অযুর ফজিলতঃ
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার হাউয (হাউযে কাউসার)
'আইলা” থেকে “ আদনের” মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও
দীর্ঘ। অবশ্য তা বরফের চেয়েও অধিকতর শুভ্র ও দুধ
মেশানো মধুর চাইতেও সুস্বাদু। আর তার পানপাত্রের
সংখ্যা আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের চেয়েও অধিক।
আমি মানুষকে তা থেকে বাধা দিয়ে বিরত রাখব যেম্ন
লোকে অন্য লোকের উটকে তাদের
পানি থেকে বাধা দিয়ে বিরত রাখে। লোকেরা প্রশ্ন
করলো, আল্লাহর রাসুল সেদিন
আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যা।
তোমাদের এমন এক বিশেষ চিহ্ন থাকবে যা অন্য কোন
উম্মতের থাকবেনা। বস্তুত সেদিন তোমরা আমার
কাছে এমনভাবে আসবে যে অযুর প্রভাবে তোমাদের হাত-
পা ও মুখমন্ডল থেকে দীপ্তি ছড়িয়ে পড়তে থকবে।
(মুসলিম / ৪৮৮)
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম বান্দাহ অউর সময়
যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত
গুনাহ পানির সাথে অথবা (তিনি বলেছেন) পানির শেষ বিন্দুর
সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দু হাতখানা ধোয় থখন তার দু
হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির
শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন
সে পা দু'খানা দুয়ে নেয়, তখন তার দু'পা দিয়ে হাটার
মাধ্যমে অর্জিত সকল পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দির
সাথে ঝরে যায়, এভাবে সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। (মুসলিম / ৪৮৪)
উকবা ইবন আমের থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমাদের
উপর ঊট চরানোর দায়িত্ব ছিল। একদিন আমার
পালা আসলে আমি সন্ধ্ব্যায়
উটগুলো চারণভূমি থেকে নিয়ে এসে দেখলাম রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে লোকদের সামনে ভাষণ
দিচ্ছেন। আমি তার ভাষণের যে অংশ শুনতে পেলাম
তা হলোঃ কোনো মুসলমান যখন উত্তমরূপে অযু
করে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে দাঁড়িয়ে দু'রাকাত
নামাজ পড়ে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে হয়ে যায়।
উকবা বলেন, একথা শুনে আমি বলে উঠলাম এটি কি চমৎকার কথা।
ঠিক এ সময় সামনের জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো, এর পূর্বের
কথাটিও চমৎকার ছিল। আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখলাম উমর এ
কথা বললেন। তিনি বলেছেন, 'তুমি যে এক্ষণেই এসেছো,
আমি তা দেখেছি। এর পূর্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কথাটি বলেছেন তা হচ্ছে,
তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি উত্তম ও পূণার্গরূপে অযু
করার পর বলে “আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান
আব্dhu ওয়া রাসুলুহু”। তাহলে তার জন্য বেহেশতের
আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর
যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ
করতে পারবে। (মুসলিম / ৪৬০)
নু'আয়ম মুজমির (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু
হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তারপর তিনি অযু
করে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন
অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও
মুখমন্ডল থাকবে উজ্জ্বল । তাই তোমাদের মধ্যে যে এ
উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। (বুখারী,
হাদীস নং- ১৩৮)
উসমান ইবন আফফান এর আযাদ করা দাস হুমরান থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, উসমান ইবন আফফান মসজিদের আঙ্গিনায়
ছিলেন। আমি শুনলাম আসর নামাজের সময় মুয়াজজিন তার নিকট
আসলে তিনি অযুর পানি চাইলেন এবং অযু করে বললেন,
আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাদেরকে একটি হাদীস
বর্ণনা করব, যদি আল্লাওহর কিতাবে একটি আয়াত
না থাকতো তাহলে আমি হাদীসটি তোমাদের
কাছে বর্ণনা করতাম না (অতঃপর তিনি বললেন) আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
কোনো মুসলিম উত্তমরূপে অযু করে নামাজ
