আলহামদুলিল্লাহ, আমি আজ আপনাদের সাথে বিশ্বের কিছু অসাধারণ নান্দনিক সৌন্দর্যের মসজিদের ছবি এবং এবং সংক্ষিপ্ত পরিচিত তুলে ধরব যা নিঃসন্দেহে আপনাদের সামান্যতম চাহিদা মেটাতে পারবে বলে আশা রাখি।
১। আল ফাতেহ গ্রান্ড মসজিদ, বাহরাইনঃ
মানামা, বাহরাইনে অবস্থিত আল ফাতেহ গ্রান্ড মসজিদ বিশ্বের বড় মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। এর আয়তন প্রায় ৬৫০০ বর্গ মিটার, দৈর্ঘ্য ৩৩০ ফুট এবং প্রস্থ ২৪৬ ফুট। মসজিদটিতে একসাথে প্রায় ৭০০০ মুসুল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটি ১৯৮৭ সালে নির্মাণ করে বাহরাইনের জনক শেখ ঈসা ইবন সালমান আল খলীফা। ২০০৬ সালে এটি বাহরাইনের জাতীয় লাইব্রেরী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মসজিদের চূড়ায় স্থাপিত ফাইবার গ্লাসের গম্বুজটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফাইবার গ্লাসের গম্বুজ। এর মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে ইটালিয়ান মার্বেল, ঝাড়বাতি আনা হয় অস্ট্রেলিয়া এবং দরজা তৈরী করা হয়েছে ভারত থেকে আনা সেগুন কাঠ দিয়ে। প্রতি শুক্রবার মসজিদটি দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ০৯ টা থেকে বিকেল ০৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
২। আল আজহার মসজিদ, কায়রো, মিশরঃ
৯৭০ সালে মিশরের কায়রোতে অবস্থিত আল আজহার মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন ফাতেমীয় খলিফা আল মুইজ লি দ্বিনিল্লাহ। মসজিদটির মিনার ০৪ টি। এতে একসাথে প্রায় ২০,০০০ মুসুল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন।
৩। আল নূর মসজিদ, শারজাহ, দুবাইঃ
তুর্কীয় অটোমন স্থাপত্যরীতিতে নির্মীত দুবাইয়ের শারজাহতে অবস্থিত আল নূর মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৬ এপ্রিল, ২০০৩ সালে এবং ২০০৫ সালে এর কাজ শেষ হয়। মসজিদটির মিনার ২ টি যার উচ্চতা প্রায় ১৭১ ফুট। মসজিদের ভেতরে গম্বুজেরউচ্চতা প্রায় ১০৩ ফুট। মসজিদটিতে একত্রে ১৮০০ পুরুষ এবং ৪০০ মহিলা নামাজ আদায় করতে পারেন। রমজানের ডোনেশন ক্যাম্পের জন্য "বিশ্বের সর্ববৃহৎ কাঠের তৈরী দানবাক্স" তৈরি করে ২০১৪ সালে মসজিদটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখায়।
৪। আল সালেহ মসজিদ, সানা, ইয়েমেনঃ
সালেহ মসজিদ হচ্ছে ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক মসজিদ। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ এর সম্মানে এই মসজিদের নামকরন করা হয় যিনি মসজিদটি ২০০ সালের নভেম্বরে উদ্বোধন করেন। মসজিদটির আয়তন ২৯৪,০০০ বর্গফুট যাতে ৪৪,০০০ মুসুল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে গম্বুজ রয়েছে ০৫ টি যার মধ্যে মূল গম্বুজের উচ্চতা ১৩০ ফুট এবং বাকী ৪ টির উচ্চতা ৬৭ ফুট। ৬ টি মিনারের উচ্চতা ৩৩০ ফুট।
৫। বাদশাহী মসজিদ, লাহোরঃ
১৬৭৩ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব নির্মাণ করেন লাহোরের বাদশাহী মসজিদ। এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ মসজিদ। মসজিদটির ৩ টি গম্বুজ ও ৭ টি মিনার রয়েছে। মিনারের উচ্চতা ১৭৬ ফুট ৪ ইঞ্চি। মসজিদটির স্থাপত্যরীতি অনেকটাই দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের অনুকরণে নির্মীত। মসজিদের মুল ভবনে ১০,০০০ এবং আঙ্গিনায় প্রায় ১,০০,০০০ মুসুল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন।
৬। সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ, ব্রুনাইঃ
এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ব্রুনাইয়ে অবস্থিত সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদকে। মুঘল স্থাপত্য ও মালয় রীতির সংমিশ্রনে আধুনিক মুসলিম স্থাপত্যকলার এই অনন্য মসজিদটির নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৫৮ সালে। মসজিদের গম্বুজটি সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি। ১৭১ ফুট উচ্চতার মসজিদটি বহু দূর থেকে দেখা যায় যা এর আবেদনকে বাড়িয়েছে বহুগুন।
৭। সুলতান আহমেদ মসজিদ, তুরস্কঃ
১৬১৬ সালে নির্মীত তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সুলতান আহমেদ মসজিদ। ১০,০০০ মুসুল্লীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুট এবং প্রস্থ ২১৩ ফুট। ২১০ ফুট উচ্চতার মসজিদটির মিনারের সংখ্যা ৬, প্রধান গম্বুজ ৭ ও সহ গম্বুজের সংখ্যা ৮ টি
৮। ক্রিস্টাল মসজিদ, মালয়েশিয়াঃ
