নন্দিতা,
আমি তোমাকে ততটুকু ভালবাসি
যতটুকু আমার সাধ্যের মধ্যে
তাই বলে ভেবনা আমি তোমাকে
একটু ভালবাসি
ভালবাসি বর্ষা শেষের নীল আকাশকে যতটুকু
ভালবাসি সবুজে ঘেরা আমার দেশকে যতটুকু
ভালবাসি মাঝরাতের পূর্ণিমার চাঁদকে যতটুকু
ভালবাসি অবুঝ শিশুর মিষ্টি হাসিকে যতটুকু
ভালবাসি তার চেয়েও অনেক বেশি তোমাকে
এটুকুই যে আমার সাধ্যের মধ্যে।
বয়স যখন কৈশরের পাপড়ি ছড়িয়ে যৌবনের রেণু হয়ে প্রথম সুর্যের মুখ দেখল সেইদিন একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম - পুর্ণিমা রাত, খোলা আকাশ, চাঁদটা কিছুক্ষণ পরপর একটা ছোট্ট মেঘের আড়ালে আমাদের সাথে লুকোচুড়ি খেলছে, শীত পড়বে পড়বে, আমার হাতে একজনের হাত, অপরুপা নয়, এক দৃষ্টিতে বেশক্ষণ তাকিয়ে থাকলে সুন্দরীই লাগছিল, চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকানোর সাথে সাথে আমি তার কপালে একটা চুম্বন করলাম, চাঁদের আলো ফিরে আসার সাথে সাথে তার মিষ্টি মূখের দুষ্টু হাসিটা আমার চোখে পড়ল। তার পর একসময় চাঁদের সাথে সেও মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেলো আর ফিরে এলনা।
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলাম। তাই স্বপ্নটাকে ওখানেই মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলাম।
সময়ের পরিবর্তনে হঠাৎ আমার যৌবনের প্রথম স্বপ্নটার বাস্তব রুপ নিয়ে উপস্থিত হলে আমার সামনে।
মনে পড়ে আমি তোমাকে বউ বলেছিলাম বলে তুমি রাগ করেছিলে? আমি ঠিকই বুঝেছিলাম তোমার মনের ভিতরটা তখন আনন্দে নেচে উঠেছিল আমাকে একমুঠো ভালোবাসা দেয়ার জন্য, কিন্তু পারো নাই।
হলের সেই দিনটার কথাকি মনে করতে পারো? তোমাকে একবার সন্ধ্যা বেলা একাকি হলে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, তারপর থেকে তোমার ফোন বন্ধ থাকায় সেদিন সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। ভোর হতে না হতেই আমি তোমার হলে তোমাকে খুজতে গিয়েছিলাম। সেদিন আমার কতটা কষ্ট হয়েছিল সেটা সেদিন তুমি অনুভব করেছিলে। আজ কি ভুলে গেছ?
তোমার জন্মদিনে একটা কলম উপহার দিয়েছিলাম, কারন তখন ওটুকুই ছিল আমার সাধ্য। তুমি সেটা পেয়েই কতনা খুশি হয়েছিলে! আমি ভুলিনাই।
আমার একবার ভীষণ জ্জ্বর হয়েছিল, সৌভাগ্য হয়েছিল তোমার সেবা পাওয়ার - আর বারবার মনে হচ্ছিল শরৎচন্দ্রের "আমার বারবার অসুস্থ হতে ইচ্ছে করে তোমার সেবা পাওয়ার জন্য" এই কথাটা।
আমি হয়ত অন্যদের মত তোমাকে দামী একটা মোবাইল ফোন, একটা থ্রি পিচ, গর্জিয়াস একটা গিফ্ট কার্ড উপহার দিতে পারিনাই - কিন্তু তাতে কি? সাদা কাগজে আাঁকা গোলাপ ফুল পেয়েই তুমি কতনা খুশি ছিলে আমি আজও ভুলিনি।
আমার আজও মনে হলে ভয় লাগে, কনকনা শীতের মধে আমি তোমাদের বাড়ীর উঠানে গিয়ে লিখে রেখে এসেছিলাম "নন্দিতা, তোমাকে ভালোবাসি"।
আমি নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করলাম যখন তুমি আমার কোলে শুয়ে মৃদু হেসে বললে - আমার আর কিছু চাওয়ার নাই। তাই বলে কি
তোমাকে আমি আর কিছু দেইনা? প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় মনে করি তোমার জন্য একটা লাল গোলাপ নিয়ে যাবো, হয়ত পারিনা। কিন্তু ফিরে গিয়ে আজও তোমার কপালে একটা চুমু দিতে আমি ভুল করিনা - একটা সময় তুমি শুধু এটার জন্যই সারাদিন অপেক্ষা করতে।
