somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমি ক্রয়কালে যে জিনিসগুলো জানা প্রয়োজন

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




জমির ক্রয় বিক্রয় খুব সাধারণ একটা বিষয়। কিন্তু এই সাধারণ বিষয় কখনও মানুষকে এমন বিড়ম্বনায় ফেলে যে , কেউ কেউ স্বর্বস্ব হারিয়ে পেলেন। বিক্রেতা যেহেতু বিক্রয় করে নগদ অর্থ পেয়ে যায় তাই সমস্ত ঝামেলার খরিদ্দারের। তবু কেউ সচেতন নাগরিক হলে তারও উচিত যথাযত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে জমি বিক্রি করা।বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ”ভাবিয়া করিও কাজ”। তাই জমি ক্রয়ের আগে ক্রেতাকে কতগুলো জিনিস জেনে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে গিয়ে মিলিয়ে দেখা উচিত।

১: বিক্রেতা ক্রয় সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয়ের দলিল এবং ভায়া দলিলসমূহ জমির মালিক থেকে অথবা সংশ্লিষ্ট রেকর্ড অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
২: দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান, জমির তফসিল অর্থাৎ মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, উক্ত দাগে জমির পরিমাণ ইত্যাদি জানতে হবে।এরপর রেকর্ড অফিসে গিয়ে এসব মিলিয়ে দেখতে হবে।রেকর্ড অফিসে সংরক্ষিত নকশার সাথেও মিলিয়ে দেখতে হবে।প্রয়োজনে নকশারও ফটোকপি কালেকশনে রাখতে পারেন।
৩: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সি এস , আর এস পর্চা দেখতে হবে।
৪: জরিপ চলমান থাকলে বিক্রেতার নিকট রক্ষিত মাঠ পর্চা যাচাই করে দেখতে হবে।যদি মাঠ পর্চার মন্তব্য কলামে কিছু লেখা থাকলে বুঝতে হবে অত্র খতিয়ানের বিরুদ্ধে তসদিক পর্যায়ে আপত্তি আছে। এরুপ জমির ক্ষেত্রে জরিপ অফিস/ক্যাম্পে গিয়ে জমিটির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে হবে।
৫: বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান বিক্রেতা বা তিনি যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তার নামে (যোগ সূত্র) মিলিয়ে দেখতে হবে।উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরীকদের সঙ্গে বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগি বন্টননামা (ফারায়েজ) দেখে নিতে হবে।
৬: সংগৃহীত দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান/পর্চা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারী/স্বত্বলিপি রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
৭: সর্বশেষ নামজারি পর্চা ডি.সি. আর খাজনার দাখিল(রশিদ) যাচাই করে দেখতে হবে।জমির খাজনা বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনাসহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায় ক্রেতার।
৮: বিবেচ্য জমিটি সার্টিফিকেট মোকদ্দমাভূক্ত কিনা, কখনো নিলাম হয়েছে কিনা তা তফসিল অফিস/উপজেলা ভূমি অফিস হতে জেনে নিতে হবে। সার্টিফিকেট মামলাভূক্ত সম্পত্তি বিক্রয়যোগ্য নয়।
৯: বিবেচ্য ভূমি খাস, পরিত্যক্ত/অর্পিত(ভি.পি) অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিসকৃত কিনা তা তহসিল, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এল.এ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।
১০: বিবেচ্য ভূমি কোন আদালতে মামলা-মোকদ্দমাভূক্ত কিনা তা জেনে নিতে হবে।মামলাভূক্ত জমি কেনা উচিত নয়।
১১: বিবেচ্য জমিটি সরেজমিনে যাচাই করে এর অবস্থান নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং দখল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে বিক্রেতার মালিকানা ও দখল নিশ্চিত হতে হবে।
১২: সাব রেজিস্টারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে সর্বশেষ বেচা কেনার তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
১৩: বিবেচ্য জমিটি ঋণের দায়ে কোন ব্যাংক/সংস্থার নিকট দায়বদ্ধ কিনা।
১৪: বিবেচ্য জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কিনা তাও দেখা প্রয়োজন।
১৫: জমিতে নানা ধরনের বিধি নিষেধ থাকতে পারে।যেমন: জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণার্থে বন মনÍ্রনালয় বা অন্য কোন উপযুক্ত কর্র্তৃপক্ষের বিধি নিষেধ থাকতে পারে।
১৬: অতিরিক্ত সতকর্তা ও পরবর্তী কোন ঝামেলা হলে আইনী সহায়তা অর্জনের লক্ষ্যে জমি ক্রয়ের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য কমপক্ষে ৩টি জাতীয় দৈনিক ”লিগ্যাল নোটিশ” প্রকাশ করা যেতে পারে।
১৭: জমিতে ক্রয়ের পর প্রি এমশন ঘটিত ঝামেলা করতে পারে কিনা তা ভালোভাবে জেনে নিবেন।