মালয়েশিয়ার ওয়ান ম্যান দ্বীপে ইসলামিক হেরিটেজ পার্কে অবস্থিত স্টীল, গ্লাস ও ক্রিস্টালের তৈরি এক অনন্য মসজিদ এটি। ৪ টি মিনার ও ১৫০০ মুসুল্লীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ৮ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সালে
৯। ফয়সাল মসজিদ, পাকিস্তানঃ
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত পাকিস্তানের জাতীয় মসজিদ হল ফয়সাল মসজিদ। মসজিদটির নামকরন করা হয় প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজের নামানুসারে যিনি ছিলেন এই মসজিদ নির্মানের অন্যতম সাহায্যদাতা। ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই মসজিদটি ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মসজিদ। মরু বেদুঈনের তাবুর অনুকরনে নির্মীত এই মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেন তুর্কী স্থপতি ভিদাত দালকায়, যিনি এই স্থাপত্যকলার জন্য আগা খান স্থাপত্য পুরুষ্কার অর্জন করেন। মসজিদটির আয়তন প্রায় ৫৪,০০০ বর্গফুট এবং ভেতর বাইরে মিলিয়ে এতে প্রায় ২৫০,০০০ মুসুল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ৪ টি মিনার রয়েছে যার প্রতিটির উচ্চতা ২৯৬ ফুট যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ মিনার
১০। মোহাম্মদ আলী পাশা মসজিদ, মিশরঃ
অটোমন স্থাপত্যকলার আদলে নির্মীত মিশরের রাজধানী কায়রোতে অবস্থিত মোহাম্মদ আলী পাশা মসজিদটির নির্মান কাজ শেষ হয় ১৮৪৮ সালে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৭১ ফুট এবং প্রস্থ ২৬৯ ফুট। এতে মিনার রয়েছে ২ টি যার উচ্চতা ২৬৯ ফুট। মসজিদটিতে একত্রে ১০,০০০ মুসুল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি মিশরের পর্যটনের একটি অন্যতম আকর্ষন।
১১। শেখ যায়েদ গ্রান্ড মসজিদ, দুবাইঃ
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে অবস্থিত শেখ যায়েদ গ্রান্ড মসজিদটি নির্মান করেন দেশটির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। ৩০ একর যায়গায় নির্মীত দৈর্ঘে ১৩৮০ ফুট ও প্রস্থে ৯৫০ ফুটের এটি দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটিতে ছোট বড় মিলিয়ে ৮২ টি গম্বুজ রয়েছে। ৩৫১ ফুট উচ্চতার মিনার রয়েছে ৪ টি। ১৫০০ মহিলার জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাসহ মসজিদটিতে ৪০,০০০ মিসুল্লীর নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। ১৮০,০০০ বর্গফুট আঙ্গিনার মোজাইককে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্বেল পাথরের মোজাইকের উপমা হিসেবে গণ্য করা হয়। মসজিদটির ৬০,৫৭০ বর্গফুট আয়তনের কার্পেটি বিশ্বের সর্বাধিক বৃহৎ কার্পেট যার ওজন প্রায় ৩৫০ টন এবং তৈরিতে সময় লাগে ২ বছর। মসজিদটির নির্মানে ব্যয় হয় ২ বিলিয়ন দিরঅহাম বা ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার।
১২। সুলতান কাবূস গ্রান্ড মসজিদ, ওমানঃ
ওমানের সুলতান কাবূসের নির্দেশে ১৯৯৩ সালে এই মসজিদের নির্মান কাজ শুরু হয় এবং ৬ বছর ৪ মাসে তা শেষ হয়। এই মসজিদের মূল নামাজের কক্ষটি ৫৫৩৫ বর্গমিটার যাতে প্রায় ২০,০০০ মুসুল্লীর নামাজ আদায় সম্ভব। ২১ টন ওজনের ইরান কার্পেট কোম্পানীর তৈরি এই মসজিদের কার্পেটটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেট।
১৩। উম্মাইয়া মসজিদ, দামেস্কঃ
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বিশ্বের বৃহত্তম ও পুরনো মসজিদের একটি এই মসজিদ। মসজিদটির নির্মান কাজ শেষ হয় ৭১৫ সালে যার কাজ শুরু হয় আরবদের দামেস্ক বিজয়ের পরপর সময় থেকে। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৩১৮ ফুট এবং প্রস্থে ৫১২ ফুট। মসজিদটি কারবালা স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় শিয়া ও সুন্নী উভয়ের নিকটই অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ।
১৪। উজির খান মসজিদ, লাহোরঃ
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে অবস্থিত উজির খান মসজিদ। সাত বছর ধরে চলা এই মসজিদের নির্মান কাজ শেষ হয় ১৬৩৫ সালে। মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের আমলে হাকিম শেখ ইলম উদ্দিন আনসারি এই মসজিদটি নির্মান করেন। তিনি ছিলেন লাহোরের গভর্ণর এবং উজির খান নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। মসজিদটির আয়তন ২৭৯ ফুট। মিনারের উচ্চতা ১০০ ফুট।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:৩৫