এই সংবাদটা হয়তো অনেকে পড়েছেন তারপরও যারা পড়েননি তাদের জন্যে.........
গ্রামীণ ব্যাংকে এখনো আইয়ুব খানের ভূত: নাঈমুল ইসলাম খান
ঢাকা: গ্রামীণ ব্যাংকে এখনো পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ভূত রয়েছে বলে দাবি করেছেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। রাষ্ট্রীয় এ ব্যাংকটির এমডি-পরিচালক নির্বাচন কেন সদস্যদের ভোটে উৎসবমুখর পরিবেশে হয়না, কেন আইয়ুব খানের তথাকথিত গনতন্ত্র অনুসরণ করে করা হয়, এমন প্রশ্ন তুলে ধরে তিনি এই মন্তব্য করেন।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি ও গ্রামীণ ব্যাংকের নির্যাতিত কর্মী পরিষদ আয়োজিত ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার ও চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহাল’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাঈমুল ইসলাম খান এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংকে কেন এমডি-পরিচালক নির্বাচনে সদস্যদের ভোটে উৎসবমুখর ভাবে নির্বাচন হয় না? আইয়ুব খান মনে করতেন, জনগণ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তারা কেবল চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচন করতে পারবেন। বহুকাল পরে গ্রামীণ ব্যাংকেও সেই আইয়ুব খানের ভূত চেপেছে।’’
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ফুলটাইম কর্মকর্তা হয়ে অন্যসব সহযোগী প্রতিষ্ঠান কিভাবে করলেন? দেশের রাষ্ট্রপতি অন্য দেশে গিয়ে কোনো উপহার পেলে তা রাষ্ট্রীয় মহাফেজখানায় রাখতে হয়, কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও তাই। মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের গুডউইল ব্যবহার করে অন্যসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন।’’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে ৩৯টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া প্রসঙ্গে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘তিনি (মুহাম্মদ ইউনূস) নিজেই প্রশ্নকর্তা, নিজেই উত্তরদাতা। এই ৩৯টি প্রশ্নের উত্তর আরো ৩৯০টি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি সরাসরি কিছু করেন না, সব কিছু জটিল করে করেন। ইউনূস সাহেব গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের ১১ হাজার বর্গফুট নোবেল লরিয়েট ফাউণ্ডেশনের নামে বিনামূল্যে নিলেন। পরে রেজুলেশন করে আবার ইউনূস সেন্টারের নামে ২৪ বছরের জন্য লিজ নিলেন এক রকম বিনামূল্যেই। আমার প্রশ্ন, তিনি বলে থাকেন, তার অনেক আয়। তাহলে নোবেল লরিয়েট হয়ে কেন গরিবদের প্রতিষ্ঠানের ১১ হাজার বর্গফুট কেন স্বল্পমূল্যে ভাড়া নিলেন। তার তো উচিত ছিল, বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে ভাড়া নেওয়া।’’
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা গ্রামীণের সদস্যদের হওয়া উচিৎ। এটা ন্যায়সঙ্গত ও আইনসঙ্গত।
বিদেশি শক্তি মুহাম্মদ ইউনূসকে সহায়তার প্রসঙ্গে নাঈম বলেন, আসলে মূল হচ্ছে অর্থ। মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে যখন ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ যখন থাকবে না, তখন তারাও (বিদেশিরা) থাকবেন না। হিলারি ক্লিনটন তার স্বামী তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে নারী কেলেঙ্কারির তদন্তের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।’’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে বোকার মতো আচরণ করছে। গ্রামীণ ব্যাংকের তদন্ত করতে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেই সব করেছেন। এখন এমন একটা পর্যায়ে এসে গেছেন, এখন আর তার রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। তিনি সুক্ষè স্বার্থপরতায় চলেন। কাউকে ব্যবহার করে প্রয়োজন শেষ হলেই তাকে ফেলে দেন।
গোলটেবিল আলোচনায় গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক শেখ লিয়াকত আলী বলেন, আদালতের রায়ে গ্রামীণ ব্যাংকে মুহাম্মদ ইউনূসের ১১ বছর যদি অবৈধ হয়, তবে তার সময়ে সব চাকরিচ্যুতিও অবৈধ।
গ্রামীণ ব্যাংক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির মহাসচিব মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি দেশের যুবকদের গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষার আহ্বান করেছেন। অথচ তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অসংখ্য চাকরিরত যুবকদের বের করে দিয়েছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, তিনি কি শান্তি করেছেন তা আমাদের জানা নেই। দেশে বহু ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা বলেন না, অথচ মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করছেন।’’
‘‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি নাগরিক শক্তি গঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসতে চেয়েছিলেন। চাকরিতে থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে তিনি নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করেছেন। তিনি কেন স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান না। সুন্দর বক্তব্য দিয়ে তিনি বিমোহিত করতে পারলেও আসলে তিনি কারোর কোনো কল্যাণ করেননি।’’
গোলটেবিল আলোচনায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১২
এআই/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
View this link