আমাদের অনেক স্বপ্ন, অনেক চাওয়া, সব একসাথে হয়ত পুরণ করতে পারিনা, তাই বলে আমরা কতটা সুখী এটা ভুলে যাবে? আজ তোমার ফেসবুক আছে, আছে গুগল আর ইয়াহুর ম্যসেন্জার, আছে টুইটার আরও আছে কতকিছু। আজ তাই তোমার বন্ধু অনেক জুটেছে। তৈরী হচ্ছে ভার্চুয়াল সম্পর্ক। আমি তোমাকে ভালোবাসা দিচ্ছি। কিছুটা মানসীক সুখ তোমাকে দিতে পারছিনা, তাই আজ তোমার ফেসবুক স্ট্যাটাস "মনটা ভীষণ খারাপ, যা চাই তা পাইনা।" অজস্র কমেন্টের ভীরে আমি আজ হারিয়ে যাই - তাই যা দিতে চাই তা দিতে পারি না।
আজ আমি বড় ব্যস্ত। ঘুম ভাঙ্গে আমার টাকা উপার্জনের চিন্তা নিয়ে - ঘুমাতে যাই একই ভাবে, তোমার কত অভিযোগ? কিন্তু আমি সুধু তোমার স্বপ্নগুলোই পুরণ করার জন্য, তোমার চাওয়া গুলো পাওয়ায় রুপান্তর করার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে রেখে বের হই আর সন্ধ্যায় ফিরি - সাথে থাকে আমার মধ্যবিত্ত পরিবার।
আমি আজ তোমাকে চাঁদ দেখাতে খোলা আকাশের নীচে নিয়ে যাই না, শরতের সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে বেলকুনিতে বসে রোমান্টিক গান শুনি না।
কারন আমি আজ ব্যস্ত। আমি তোমার, আমার আর আমার মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন পুরনে ব্যস্ত।
তাই আজ তুমি তোমার ভার্চুয়াল বন্ধুর সাথে তোমার মনের আকুতি শেয়ার করো। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম এখন নাকি তোমরা ভার্চুয়াল বন্ধুরা পুর্ণিমা রাতে বিলের ধারে বসে চাঁদ দেখো আর মাঝে মধে একটু হাতে হাত রাখা, এটুকুই।
একবার ভাবোনা এটুকুই বেশী নয় কি। এটুকুই কি তোমাকে একসময় আরও বেশী কিছু করতে বাধ্য করবেনা? তুমি আমার বউ হয়েছিলে কেন? কারন আমার তোমার আবেগ ছিল - এখন আমার প্রতি তোমার সেই আবেগ নাই। আছে তোমার ভার্চুয়াল বন্ধুর প্রতি।
নন্দিতা, তুমি অভিযোগ করো আমি তোমাকে সময় দেই না। আমি দিতে চাই কিন্তু পারি না। সেটা কেবলি তোমাদের স্বপ্নগুলো সার্থক করার জন্য। ছুটির দিনে আমি তোমাকে নিয়ে বিলের ধারে বসতে পারতাম - কিন্তু আজ সেটা পারিনা। কারন তোমার একের পর এক চাওয়াগুলো পুরন করতে গিয়ে আমি আজ পাষাণ হয়ে গেছি। তাই আজ ছুটির দিনে আমাকে আউটসোর্সিং করতে হয় - তোমার ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে আড্ডাদেয়ার খরচ যোগাতে।
আমাদের ছোট্ট ভুলের কারনে আমাদের ছোট্ট সুখের সংসারটা ধ্বংস হয়ে যেতে পারেনা। আসো আমরা আমাদের মনের না পাওয়া চাওয়াগুলো ফেসবুকের ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে শেয়ার না করে নিজেদের সাথে শেয়ার করি। তোমার দশটা চাওয়া পুরন করতে না পারলেও দুইটা তো পারব? এটুকুই যে আমার সাধ্যের মধ্যে।
আমি ছুইতে পারিনা নীল আকাশকে
আমি ছুইতে পারিনা পূর্ণিমার চাঁদকে
আমি ছুইতে পারিনা অবুঝ শিশুর মিষ্টি হাসিকে
আমি ছুইতে পারিনা তোমাকেও
শুধু অনুভব করি যতটুকু তুমি থাক হৃদয়ের মধ্যে
তাই ভালবাসি যতটুকু আমার সা্ধ্যে।
ইতি,
তোমার হতভাগ্য স্বামী
আসেন আমরা স্ত্রীকে সময় দেয়ার চেষ্টা করি, নইলে হয়ত আপনাকেও লিখতে হতে পারে এমন একটা চিঠি। নিজেরা সচেতন হই। ভার্চুয়াল সম্পর্ক বা পরকীয়া কখনই আমনার ভবীশ্যত জীবনের জন্য ভালো না। আবেগের বশবর্তী হয়ে সাজানো সুখের সংসার নষ্ট না করি। একটা সময় গিয়ে ভুলটা বুঝতে পারবেন কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকবেনা। আসেন আমরা সবাই পরকীয়া এবং ভার্চুয়াল সম্পর্ককে না বলি। সকল নন্দিতারা ফিরে আসুক। সকল অভাগা সুখী হোক। এই কামনা সবার জন্য।
বি:দ্র: লেখাটা কেবলি নন্দিতাদের বুঝানোর জন্য। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা না। এখানে যে কবিতার অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে সেটা অনেক আগে আমার বউ আমাকে লিখেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪৬