নারীকে বোঝবার ক্ষেত্রে পুরুষের প্রচেষ্টা অসম্পূর্ণ থাকতে বাধ্য যদি নারীও পুরুষকে বোঝবার ক্ষেত্রে সমানভাবে সচেতন না হয়। যদিও পুরুষের আবেগ বোঝবার ক্ষেত্রে নারীর প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত ইন্টুউশন তাকে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে এরপরও নারী-পুরুষের জীবনের ব্যপারে দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্যান্য মৌলিক পার্থক্যের কারণে তাদের মাঝে যোগাযোগের ঘাটতি সচেতনতা ছাড়া পুরণ করা সম্ভব নয়। আর পুরুষকে বোঝার ব্যপারে এই মৌলিক ঘাটতি অনেক ক্ষেত্রেই নারীকে সাহায্য না করে বরং তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়ত হয়ে দাড়িয়েছে বাধা। এতে যেমন নিজের এই বিশেষ গুণটির প্রতি নারী বিশ্বাস হারিয়েছে তেমনি পুরুষকে বোঝবার এবং তার সাথে মানসিক ভাবে কানেক্ট করবার ক্ষেত্রেও নারী প্রায়ই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষকে আবেগহীন বলে তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এর দায়ভার। নারী-পুরুষ এমনকি যে কোন সম্পর্কের ব্যপারে প্রথমেই একটি ব্যপার বুঝতে পারা খুবই জরূরি। যোগাযোগের ব্যর্থতার জন্য উভয়ই সমানভাবে দায়ী। আর পুরুষকে বোঝবার জন্য নারীকে একটু সাহায্য করবার জন্যই এবার পুরুষকে নিয়ে লিখবার প্রচেষ্টা। আশা করি পুরুষের ব্যপারে নারীর কিছু প্রশ্নের উত্তর এখান থকে মিলবে। পুরুষের ব্যপারে নারীর কিছু সাধারণ এবং প্রচলিত প্রশ্নের ব্যাখ্যাসমেত এই লেখাটি মোট তিন পর্বের ভেতর শেষ করবার ইচ্ছা রয়েছে।
প্রশ্নঃ পুরুষ এত দুর্বোধ্য কেন ?
অধিকাংশ নারী জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে হয়তবা বিস্মিত হয়েছে যে কেন তার জীবনের পুরুষ এত দুর্বোধ্য, কেনই বা সে ক্ষেত্রবিশেষে তার সাথে এমন বাজে ব্যবহারই বা করে। উত্তরটা খুবই সহজ। বেশিরভাগ পুরুষের মাঝেই রয়েছে পুরুষালী এনার্জি যা নাকি নারীর আবেগীয় এনার্জি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং তাই নারীর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তা আপত্তিকর। শতকরা আশি ভাগ পুরুষ যেমন চরিত্রের দিক থেকে পুরুষোচিত তেমনি বেশিরভাগ নারীর মধ্যেই রয়েছে নারীময়তা। আর তাদের এই মৌলিক পার্থক্য তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্টতার পথে সৃষ্টি করতে পারে বেশ কিছু সমস্যার। প্রায়ই তাদের মাঝের কমিউনিকেশন দেখে মনে হয় যে তারা দুজন যেন দুই ভিন্ন গ্রহের প্রাণী, একে অন্যের সাথে এমন ভাষায় তারা যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে যা অপরের কাছে একদমই বোধগম্য নয়।
নারীর কাছে অনেক সময়ই তার জীবনের পুরুষটিকে প্রচন্ড মাত্রায় আপত্তিকর অথবা আবেগহীন মনে হতে পারে যা তাকে বেশ গভীরভাবে আহত এমনকি ক্ষুদ্ধও করে থাকে, ঠিক যেমন মেয়েলি এনার্জি পুরুষকে গভীরভাবে আহত করতে সক্ষম। তবে একে অন্যকে একবার বুঝতে শিখলে তাদের মাঝের এই মৌলিক পার্থক্যই হতে পারে তাদের সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ট এবং গভীর করবার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় আশীর্বাদ। নারী-পুরুষের মৌলিক পার্থক্যগুলোর ব্যপারে একে অন্যকে আরো সচেতন করে তোলাই হবে এই সিরিজের প্রধানতম লক্ষ্য।
প্রশ্নঃ কেন অধিকাংশ পুরুষ এত অনমনীয়/কঠোর/জেদী ?
