা দাঁত দেখা যায়, কি আনন্দ!!
এই ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে একটা ঘটনা ঘটলো।এক রিকশায় বসা ছিল তরুণ-তরুণী।জ্যাম এ আটকে ছিল। তো নেতা সেই সুযোগে রিকশাওয়ালাকে ছাতা দিল। বাচ্চা নেতা বেশী ভাবনা চিন্তা না করেই ছবি তোলার উদ্যেগ নিতেই তরুণ হাত বাড়িয়ে নিজের সেই সাথে পাশের জনের মুখ ঢাকার চেষ্টা করলো। এদিকে নিরীহ নিষ্পাপ বাচ্চাগুলো আমাকে জিজ্ঞেশ করলোঃ ওনাদের কি হয়েছে, আপু?" আমি আর কি উত্তর দিবো, হাসলাম!
যাদের অভিজ্ঞতা নেই তাদের বলছি, বেশ কয়েকটা ভীষণ একটিভ বাচ্চাকে ব্যাস্ত রাস্তায় লাইন করে হাটানো যে কতটা কঠিন কাজ, কল্পনা করতে পারবেননা! নিজেকে রাখাল বালক লাগে! একজন লাইনে আসে তো অন্যজন ফসকে যায়! পুরাই যুদ্ধ!
যুদ্ধ করতে করতে কে এফ সি এর সামনে আসলাম! লোকে লোকারণ্য! এত ভির আগে দেখিনি। খেয়াল করে থাকবেন হয়তো, এই দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চিকেন ফ্রাইএর সুগন্ধ সব সময় আপনাকে টানবে। আমারতো মনে হয় ওদের কোন পারফিউম আছে, দোকানের চারপাশে স্প্রে করে দেয়-"Tasty chicken perfume"!
আমি মনে মনে প্রস্তুত যে বাচ্চারা এখন বলবেইঃআপু,খাওয়ান!
এতো লোভনীয় খাবারের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, আর ওরা খেতে চাইবেনা-এরকম ঘটনা নজিরবিহীন! প্রস্তুত ছিলাম, যাওয়ার আগে টাকা নিয়ে নিয়েছিলাম পকেটে।
কিন্তু অবাক কান্ড! একট্টা বাচ্চাও তাকালোনা কে এফ সির দিকে! সবার চোখ রিকশাওয়ালা খুজে!-আর কাকে কাকে সাহায্য করা যায় আজকে! উলটা আমাকে এসে বলেঃ এই জায়গাটা সুবিধার না, চল অন্য দিকে যাই!
আমি সত্যি অভিভুত আজ। নিজেদেরকে অনেক খানি সার্থক মনে হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা যদি আরেকটা জেনারেশন গড়ে দিয়ে যেতে পারি, যারা স্বাভাবিক "ফান" এর বাইরেও "ফান" খুজবে , ভিন্নরকম ফান খুজে পাবে সমাজ সেবা মূলক কাজে, তাহলে আর কি চাওয়া পাওয়া থাকে জীবনে? আর তো কিছুই থাকেনা!