দলিল সম্পাদন :


১: যদি বায়না দলিল করেন তবে বায়না দলিল সম্পাদনের পূর্বে পুর্বোক্ত বিষয়সূমহ যাচাই করে নিবেন।বায়না চুক্তির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চুক্তি বলবৎ থাকাকালীন উক্ত একই জমি অন্যত্র যেকোন প্রকার হস্তান্তর অবৈধ।
২: তামাদি আইন ২০০৪ এর বিধান অনুসারে বায়না দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ হতে ১ বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য ’বিক্রয় দলিল’ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে।
৩: দলিল তাকে লিখতে দিবেন যিনি :
(ক)সম্পওি হস্তান্তর আইন (খ)ভূমি আইন (গ)চুক্তি আইন (ঘ) দান বা হেবা আইন (ঙ)রেজিস্ট্রেশন আইন।
সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখেন।
৪ : সাফ-কবলা দলিল, হেবা এবং হেবার ঘোষনাপত্র দলিল সারা দেশে একই পদ্ধতিতে লেখার সুবিধার্থে একটি সহজ ফরমেট নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফরমেটে ঐ সকল দলিল লেখা বর্তমানে বাধ্যতামূলক।


দলিল রেজিস্ট্রি:

১: দলিল সম্পাদনের চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রারিং অফিসের নিকট পেশ করতে হবে।তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালতের কোন রায়/আদেশ থাকলে এবং উক্ত রায় ডিক্রির বিরুদ্ধে কোন আপিল হলে তা নিষ্পওির চার মাসের মধ্যে দলিলটি রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করতে হবে।
২: দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়”রেজিস্ট্রেশন আইন ” স্ট্যাম্প আইন” আয়কর আইন” অর্থ আইন”এবং রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি ও পরিপত্রের আলোকে। এ সকল আইনের বিধানমতে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য স্ট্যাম্প শুল্ক, রেজিস্ট্রি ফিস,অতিরিক্ত কর, উৎস কর,জেলা/পৌর কর ইত্যাদি ফিস দিতে হয়।সকল দলিলের ফিসের হার সমান নয়, দলিলের প্রকৃতি অনুসারের তার ফিসের হার নির্ধারিত হয়ে থাকে।
৩: সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, ইউনিয়ন, উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা অফিস(রাজস্ব) থেকে দিক নির্দেশনা পেতে পারেন।


নামজারি বা মিউটেশন:


জমি ক্রয়ের পর খতিয়ানে নিজ নামে পরিবর্তন করাকে নামজারি বা মিউটেশন বলে।দলিল রেজিস্ট্রির পর রেজিস্ট্রি অফিস হতে হস্তান্তর নোটিশ(এল টি নোটিশ) সহকারি কমিশন(ভূমি) এর কার্যালয়ে পাঠাতে হয়।উক্ত নোটিশ পাবার পর সহকারি কমিশন(ভূমি) তার অফিসে একটি নামজারি কেস নথি খুলে তা তদন্তের জন্য তহসিল অফিসে পাঠাবেন। ভূমি সহকারি কর্মকর্তা রের্কড যাচাই করে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর পরিশিষ্ট-১৩ অনুসারে ফরম নং ১০৭৮ এ প্রতিবেদন দিবেন।

আবেদনকারীর করণীয়:

জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত¦ হলো ক্রীত জমি নিজ নামে নামজারি করে রেকর্ড সংশোধন করা। এ জন্য করণীয়:
১: কোর্ট ফি দিয়ে সহকারী কমিশনার(ভূমি)র বরাবর আবেদন করা।
২: আবেদনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত রের্কডপত্র সংযুক্ত করতে হবে ।
৩: নামজারির জন্য নূন্যতম ৪৫ দিন সময় হাতে নিয়ে আবেদন করা।
৪: সহকারি কমিশনার(ভূমি) কর্তৃক নামজারির উপর শুনানি কালে নিজ নামে হোল্ডিং নম্বর জেনে নেওয়া। জমির মূল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়া এবং শুনানিতে অংশ নেওয়া।
৫: আবেদন মজ্ঞুর হলে ডি সি আর এবং সংশোধিত খতিয়ান সংগ্রহ করা ও রেজিস্ট্রারে নিজনামে হোল্ডিং নাম্বার জেনে নেওয়া।


আপনি যদি অভিজ্ঞ না হন তা হলে সবগুলো বিষয় একজন অভিজ্ঞ সিভিল ল’ইয়ার সাথে আলোচনা করে করা উত্তম।তবে এই প্রাথমিক জ্ঞান আপনার সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং পদে পদে দালালদের হয়রানি থেকে রক্ষা পাবেন এবং ভবিষ্যতে আপনার ক্রয়কৃত জমি নিরাপদ থাকবে। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনার নিরাপদ পদক্ষেপ এই লেখার উদ্দেশ্য।।


ছবিসূত্রঃ-নেট।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×