পুরুষ মনস্তাত্বিকের অন্যতম গুণ হলো তার মনঃসংযোগ কেন্দ্রীভূত করবার ক্ষমতা। পুরুষেরা একটা কাজ সূক্ষ্মতরভাবে শেষ করবার জন্য এই গুণটিকে কাজে লাগিয়ে থাকে। তার এনার্জি তাই একটিমাত্র লাইনে চলতে থাকে। কোন একটা কাজে মনোনিবেশ করা/ডুবে থাকা যে কোন একজন পুরুষকে তার কাজে বাধা প্রদান করে দেখুন, হয় সে খেয়ালই করবে না নয়তবা সে ক্ষুদ্ধ ও বিরক্তও হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে নারী সাধারণত এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার এনার্জি একটামাত্র লাইনে আটকে থাকে না। সে বরং একটা আবেগ/চিন্তা/কাজ থেকে অন্যটায় খুব সহজেই চলতে পারে। এ কারণে মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষেত্রে নারী প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষের তুলনায় ভাল। আর একের অধিক কাজ একসাথে করবার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য তাই তার ভেতরের মেয়েলি এনার্জি ব্যবহার করার ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে আশীর্বাদস্বরুপ। মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষেত্রে পুরুষের পারফেকশনিস্ট মনোভাব মাঝে মাঝেই তাকে বিপর্যয়ের সামনে ঠেলে দিতে পারে।
প্রশ্নঃ পুরুষকে নিয়ে নারীর হাজার বছরের প্রশ্ন- কেন সে আমার প্রতি আরো অধিক মনোযোগ দেয় না?
পুরুষের সক্রিয়তা নির্ভর করে তার মনোনিবেশ এবং কার্যোদ্ধারের ক্ষমতার ওপর। পুরুষালি এনার্জি তাই যাবতীয় বিক্ষেপ এড়িয়ে যা না করলেই নয় সেদিকে মনোনিবেশ করবার ক্ষেত্রেই নিজেকে উৎসর্গ করে। লক্ষ্যে অটুট থেকে কার্যসাধন করাটাই তার জীবনে পরিতৃপ্তি অর্জনের একমাত্র উপায়।
একটু মনে করে দেখুন, যখন একজন পুরুষ টেলিভিশনের কোন একটা প্রোগ্রাম দেখছে অথবা অফিসের কোন একটা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত- তখন তার জন্য পৃথিবীর অন্য সবকিছু যেন থেমে যায়। এবং এর মাঝে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্কও পড়ে। এমনকি তার কাজটা যদি গাড়ি পরিস্কার করবার মতো বিরক্তিকরও হয়ে থাকে, পুরুষালি এনার্জি সেখানেই মনোনিবেশ করবে এবং বাকি পৃথিবীকে রুদ্ধ করে রাখাটাই তার জন্য সহজতর।
পুরুষের এই মনোনিবেশ করবার ক্ষমতা তার সবচাইতে বড় শক্তি এবং গুণ, কিন্তু এটা এমন একটা গুণ যা খুব সহজেই তার দুর্বলতায় পরিণত হতে পারে যখন তা তার জীবনের অন্তরঙ্গ সম্পর্কগুলো এড়িয়ে যাবার ক্ষেত্রে সে মনের অজান্তে ব্যবহার করা শুরু করে।
নারী এনার্জি কোন রকম মনস্তাত্বিক চাপ ছাড়াই যেমন স্রোতের মত প্রবাহিত হতে পারে তেমনি একটি থেকে আরেকটি কাজেও সে কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই চলতে এবং ফিরে আসতে সক্ষম। নিজের রুমটি গোছাতে গোছাতে ফোনে প্রেমিকের সাথে কথা বলা একটি মেয়ের জন্য কোন ব্যপারই নয়। অফিসের একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা এবং স্বামীর সাথে কথোপকথন, এই দুইয়ের মাঝে একজন নারী খুব সহজেই যাওয়া আসা করতে সক্ষম।