পড়লে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজ পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ মাফ
করে দেয়া হয়। (মুসলিম / ৪৪৭; সুনানু নাসায়ী / ১৪৬)
উসমান ইবনে আফফান থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অযু করার সময় কেউ
যদি উত্তমরূপে অযু করে তাহলে তার শরীরের সব গুনাহ
বেরিয়ে যায়। এমনকি তার নখের নীচের হুনাহও বের
হয়ে যায়।
আমর ইবনে সাঈদ ইবনুল আস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
একদিন আমি উসমান এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, আমন সময় তিনি অযুর
পানি চেয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন
কোনো মুসলিমের ফরজ নামাজের সময় উপস্থিত হয়, কোন
মুসলমান যদি উত্তমরূপে অযু করে এবং একান্ত
বিণীতভাবে নামাজের জন্য রুকু
সিজদা করে তাহলে সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত
তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই
হতে থাকে। (মুসলিম / ৪৫০)
উসমান ইবন আফফান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজ পড়ার
জন্য পরিপূর্ণরূপে অযু করে ফরজ নামাজ পড়ার জন্য
(মসজিদে) যায় এবং লোকদের সাথে (অথবা বলেছেন)
জামায়াতের সাথে, (অথবা বলেছেন) মসজিদের মধ্যে নামাজ
আদায় করে, আল্লাহ পাক. তার সব গুনাহ মাফ করে দেন।
আবু হাযেম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু
হুরায়রা (রাঃ) এর পিছনে ছিলাম। (দেখলাম) তিনি নামাযের জন্য অযু
করছেন। তিনি হাত তেনে বগল পর্যন্ত ধুয়ে নিলেন। তখন
আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা এটা কেমন ধরনের অযু?
তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, হে বনী ফাররূখ
তোমরা এখানে আছো! যদি আমি জানতাম
তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের অযু করতাম
না। আমি আমার বন্ধ্ব ( রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে স্থান পর্যন্ত অযুর
পানি পৌছাবে সে স্থান পর্যন্ত মু'মিন ব্যক্তির চাকচিক্য
অথবা সৌন্দর্যও পৌছাবে। (মুসলিম / ৪৯৩)
উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যাক্তি উত্তমরূপে অযু করে আর বলে, “আশহাদু আন
লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু”
তা জন্য বেহেশতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে।
সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেষ করবে। (সুনানু নাসায়ী /
১৪৮)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন
কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দাহর) গুনাহসমূহ মাফ
করেন এবং মর্যাদা বাডিয়ে দেন? লোকেরা বলল,
হে আল্লাহর রাসূল আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়
থেকেও পূর্ণাঙ্গরূপে অযু করা, নামাযের জন্য মসজিদে বার
বার যাওয়া এবং এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য
প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা।
(মুসলিম / ৪৯৪; সুনানু নাসায়ী / ১৪৩)
হুমরান ইবন আবান (র) থেকে বর্ণিত। তিনি আবু বূরদা (র)
কে মসজিদে এ মর্মে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি উসমান (রাঃ)
কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
থেকে বর্ণনা করতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর
নির্দেশ মোতাবিক অযু সম্পন্ন করবে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তার
মধ্যবর্তী সময়ের পাপ্সমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ গণ্য
হবে। (সুনানু নাসায়ী / ১৪৫)
আবু হাযিম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) সা লাতের
জন্য অযু করছিলেন। আমি তার পেছনে ছিলাম। তিনি তার হস্তদ্বয়
ধৌত করছিলেন তার বগল পর্যন্ত, তখন আমি তাকে বললাম,
হে আবু হুরায়রা! এ কোন ধরনের অযু? তিনি আমাকে বললেন,
হে ফররূখের বংশধর! তোমরা এখানে? যদি আমি জানতাম যে,
তোমরা এখানে আছ তাহলে আমি এরূপ অযু করতাম না।
আমি আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কে বলতে শুনেছি যে, মু'মিনের জ্যোতি ঐ পর্যন্ত পৌছবে, যে পর্যন্ত অযুর
পানি পৌছবে। (সুনানু নাসায়ী / ১৪৯)