“আর দশটা সাধারন রাতের মতই ছিলো সেই রাতটা, মিসেস কামাল পরদিনের যাত্রার জন্য সব কিছু গুছিয়ে নিলেন, এবারের ট্যুরটা বেশ দেরিতেই হচ্ছে, মাঝে তার ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা গেলো আর হঠাৎ বেড়ে যাওয়া অফিসের চাপও আরেকটা ব্যপার, যাই হোক, রাতের ট্রেনে চট্টগ্রাম, সেখানে ফয়েজ লেক ঘুরে আসল যাত্রা কক্সবাজার, মি কামাল ও এবার বেশ কিছুদিন পর ছুটি পেলেন বলে কথা, রাতে খাওয়ার আগে মিসেস কামাল ঔষধ খেয়েই খেতে বসবেন (ডায়াবেটিস এর ঔষধ খেয়ে নেয়াটা এখন তার স্বাভাবিক জীবনের অংশে পরিনত হয়েছে), ঠিক এসময় একটা ফোন, অফিসের কলিগের ফোন, - মেইলটা নাকি যায়নি, এখনি পাঠাতে হবে, তাছাড়া সামনের এক সপ্তাহ যে পাঠাতে পারবেন না!!
অগত্যা খেতে না বসে বসে পড়তে হলো ডেস্কটপের সামনে, মিনিট দশের মধ্যেই মেইল পাঠানো হয়ে গেলো, কিন্তু ট্রেন তো আর ১০ মিনিট দেরি করে ছাড়বে না, তাই না খেয়েই তিনি পরিবার সহ রওনা দিলেন কমলাপুরের উদ্দেশ্যে।
স্বাভাবিক ভাবেই ট্রেন চললো, সবাই মিলে ট্যুর নিয়ে নানাবিধ আলোচনা... এভাবেই সবাই কখন যেন ঘুমিয়ে গেল, মি কামাল এর ঘুম টা গভীর রাতে হঠাৎ ভেঙ্গে ওঠে, ঘুম ভাঙ্গতেই তিনি হতবাক!! উনার সামনে মিসেস কামালের ঘুমের মাঝেই খিচুনির মত হচ্ছে, ধরে ধাক্কা দিতেই দেখেন ঘামে পুরা শরীর ভিজে আছে... মি কামাল কিছু বুঝে উঠতে পারলেননা, ধাক্কা দিয়ে স্ত্রীর ঘুম ভাঙ্গালেন- এবার আরো খারাপ কিছুর সন্মুখীন হলেন, মিসেস কামাল যে কাউকেই চিনিতে পারছেন না, বরং কি সব উল্টা পাল্টা বকছেন!!!!!...
এভাবেই কিছুক্ষন চলে যায়, সবাই মিলে সামনের স্টেশানে নেমে পড়েন, মিসেস কামাল কে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান তারা, সেখানে চিকিৎসার পর সকালের দিকে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি, কিন্তু এবারের মতো তাদের ট্যুরটা আর হয় না, পরিবার সমেত তারা ঢাকা ব্যাক করেন, আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসার জন্য!!!”
উপরে বর্ণিত ঘটনা এবং চরিত্র গুলো কাল্পনিক হলেও এমন ঘটনা ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনে অনেকবারই ঘটে থাকে, অথচ সাধারন কিছু সচেতনতাই এমন সব অবস্থা থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে!!!
~ ~ ~
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যে রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে মুক্ত করা যায় না, বরং যা একটি নির্দিষ্ট সীমার ভেতর রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হয়।
ডায়াবেটিস এর সমস্যা ২ ভাবে হয় – ১ম হঠাৎ করে কিছু সমস্যা হয়, যার ব্যপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়, ২য়, ধীরে ধীরে শরীরে কিছু সমস্যা তৈরি হয়।
যদিও দুই ধরনের সমস্যাই সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হয়, তবুও হঠাৎ যেই অসুস্থতা তৈরি হয়, তার সমাধান দ্রুতই করতে হয়!!
# প্রধানত কি কি ধরনের অসুস্থতা হঠাৎ করে দেখা দেয়??
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস
হাইপার ওসমোলার নন কিটোটিক কোমা
# হাইপোগ্লাইসেমিয়া -
হাইপোগ্লাইসেমিয়া ডায়াবেটিস রোগীদের কমপ্লিকেশান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হওয়া কমপ্লিকেশান।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলতে বুঝায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমান সাধারন মাত্রার থেকে নিচে নেমে যাওয়া, সাধারনত রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান ৩ mmol/L এর নিচে নেমে যাওয়াকে আমরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলি!!
# উপসর্গ -
মাথা ব্যাথা হওয়া
কনফিউশান
বুক ধড়ফড় করা
বেশি ক্ষুধা লাগা
বমি বমি ভাব হওয়া
ঘাম হওয়া
টেনশান হওয়া
অস্থিরতা
কাউকে চিনতে না পারা
জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
সকল ক্ষেত্রে সব উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। তবে সাধারনত হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে উপসর্গ দেখা যায়।
# কারন -
কোনো বেলার খাবার না খাওয়া
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডায়াবেটিস – এর ঔষধ কিংবা ইন্সুলিন গ্রহন করা
হঠাৎ অতিরিক্ত পরিশ্রম করা
কোনো সময় খুব ক্ষুধা পাওয়ার পরও খাবার না খাওয়া
# চিকিৎসা -
হাইপোগ্লাইসেমিয়া-এর চিকিৎসা খুব সহজ, তবে যেটা বেশি জরুরি এক্ষেত্রে তা হচ্ছে সময়, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়, ফলাফল ততই ভালো!
দ্রুত রোগীকে গ্লুকোজ খায়িয়ে দেয়া
গ্লুকোজ পাওয়া না গেলে চিনি বা মিষ্টি ধরনের কিছু কাইয়ে দেয়া
যদি রোগীর জ্ঞান না থাকে বা কোনো ভাবে খাওয়ানো সম্ভব না হয়, তবে ইনজেকশানের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করতে হবে - ২ অ্যাম্পুল ২৫% গ্লকোজ ইনজেকশান দিয়ে দিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।
*** সচেতনতাই যথেষ্ট ***
হাইপোগ্লাইসেমিয়া এর সমস্যা এড়িয়ে চলার জন্য সচেতনতাই যথেষ্ট!!
ডায়াবেটিস এর রোগীরা সব সময় কাছে গ্লুকোজ রাখতে পারেন, না হলে মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যাদি যেমন চকোলেট ও রাখা যেতে পারে - যেন হঠাৎ প্রয়োজনের সময় তা ব্যবহার করা যায়!!
ডায়াবেটিস এর চিকিৎসার জন্য শৃক্ষলা মাফিক জীবন যাপনই যথেষ্ট!
আর ডায়াবেটিস এর সবচেয়ে কমন সমস্যা - হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসার জন্য সঠিক জ্ঞান আর সচেতনতাই যথেষ্ট!!
ফেসবুক আপডেট @ Dr. N. H. Sarja