সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও উপর্যুপরী কর্তনের ফলে বিলুপ্ত হতে চলে দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্যবাসী খেঁজুর গাছ। খেঁজুর গাছ মূলতঃ এ দেশের একটি মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের রসনা তৃপ্তিতে খেঁজুর গাছ থেকে আমরা প্রতি শীত মৌসুমে পেয়ে থাকি সুস্বাদু গুড়-পাটালীসহ স্বাদে ভরা অনেক রকম খাদ্য।
নবান্ন উৎসবের খাবার প্রস্তুতের অতি প্রয়োনীয় উপাদান রস বা গুড় আমারা পেয়ে থাকি এই খেঁজুর গাছ থেকে। পিঠা-পুলি-পায়েস রাঁধতে খেঁজুর রস বা গুড়ের কোন জুড়ি নেই। খেঁজুর রস বা গুড় বেশ অর্থকারী ফসল হিসেবেও বিবেচিত। খেঁজুর রস দিয়ে তৈরি সুস্বাদু গুড়, পাটালী বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া ফল হিসেবে খেঁজুরও বেশ মজাদার ও সুস্বাদু খাদ্য। গ্রাম অঞ্চলে শীত মৌসুমে অনেক পরিবারের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয় এই খেঁজুর গাছ থেকে। অন্যের গাছ বর্গা নিয়ে তা থেকে উপার্জিত গুড় বা রস বাজারে বিক্রি করে বেশ স্বাচ্ছন্দে সংসার চলে অনেকেরই। অতি প্রয়োজনীয় খেঁজুর গাছের রস ও গুড় দিয়ে এত সুস্বাদু খাবার তৈরি হলেও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গাছ। নানা প্রয়োজনে উপর্যুপরী কর্তন করা হচ্ছে খেঁজুর গাছ। কখনও বসতবাড়ি তৈরির উদ্দেশ্যে জায়গা স্বল্পতার জন্য কাটা হচ্ছে খেঁজুর গাছ, আবার কখনও ইটের ভাটার জ্বালানী হিসেবে খেঁজুর গাছ কেটে উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচরে খেঁজুর গাছ কাটা হলেও নতুন করে এর চারা রোপণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। প্রাকৃতিকভাবে যা জন্মাচ্ছে তাও আবার সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলছে। যার ফলে বর্তমানে এ গাছের সংখ্যা প্রায় শূণ্যের কোটায় দাঁড়িয়েছে। গ্রাম বাংলার মানুষের অতি প্রয়োজনীয় এই বৃক্ষটি এ ভাবে নির্বিচারে নিধন হতে থাকলে এক সময় ঐতিহ্যবাহী এই খেঁজুর গাছ দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই নতুন করে চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণসহ সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এবং এর কর্তনের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে গ্রাম বাংলার মানুষের অতি প্রয়োজনীয় এই বৃক্ষ সম্পদকে রক্ষা ও সম্প্রসারণ একান্ত আবশ্যক।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১২:১৭