কিন্তু পুরুষের জন্য তার মনোনিবেশ স্থানান্তর করা প্রচন্ড কঠিন একটা ব্যপার, কারণ তারা প্রায়ই তাদের পুরুষালি এনার্জির মাঝে আটকা পড়ে যায়। বেশিরভাগ পুরুষের জন্যই তার লক্ষ্যে বিরতি দিয়ে তার প্রেমিকাকে সময় এবং মনোযোগ দিয়ে পুনরায় তার কাজে ফিরে যাওয়াটা মারাত্মক কষ্টসাধ্য, যেখানে নারী এই কাজটা অবচেতন এবং অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই করতে সক্ষম।
এ কারনেই পুরুষ প্রেমিককে নিয়ে বিপুল সংখ্যক নারীর প্রশ্ন, তার দিকে প্রেমিকের মনোযোগ কম হবার কারণ কি ? তার সমস্যা কোথায় ? বেশিরভাগ সময়ই নারী এটাকে ব্যক্তিগতভাবে নেবে এবং সে বিশ্বাস করবে যে তার প্রেমিক তাকে এড়িয়ে চলছে। মনে রাখতে হবে যে, নারীর পৃথিবীতে সে সঠিক। অর্থাৎ মেয়েদের ক্ষেত্রে যখন একটি মেয়ে বন্ধু তার আরেকটি মেয়ে বন্ধুকে এড়িয়ে চলে তখন তা একটা নির্দিষ্ট বার্তা তাকে পৌছে দেয়। এবং বেশিরভাগ মেয়ে/নারী তাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রচন্ড সচেতন। অথচ পুরুষের জন্য টেলিভিশনের একটা প্রোগ্রাম কিংবা অফিসের কোন প্রজেক্টে মনোনিবেশ প্রকৃতিগতভাবেই তার স্বভাব। এভাবেই তারা তাদের কাজ অথবা লক্ষ্য অর্জন করতে অভ্যস্ত। পুরুষালি এনার্জির প্রকৃতিই এমন।
নারী প্রশ্ন করবে – "পুরুষ কি স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দেয়া শিখতে পারেনা ? সে কি আরো নমনীয় হতে পারেনা ? কেন তার সবসময় এত কঠোর এবং সিঙ্গেল-মাইন্ডেড/একরোখা হয়ে থাকতে হবে ?"
অন্যদিকে পুরুষের চিন্তা একথা ভেবে যে, "আমি ব্যস্ত হলে কেন সে আহত হয় ? সে কি বুঝতে পারেনা যে এটা ব্যক্তিগত কিছু নয় ? কি ঝামেলা !! যতবারই আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হই ঠিক ততবার সে ক্ষিপ্ত হয়। সে কি কখনো বদলাবে না?"
পুরুষের একটা কাজ সম্পাদন করবার ক্ষমতার ওপর যদি আপনি বিশ্বাস করতে চান, তবে আপনার চেষ্টা করা উচিৎ তার লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করবার এই ক্ষমতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গ্রহণ করে নেয়া। তার মনস্তাত্বিকের এই বিশেষ গুণটি ছাড়া সে যে কাজে হাত দিবে তা হয়তবা সে শেষ করতে ব্যর্থ হবে। এবং স্বভাবতই একসময় আপনার মনে হবে যে, সম্পর্কের দায়িত্বের ব্যপারেও তার মনোনিবেশ করবার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলছে। তার ওপর থেকে ধীরে ধীরে আপনিই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে শুরু করবেন।
ভাববার বিষয় এই যে, আপনি এটা আশা করতে পারেন না যে, একজন পুরুষ একইসাথে তার লক্ষ্য অর্জন করবে অথচ সেখানে পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করবে না। পুরুষের জন্য এমনটা করা মানে তার মাঝের নারী এনার্জিতে প্রবেশ করা যা হয়তবা তার মনোনিবেশে ব্যঘাত ঘটাবে এবং লক্ষ্য অর্জনে সে ব্যর্থ হবে। চূড়ান্তভাবে যার ফলাফল হবে আপনার সম্পর্কের জন্য ভয়াবহ।
আলোচনা-সমালোচনা কাম্য
পরের পর্ব Click This Link
https://www.facebook.com/DoctorXBD